উহুদের দিন রাসুলের পরামর্শ সর্ম্পকে আলোচনা

আজ এই আর্টিকেলটি  উহুদের দিন রাসুলের পরামর্শ সর্ম্পকে  বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।


উহুদের দিন রাসুলের পরামর্শ

মহান আল্লাহ বলেন-

তবে তুমি যখন দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেবে, তখন তুমি আল্লাহর ওপর নির্ভর করো!**

নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন যারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে। 

যখন সিদ্ধান্ত নিতে হয় তখন আমদের অনেকেই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভোগ করে ও এর ফলে প্রায়-ই মাথা ব্যাথা করে। যখন পছন্দের বিষয় আসে বা পছন্দের ব্যাপার ঘটে, তখন মুসলমানদের উচিত অন্যদের সাথে পরামর্শ করা ও এস্তেখারার নামাজ পড়া। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বা কোনো দিকে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়ার আগে নিশ্চিত হন যে, এ প্রদক্ষেপটি অপরটির চেয়ে ভালো তবে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই আপনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। তখন পরামর্শ ও পরিকল্পনার শেষ এবং কাজের সময় শুরু।

আল্লাহর রাসুল সা. উহুদের যুদ্ধের দিন মুসলমানদের সাথে পরামর্শ করেছিলেন। সাহাবিগণ রাসুলুল্লাহ সা.-কে যুদ্ধে বের হওয়ার পরামর্শ দিলেন। তাই রাসুলুল্লাহ সা. তার বর্ম পরিধান করলন। তার তরবারি নিলেন। যখন তার সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা সম্ভবত আপনাকে বের হওয়ার জন্য জোর করলাম। তখন তিনি বললেন-

কোনো নবির শোভা পায় না যে, তিনি যুদ্ধের জন্য বর্ম পরিধান করে তা খুলে ফেলবেন যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর এবং রাসুলের শত্রুর মাঝে কোনো ফয়সালা করে দেন।

আরো পড়ুন: জিন্নাহ্ দ্বিজাতিতত্ত্ব ও পাকিস্তান আন্দোলন

আল্লাহর নবি একবার বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তার জন্য বিশেষ বিবেচনার প্রয়োজন ছিল না; বরং দৃঢ়প্রত্যয় বা দৃঢ় ইচ্ছা, কাজ, নেতৃত্ব ও বীরত্বের প্রয়োজন ছিল।

অনুরূপভাবে বদরের যুদ্ধের আগেও রাসুল সা. সাহাবিদের সাথে পরামর্শ করেছিলেন। কুরআনের বাণী-

আর কাজের বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ করুন।

তারা তাদের মতামত জানালেন। দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। তারা তখন যুদ্ধ করতে গেলেন।

সর্বদা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব করা চরিত্রের দোষ বিশেষ এবং প্রায়-ই মানুষকে ব্যর্থতার পথে নিয়ে যায়। আমি এমন কিছু লোকের কথা জানি যারা বছরকে বছর সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব করছে। অথচ সেসব কাজ নিয়মিত সহজ হওয়া উচিত ছিল। তারা নিজেরাই ব্যর্থতা ও হতাশাকে তাদের জীবনে প্রবেশ করার জন্য নিমন্ত্রণ করেছে।

আপনার পরিকল্পনা ও বাস্তবতার বিষয়ে আপনার গবেষণা করা উচিত। বিষয়াদি সম্বন্ধে পুঙ্খানোপুঙ্খভাবে ভেবে দেখার জন্য নিজেকে সময় দিন, অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী লোকের পরামর্শ চান এবং একাধিক পছন্দের মাঝে সর্বোত্তম বিষয়ের দিকে আপনাকে পথ-প্রদর্শন করার জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট আপনি ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কিন্তু অবশেষে কাজের পদক্ষেপ নিন এবং সিদ্ধান্ত করতে বিলম্ব করবেন না।

রাসুলুল্লাহ সা. ইন্তেকাল করার পর অনেক গোত্র জাকাত প্রদান করতে অস্বীকার করল। আবু বকর রাদি, এ অবস্থায় কী করা যায় সে বিষয়ে জনগণের সাথে পরামর্শ করলেন। উমর রাদি,-সহ লোকজন তাকে এসব গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা না করার পরামর্শ দিলেন। বিভিন্ন তর্ক-বিতর্ক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হওয়া সত্ত্বেও আবু বকর রাদি, সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তাদের বিরুদ্ধে তাদেরকে যুদ্ধ করতে হবে।

বিভিন্ন মতামতের মূল্যায়ন করে আবু বকর রাদি, কঠিন সিদ্ধান্তটিই নিলেন। তারা মুরতাদদের সাথে জিহাদ করে বিজয়ী হলেন।

মুনাফিকদের একটি চরিত্র হলো যা করা যেত তাকে সীমাহীন প্রশ্ন করে নস্যাৎ করা এবং যা আরো বিশেষভাবে বিবেচিত হওয়ার কথা তা অনুরোধ করে নস্যাৎ করা।

যদি তারা তোমাদের সাথে বের হত তবে তারা একমাত্র তোমাদের বিশৃঙ্খলাই বৃদ্ধি করত এবং ফিতনা করার জন্য তোমাদের মাঝে তারা অবশ্যই ছুটাছুটি করত।

তারাই তাদের মৃত ভাইদের সম্বন্ধে বলেছিল, যদি তারা আমাদের কথা শুনত তবে তারা নিহত হতো না। অথচ তারা ঘরে বসেছিল। আপনি বলে দিন, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো, তবে তোমরা তোমাদের নিজেদের থেকে মৃত্যুকে সরিয়ে রাখো। 

তাদের প্রিয় শব্দ হলো 'যদি', 'হায়' ও 'সম্ভবত'। তারা নড়বড়ে ভিত্তির ওপর সর্বদা দ্বিধা-দ্বন্ধে ভোগে।

তারা দোটানা দোদুল্যমান, না এদিকে না ওদিকে। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন আপনি তার জন্য কোনো পথ পাবেন না। 

মাঝে মাঝে তারা আমাদের সাথে আবার মাঝে মাঝে তারা ওদের সাথে। সঙ্কটের সময় তারা বলে-

যদি আমরা জানতাম যুদ্ধ হবে, নিশ্চয় আমরা তোমাদের অনুসরণ করতাম। *

তারা সর্বদা মিথ্যা কথা বলে। সুসময়ে তারা উপস্থিত; কিন্তু জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হলেই তারা হয়তো লুকিয়ে থাকে; নয়তো পালায়। তাদের কেউ কেউ বলে

আমাকে অব্যাহতি দিন এবং আমাকে মুসিবতে ফেলবেন না। 

তারা বলে আমাদের ঘর-বাডি উন্মুক্ত পড়ে আছে। অথচ তা উনন্মুক্ত নয়।

আরো পড়ুন: ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন ও তার ফলাফল

মুমিন ব্যক্তির দৃঢ়চিত্ত

মুমিন তো একমাত্র তারাই যারা আল্লাহর প্রতি ও তার রাসুলের প্রতি বিশ্বাস রাখে। এরপর সন্দেহ করে না। 

অন্যদের সম্পর্কে বলেন-

সুতরাং তারা তাদের সন্দেহে দোদুল্যমান।

এক লোক চার বছর যাবৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি এবং সে তার অসভ্য ও ঝগড়াটে স্ত্রীকে তালাক দিবে কিনা, অবশেষে সে উপদেশ চাওয়ার জন্য একজন বিজ্ঞ লোকের নিকট গেল। জ্ঞানী লোকটি তাকে জিজ্ঞাসা করল যে, কতদিন যাবৎ সে তাকে বিয়ে করেছে, আর লোকটি উত্তর দিলো- চার বছর। জ্ঞানী লোকটি বিস্মিত হয়ে বলল, এখন পর্যন্ত চার বছর যাবৎ তুমি বিষপান করে আসছ।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পূর্বোক্ত গল্পের সদৃশ অবস্থাতেই ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু কখন পর্যন্ত? যে অবস্থায় আমরা বলি, যথেষ্ট হয়েছে। একজন সচেতন মানুষের ভালো ধারণা আছে, এ ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা ভালো না মন্দ এবং তখন সে পদক্ষেপ নেয়।

সন্দেহ ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব মানুষকে বিভিন্ন অবস্থায় আক্রমণ করে। কিন্তু বিশেষ করে নিম্নোক্ত চার অবস্থা-

১. গুরুত্বপূর্ণ পড়াশোনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে যে ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নিতে দুর্বল কোন বিভাগে ভর্তি হবে সে বিষয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কেউ কেউ রেজিষ্ট্রেশনের সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও সিদ্ধান্তহীনতায় থাকে। আবার কেউ কেউ কোনো বিভাগে দুএক বছর পড়ার পর অন্য বিভাগে বদলী হয়ে যায়। প্রথমে তারা ইসলামিক স্টাডিজের দিকে ঝুকে পড়ে তারপর অর্থনীতির ওপর এবং তারপর চিকিৎসা বিদ্যার দিকে।

এ প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে তারা তাদের জীবনকে শেষ করে দেয়। একই ব্যক্তি যদি অন্যান্য জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করত এবং আল্লাহর নিকট সঠিক পথ প্রার্থনা করত তবে সে তার সময়কে উত্তমরূপে কাজে লাগাতে পারত।

২. যথাযথভাবে কাজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছু লোক তাদের অভ্যাসের সাথে সর্বাপেক্ষা মানানসই কাজকে নির্ধারণ করতে পার না। তারা এ কাজ ছেড়ে সে কাজ ধরে, সর্বদা আগের কাজের প্রতি অতৃপ্ত থাকে। অবশেষে তারা ব্যবসাতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এমন লোকদের আমি বলি: আপনি যে কাজ করেছেন, এতে যদি আপনি স্বস্তির সাথে টাকা রোজগার করতে থাকেন তবে আপনার উচিত এ কাজে লেগে থাকা।

৩. বিয়ের ব্যাপারে: তাদের সঙ্গী নির্বাচন করা কঠিন দেখে অনেক লোকই দ্বিধায় ভোগে। এ ব্যাপারে কেউ সহজেই অন্যদের মতামতে প্রভাবিত হতে পার। মাঝে মাঝে পিতা হয়তো কোনো মেয়েকে বিয়ের যোগ্য মনে করেন অথচ মাতা আপত্তি করেন।

বিশেষ করে বিয়ের ব্যাপারে আমার উদ্দেশ্য হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি মেয়ের ধর্ম, রূপ ও চরিত্র সম্বন্ধে সন্তুষ্ট হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার অপেক্ষা করা উচিত। কেননা বিয়ের ব্যাপারে আমরা একটি মহিলার জীবনের ব্যাপারে কথা বলছি- এমন কোনো তুচ্ছ বিষয়ের কথা বলছি না যাকে বিরক্ত হলেই ছুড়ে ফেলা যায়।

৪. দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও স্থির সঙ্কল্পের অভাব সাধারণত সেসব লোকের মাঝে দেখা যায় যারা তালাকের কথা চিন্তা ভাবনা করছে।

স্বামী হয়তো একদিন সিদ্ধান্ত নিলো যে, বিচ্ছেদই ভালো, আরেকদিন সিদ্ধান্ত নিলো, সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।

জীবন সংক্ষিপ্ত বিধায় জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সুখী করার জন্য আমাদের ভূমিকা রাখা উচিত। আমাদের প্রতিবেশীদের জীবনকেও সুখী করার জন্য আমাদেরকে চেষ্টা করা উচিত।

আরো পড়ুন: গবাদিপশুর অনধিকার প্রবেশ আইন ১৮৭১

চটকদার কথার জরিমানা

আল্লাহর হুকুম মান্য করার ক্ষেত্রে আমরা কতটা কবর্তব্যপরায়ণ, এরপর তার বান্দাদের সাথে আমরা কিভাবে আচরণ করি তার ওপর নির্ভর করে আমাদের

সফলতা। শ্রোতামণ্ডলীকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমরা সহজেই বাক্য রচনা করতে পারি এবং আমাদের কথাকে অলংকারে ভূষিত করতে পারি। কিন্তু কঠিন বিষয় হলো আমাদের কথা অনুযায়ী নেক আমল করা ও মহান চরিত্র গঠন করা।

তোমরা কি মানুষের নেক আমল করার আদেশ দিচ্ছ অথচ নিজেদের কথা ভুলে গেছ? অথচ তোমরা কিতাব তেলাওয়াত করছ! তবে কি তোমরা বুঝো না? 

যে ব্যক্তি নিজে সৎ কাজ করে এবং অন্যদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অন্যদেরকে মন্দ কাজ থেকে বারণ করে অথচ সে নিজে মন্দ কাজ করে, তার জন্য সাংঘাতিক শাস্তি রয়েছে। যেসব দোযখবাসীরা তাকে দুনিয়ায় চিনত তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবে, কেন তাকে এত বেদনাদায়কভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। সে উত্তর দেবে, আমি নিজে নেক আমল না করে তোমাদেরকে তা করতে আদেশ করেছি এবং তোমাদেরকে মন্দ কাজ করতে নিষেধ করেছি অথচ আমি নিজেই তা করেছিলাম।

জনৈক আরব কবি বলেছেন, হে অন্যের শিক্ষক! তুমি যদি প্রথমে তোমার নিজের জন্য শিক্ষা অন্বেষণ করতে!

এ কথা বলার পর বিখ্যাত বক্তা মুয়ায রাদি. একটু থামলেন। নিজে কাঁদলেন।

অন্যদেরকেও কাঁদালেন। এরপর বললেন-

কত অধার্মিক লোক মানুষকে মুত্তাকী হওয়ার আদেশ করে! এ যেন ওই চিকিৎসকের মতো যে মানুষের চিকিৎসা করে অথচ সে নিজেই রোগী।

আমাদের পূর্বসরী কিছু ধামিক লোক যখন মানুষকে দান সদকা করার পরামর্শ দেওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন তারা নিজেরা প্রথমে দান করতেন। তাদের কেউ কেউ বলেন, তখন লোকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের আহ্বানে সাড়া দিত। ইসলামের প্রাথমিক যুগের জনৈক বক্তা সম্বন্ধে আমি পড়েছি, তিনি অন্যদেরকে তাদের দাসদাসী মুক্ত করে দেওয়ার জন্য বুঝিয়ে রাজি করাতে চাইতেন। কিছুকাল তিনি কিছু টাকা জমা করেন এবং যথেষ্ট টাকা জমা করার পর তিনি একজন দাস কিনে সাথে সাথে তাকে মুক্ত করে দিলেন। তারপর তিনি মর্মস্পর্শী বক্তৃতায় অন্যদেরকে এ কাজ করার জন্য সনিবদ্ধ অনুরোধ জানালেন। ফলে বহু দাস-দাসী মুক্ত হয়ে গেল

আরো পড়ুন: বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮১

আমি অবশ্যই মানুষ সৃষ্টি করেছি কষ্টে থাকার জন্যই

আমি অবশ্যই মানুষ সৃষ্টি করেছি কষ্টে থাকার জন্যই। 

ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল রহ. কে জিজ্ঞসা করা হয়েছিল, কখন বিশ্রাম পাওয়া যাবে? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি যখন জান্নাতে পা রাখবে তখন তুমি বিশ্রাম পাবে।

জান্নাতে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত স্থায়ী প্রকৃতির কোনো বিশ্রাম নেই। কোনো শান্তিও নেই। এ জীবন সমস্যা, ফেতনা ফাসাদ, রোগ-শোক ও দুশ্চিন্তায় ভরা।

আমার নাইজেরিয়ার এক সহকর্মী বলেন, শৈশবে তার মা তাকে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নামাজ পড়ার জন্য জাগিয়ে দিত। তখন সে বলত, মা আমি আরেকটু আরাম করতে চাই। তার মা তাকে বলত, একমাত্র তোমার আরামের খাতিরেই আমি তোমাকে জাগাচ্ছি, বাবা! তুমি যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তুমি পরম শান্তি পাবে।

মাসরূক নামের ইসলামের প্রাথমিক জামানার একজন বুজুর্গ সিজদায় গিয়ে এত সময় থাকতেন যে, তার ঘুম এসে পড়ত। একবার এমন ঘটনার সময় আর এক সাথী তাকে বললেন, খানিক বিশ্রাম করুন। তিনি উত্তর দিলেন, আমি তো বিশ্রামই খুঁজছি।

বাধ্যতামূলক নামাজ বাদ দিয়ে যারা এ দুনিয়ায় শান্তি তালাশ করে তারা একমাত্র তরিত্ব শাস্তির ব্যবস্থা করছে। অবিশ্বাসী এখানে তার পূর্ণ শান্তি চায়। একারণেই সে বলে-

হে আমাদের প্রতিপালক! বিচার দিবসের পূর্বেই আমাদেরকে আমাদের পাপ্য দিয়ে দিন। 

আয়াতে ব্যবহৃত قط শব্দের অর্থ হলো- আমাদের ভালো-মন্দ কাজের নথিপত্র অর্থাৎ, আমাদের ভালো মন্দ কাজের নথিপত্র আমাদের বিচার দিবসের আগেই দিয়ে দিন। যাতে আমরা তা দেখতে পারি। কোনো কোনো আলিম কিত্তানা শব্দের ব্যাখ্যা করেছেন, আমাদের ভালো অংশ এবং আমাদের রিযিকের অংশ বিচার দিবসের পূর্বেই আমাদেরকে দিয়ে দিন।

নিশ্চয় এরা এ দুনিয়ার জীবনকে ভালোবাসে আর তারা তাদের পেছনে রাখে এক গুরুভার দিনকে। 

তারা আগামীকাল ও ভবিষ্যতের কথা ভাবে না। আর এজন্য এ দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টাই হারায়। এ জীবন সদা পরিবর্তনশীল তরল পদার্থের মতো। এ জীবন একদিন সুখ-শান্তি ও বড় লোকের; আরেক দিন কষ্ট ও অভাবের। এটাই এ দুনিয়ার সারকথা।

এরপর তাদেরকে তাদের সত্যিকার প্রতিপালকের নিকট ফিরিয়ে আনা হবে। জেনে রাখো! বিচার অধিকার তারই। আর তিনি সর্বাপেক্ষা তরিত্ব হিসাব গ্রহণকারী। 

আরো পড়ুন: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রির ক্ষমতা ও কার্যাবলি

বিনয়-নম্রতা লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক

আগের অধ্যায়গুলোতে আমি বিনয়, নম্রতা ও ভদ্রতার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য কুরআন হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছি। এখানে আমি কিছু উদাহরণ পেশ করার মাধ্যমে একই বিষয়ে কিছুটা বাড়াচ্ছি।

মনে করুন! উভয় পাশে দেয়াল দিয়ে ঘেরা অতি সঙ্কীর্ণ এক রাস্তা দিয়ে আপনি গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। অত্যন্ত যত্ন, শান্তভাবে ও সতর্কতা ছাড়া সেখান দিয়ে গাড়ি পার হয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। যা হোক যদি কোনো ড্রাইবার এ রাস্তা দিয়ে খুব জোরে গাড়ি চালিয়ে যেতে চায়, তবে সে অনবরত একবার ডান পাশের দেয়ালে আরেকবার বাম পাশের দেয়ালে ধাক্কা খাবে। অবশেষে তার গাড়ি ভেঙে যাবে। সতর্কতার সাথে গাড়ি চালানো এবং খুব জোরে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো উভয়ই ক্ষেত্রেই রাস্তা এবং গাড়িও একটিই; কিন্তু চালানোর পদ্ধতি শুধু ভিন্ন।

আমরা যে ছোট্ট চারাগাছের যত্ন করি, এটাকে বিভিন্নভাবে পানি দেওয়া যায়। আপনি যদি এটার ওপর আস্তে আস্তে পানি ঢালেন, তবে এটা পানি শোষণ করে নেবে ও পুষ্টি পাবে। কিন্তু আপনি জগের পানি একেবারেই ঢেলে দিলে আপনি তা সমূলে উপড়ে ফেলবেন। কেউ ধীরস্থিরতার সাথে তার পোশাক খোলে ও পরিধান করে। সে নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে যে, তার পোশাক দীর্ঘদিন টিকবে। পক্ষান্তরে যে লোক তাড়াহুড়ার সাথে তার পোশাক ব্যবহার করে, সে সর্বদাই ছেঁড়া-ফাটার অভিযোগ করে। আমাদের প্রয়োজন আমাদের জীবনেও আমদের নিজেদের সাথে বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা, ধীরস্থিরতা ও শান্তভাব প্রতিষ্ঠা করা।

নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার আত্মারও অধিকার রয়েছে। 

আপনাদের ভাইদের সাথে এবং স্ত্রীগণকে ভদ্রতা, বিনয়, নম্রতার সাথে আচরণ করতে হবে।

কিছু কিছু ফল বাগানের প্রবেশপথে লিখা থাকে, শান্ত থাকুন বা ধীরে চলুন। যে ব্যক্তি বাগানে বেপরোয়াভাবে দৌড়ায়, সে অনেক ফুল দেখতে পাবে না। তা ছাড়া সে ফুল বাগানের ব্যাপক ক্ষতিও করবে।

প্রবাদে আছে, চড়ই পাখি মৌমাছির মতো উদার ও অমায়িক নয়।

হজরত নবি করিম সা. ইরশাদ করেন-

মুমিন ব্যক্তি মৌমাছির মতো। সে পবিত্র বস্তু আহার করে। সে পবিত্র বস্তু উৎপন্ন করে। সে যে ছোট্ট ডালখানিতে বসে তা নষ্ট করে না। মৌমাছি যখন ফুলের ওপর বসে মধু খায়, ফুল তখন মৌমাছির উপস্থিতি টেরও পায় না। এরূপ শান্তভাবের মাধ্যমে সে তার লক্ষ্য অর্জন করে। পক্ষান্তরে চড়ুই পাখি যখন কোনো কিছুর ওপরে বসে, তখন এটা কিচির-মিচির ও লাফালাফি করে মানুষের নিকট নিজের উপস্থিতি জানান দেয়।

জনৈক পূর্বসূরী বুজুর্গ বলেন, ধর্ম সম্বন্ধে কারো জ্ঞান উপলব্ধির প্রমাণ হলো, সে

বিনয়ের সাথে প্রবেশ করবে, বিনয়ের সাথ বের হবে। বিনয়ের সাথে পোশাক পরিধান করবে এবং বিনয়ের সাথে জুতা খুলবে ও যানবাহনে চড়বে।

আপনি যখন ব্যস্ত ও বেখাপ্পা হবেন তখন সাধারণত আপনি ক্ষতিই করবেন; কেননা ধীরস্থিরতা ও অমায়িকতার মাঝেই কল্যাণ নিহিত।

রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন-

যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো কিছুতে বিনয়-নম্রতা থাকে, ততক্ষণ তা সুন্দর আর যখন এসবগুণ তা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় তখন তা দোষী।

কেননা আপনি আল্লাহর দয়ায় তাদের প্রতি সদয় আচরণ করেছিলেন পক্ষান্তরে যদি আপনি কর্কশ ও কঠোরপ্রাণ হতেন, তবে তারা আপনার চারপাশ থেকে সরে যেত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url