বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রির ক্ষমতা ও কার্যাবলি
আজ এই আর্টিকেলটিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রির ক্ষমতা ও কার্যাবলির বর্ণনা দিতে পারবেন।
ভূমিকা
প্রধানমন্ত্রি বাংলাদেশের নির্বাহী বিভাগের প্রধান অঙ্গ। তিনি সরকার প্রধান। বর্তমানে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার বিদ্যমান। তিনি হলেন মন্ত্রিসভার মধ্যমনি। প্রধানমন্ত্রি মন্ত্রিসভার শীর্ষে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রির হাতে। বাংলাদেশ সংবিধান মতে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রি হিসেবে নিযুক্ত করেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সংবিধানের ৫৮(৩) নং ধারায় বলা আছে যে, "The president shall appoint as Prime Minister the member of parliament who appears to him to command the support of the majority of the members of parliament"
আরো পড়ুন:
প্রধানমন্ত্রির নিয়োগ ও পদত্যাগ
প্রধানমন্ত্রি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের মধ্যমনি। তাঁকে কেন্দ্র করে জাতীয় সংসদ পরিচালিত হয়। ১৯৭২ সালের প্রথম সংবিধানে প্রধানমন্ত্রির পদটি সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ সংবিধানে তাঁর নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে স্পষ্ট বিধান রয়েছে। তাঁর নিয়োগ ও অপসারণ সম্পর্কে সাংবিধানিক ধারা অনুসরণ করা হয়। জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের আস্থাভাজন তথা নেতাকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রি রূপে নিযুক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রি রাষ্ট্রপতির নিকট যে কোন সময় পদত্যাগ পত্র পেশ করতে পারেন। সংবিধানে আরো বলা আছে যে, "যদি প্রধানমন্ত্রি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন না পান, তবে তিনি হয় পদত্যাগ করবেন অথবা জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেবেন।"
প্রধানমন্ত্রির ক্ষমতা ও কার্যাবলি
বাংলাদেশের বর্তমান সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রি বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার শীর্ষে অবস্থান করেন, তিনি সরকার প্রধান। তাঁকে কেন্দ্র করে মন্ত্রিসভা ও শাসন বিভাগ আবর্তিত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রির ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে নিােক্তভাবে আলোচনা করা যেতে পারে
(১) রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দান: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রি রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রিকে নিযুক্ত করেন। প্রেসিডেন্টের সাথে কেবিনেটের যোগযোগ তিনিই করে দেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রির পরামর্শ নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রি রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেন।
(২) সেতুবন্ধন: সেতুবন্ধন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রির একটি উল্লেখযোগ্য ক্লাজ। তিনি রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রি প্রেসিডেন্টকে কেবিনেটের সিদ্ধান্ত ও সরকারী নীতি সম্পর্কে অবহিত করেন। এ সুবাদে কেবিনেট ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে যোগসূত্র গড়ে ওঠে।
(৩) মন্ত্রিসভার দায়িত্ব: মন্ত্রিসভার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রির একটি বিশেষ দায়িত্ব। তিনি মন্ত্রিসভার নেতা। প্রধানমন্ত্রির পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি মন্ত্রি, প্রতিমন্ত্রি ও উপমন্ত্রিকে নিয়োগ করেন। তিনি মন্ত্রিসভায় আলোচনার বিষয় স্থির করেন। মন্ত্রিসভার সভাপতির দায়িত্ব মূলত তাঁর উপর ন্যস্ত। তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম তদারকী করেন। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে ব্যক্তিগত আলোচনা ও উৎসাহ দিয়ে থাকেন। এক কথায় প্রধানমন্ত্রিকে কেন্দ্র করে মন্ত্রিসভা পরিচালিত হয়।
(৪) সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের দায়িত্ব: প্রধানমন্ত্রি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। রাষ্ট্রপতি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রি নিযুক্ত করেন। তিনি আবার তার দলের নেতা। তাঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায় তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভ করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে তিনি পার্লামেন্টের ভেতরে ও বাইরে দলের শৃংখলা ও মর্যাদা রক্ষা করেন। ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রিয়তা, জনমত গঠন ও দলের সাফল্য তাঁর নেতৃত্বের উপর নির্ভর করে।
(৫) সংসদীয় কাজ: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রি সংসদীয় বিষয়ে ব্যাপক ভূমিকায় উত্তীর্ন হন। তিনি জাতীয় সংসদের নেতা। জাতীয় সংসদ পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর উপর ন্যস্ত। তিনি সংসদের কার্যপরিচালনা ও নীতি নির্ধারণ করেন। তিনি জাতীয় সংসেেদর অধিবেশন আহ্বান ও স্থগিতের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনি বিরোধী দলের সময় বণ্টন ও সংসদের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্পীকারকে সাহায্য করেন। আইন প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রি মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন।
আরো পড়ুন:
(৬) নিয়োগ সংক্রান্ত কাজ: প্রধানমন্ত্রি বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তাঁর এ নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা ব্যাপক। আইনত উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করেন। কিন্তু বাস্তবে প্রধানমন্ত্রির পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ করে থাকেন। প্রধান বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও মহাহিসাব নিরীক্ষককে নিয়োগের ব্যাপারে তিনি রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
(৭) বিবিধ: প্রধানমন্ত্রি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নীতি নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও চুক্তির ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি। দলীয় ঐক্য বিধান ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের তিনি বিভিন্ন বিষয় প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও আলোচনার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
সারকথা
বর্তমানে বাংলাদেশে সংসদীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান। আর এ সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার মধ্যমনি হলেন প্রধানমন্ত্রি। তাঁকে কেন্দ্র করে পুরো শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রপতি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রি হিসেবে নিযুক্ত করেন। তাঁর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি পদস্থ কর্মচারিদের নিয়োগ করেন। সংসদীয় ব্যবস্থার শীর্ষ স্থান কার্যক্ষেত্রে মন্ত্রিসভা ও মন্ত্রিসভার প্রধান হিসেবে তিনি হলেন সর্বোচ্চ কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url