সূরা ফীল বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ শানে নুযুল ও ফজিলত

আজ এই আর্টিকেলটিতে সূরা ফীল বাংলা উচ্চারণ অর্থ সহ শানে নুযুল ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

সূরা ফীল 

 বাংলা উচ্চারণ : ১. আলাম তারা কাইফা ফাআলা রাব্বুকা বিআসহাবিল্ ফীল; ২. আলাম ইয়াজয়াল কাইদাহুম ফী তাদলীল; ৩. ওয়া আরসালা আলাইহিম তাইরান আবাবীল। ৪. তারমীহিম বিহিজারাতিম্ মিন সিজ্জীল; ৫. ফাজাআলাহুম কাআসফিম্ মা'কূল।

আরো পড়ুন: সূরা আল যিলযাল বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ শানে নুযূল ও ফজিলত

অর্থ:

 ১. তুমি কি দেখনি, তোমার প্রভু হাতীর বাহিনীর সাথে কিরূপ আচরণ করেছিলেন? ২. তাদের কৌশল তিনি কি ব্যর্থ করে দেননি? ৩. তিনি তাদের বিরুদ্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবীল পাখী প্রেরণ করেন, ৪. যারা তাদের উপর প্রস্তর কংকর নিক্ষেপ করে। ৫. অতপর তাদেরকে তিনি ভক্ষিত ঘাসের ন্যায় করেছিলেন।

শানে নুযূল 

আরববাসীদের কাছে কাবা শরীফ ছিল অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন। ইয়ামনের খ্রীষ্টান শাসক আবরাহা সানায় এক জাঁকজমকপূর্ণ গীর্জা নির্মাণ করে কাবার প্রতিদ্বন্দ্বী তীর্থকেন্দ্র রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হয়। অতপর ঘোষণা করেন যে, এখন থেকে আর কেহ হজ্ব করতে আরবের জীর্ণ কাবাঘরে যেতে পারবে না; বরং এর পরিবর্তে তার নির্মিত গীর্জায় হজ্ব করতে হবে। তখন আরবে ইহুদী ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায় ছিল। কুরায়শগণ কাবা শরীফকে আল্লাহর ঘর হিসেবে জানত। আর ইহুদীরা আবরাহা কর্তৃক পূর্বেই নির্যাতিত ও বিতাড়িত হয়েছিল। তাই আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)-এর প্রতিষ্ঠিত ও হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর পুননির্মিত পৃথিবীর প্রথম ইবাদতখানা কাবা ঘর ত্যাগ করে কেহই তার গীর্জায় ইবাদত করতে রাজী হল না। তাই বাদশাহর আদেশ উপেক্ষা করে সকলেই দলে দলে কাবাঘরে হজ্ব করতে যেত। এদিকে ইতিমধ্যে আবরাহা নির্মিত গাঁজায় জনৈক কুরাইশ প্রবেশ করে মলমূত্র ত্যাগ করে। মুকাতিল ইবনে সোলায়মান বলেন, কুরাইশদের কিছু যুবক মিলিত হয়ে গীর্জায় আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে আবরাহার সন্দেহ ও ক্রোব জন্মে কাবাকেন্দ্রিক সম্প্রদায়গুলোর উপর, বিশেষ করে কুরায়শদের উপর। তাই সে ভাবল যে, কাবাঘর ধ্বংস করলেই তার উদ্দেশ্য সফল হবে। তাই সে মহাসমারোহে ষাট হাজার সৈন্যের বিশাল দল নিয়ে মক্কা আক্রমণ করল। দলে হস্তিবাহিনীও ছিল। এজন্যে এদেরকে "আসহাবুল ফীল" বলা হয়েছে।


মক্কা উপকণ্ঠে আবরাহা বাহিনী উপনীত হলে কাবা শরীফের তদানীন্তন খাদেম আবদুল মুত্তালিবের দুই শত উট আটকে রাখায় সে উটগুলো ছাড়িয়ে নেয়ার ব্যাপারে উভয়ের মধ্যে সাক্ষাত হয়েছিল। আবরাহা সম্মানজনক ব্যবহার পূর্বক উটগুলো ফেরত দেয় এবং কাবা শরীফ ধ্বংস করার হুমকি দেয়। আবদুল মুত্তালিব তখন তাকে বলেন, তিনি উটের দায়িত্বে আছেন বলে তা নিয়েই তিনি ভাবতে পারেন। আর কাবা আল্লাহর ঘর। সেটা নিয়ে আল্লাহই ভাববেন এবং তিনি রক্ষা করবেন। আবদুল মুত্তালিব আবরাহার কাছ থেকে ফিরে এসে কুরায়শ পরিবারবর্গকে মক্কা থেকে পার্শ্ববর্তী নিরাপদ পাহাড়ে আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিলেন। আর তিনি নিজে কাবার চত্বরে কিছু সংখ্যক কুরায়শদেরকে নিয়ে আল্লাহর কাছে এ বলে প্রার্থনা করলেন, হে 'আল্লাহ্। মানুষ যেমন নিজের বাসগৃহ রক্ষা করে, তেমনি তুমিও তোমার ঘর রক্ষা কর।' এ প্রার্থনা করে তিনি স্বগোত্রীয়দের সাথে নিয়ে পাহাড়ে গিয়ে প্রাণের ভয়ে আশ্রয় নিলেন আর আবরাহার আক্রমণের ভয়াবহতা ও পরিণতি লক্ষ্য করতে লাগলেন।

আরো পড়ুন: সূরা আল ইনশিরাহ বাংলা উচ্চারণ অর্সথহ শানে নুযূল ও ফজিলত

এদিকে কাবাঘর ধ্বংসের জন্য সৈন্যদল যখন তারা কাবা ঘরের কাছাকাছি এল তখন তাদের হাতীগুলোর গতিরুদ্ধ হল এবং সৈন্যদল অগ্রসর হতে পারল না। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ কাবা ঘরকে রক্ষা করার জন্য আবরাহার বিপুল বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষুদ্রাকৃতি এক ঝাঁক আবাবীল পাখী প্রেরণ করেন। হাতীর বিরুদ্ধে পাখী। কি চমৎকার দৃশ্য। সে ক্ষুদ্র আবাবীল বাহিনী ঠোঁটে এবং দুপায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে চেপে নুড়ি কংকর নিয়ে এল এবং সেগুলো তাদের উপর প্রবল বেগে নিক্ষেপ করতে লাগল। ফলে আবরাহার বিশাল বাহিনী মুহূর্তের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে গেল। আর আবরাহার শরীরেও এ আঘাত ক্ষতের চিহ্ন সৃষ্টি করেছিল। মক্কায় এ অদ্ভুত ঘটনাটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর জন্মের বছর ঘটেছিল। মহান আল্লাহ্ হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-কে এ ঘটনাটি অবহিত করার জন্য এ সূরা ফীল নাযিল করেন।

ফযীলত

 ১. এ সূরাটি ৪০ বার পাঠ করলে ইনশাআল্লাহ দুশমনের উপর বিজয় লাভ করা যায়। ২. কাউকে যদি শত্রুরা অবরোধ করে তাহলে আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে এ সূরাহটি এক হাজার সাত বার পাঠ করলে ইনশাআল্লাহ শত্রুরা ধ্বংস হবে এবং কোন ক্ষতি করতে পারবে না।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url