সূরা আল-ইমরানের শেষ এগারোটি আয়াত বাংলা উচ্চারণ অর্থ সহ বিস্তারিত

নবী করিম (সঃ) তাহাজ্জুদ নামাযের পর সূরা আল ইমরানের শেষ ১১টি আয়াত পাঠ করতেন। রাসূল (সঃ) স্বয়ং যে আমল করেছেন, তা অবশ্যই অতি উত্তম। এ সময় উক্ত আয়াতগুলো পাঠ করে যা চাইবে, তাই আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে (তবে উদ্দেশ্য অবশ্যই সৎ হতে হবে)। এ আয়াতগুলোতে কয়েকটি বিশেষ মুনাজাত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এগুলো পাঠ করে মুনাজাত করতেন।

সূরা আল-ইমরান

বাংলা উচ্চারণঃ ইন্না ফী খালকিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়াখতিলাফিল লাইলি ওয়ান্নাহারি সব। লাআয়াতিল লিউলিল আলবাব।

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাযীনা ইয়াযকুরুনাল্লাহা কিয়ামাওঁ ওয়া কু'উদাও ওয়া আলা জুনুবিহিম: ওয়া

 ইয়াতাফাক্কারুনা ফী খালকিস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদি।

বাংলা উচ্চারণঃ রাব্বানা মা খালাকতা হাযা বাতিলা সুবহানাকা ফাকিনা 'আযাবান্নার। রাব্বানা ইন্নাকা মান তুদখিলিন নারা ফাকাদ আখযাইতাহু ওয়ামা লিয্যালিমীনা মিন আনছার।

বাংলা উচ্চারণ : রাব্বানা ইন্নানা সামি'না মুনাদিয়াই ইউনাদী লিল ঈমানি আন আমিনু বিরাব্বিকুম ফাআমান্না। রাবান্না ফাগফির লানা যুনুবানা ওয়া কাফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মাআল্ আবরার।

বাংলা উচ্চারণ: রাব্বানা ওয়া আতিনা মা ওয়াদতানা আলা রুসুলিকা ওয়ালা তুখযিনা ইয়াওমাল কিয়ামাহ। ইন্নাকা লা তুখলিফুল মীআদ।

বাংলা উচ্চারণ: ফাসতাজাবা লাহুম রাব্বুহুম আন্নী লা উদীয়ু আমালা আমিলিম মিনকুম মিন যাকারিন আও উনছা; বা'দুকুম মিম্মাবাদি। ফাল্লাযীনা হাজারূ ওয়া উখরিজু মিন দিয়ারীহিম ওয়া ঊযু ফী সাবীলী ওয়া কাতালু ওয়া কুতিলু, লা উকাফিরান্না আনহুম সায়্যিআতিহিম, ওয়ালা উদ্‌খিলান্নাহুম জান্নাতিন্ তাজরী মিন তাহতিহাল্ আনহার, সাওয়াবাম মিন ইন্দিল্লাহি, ওয়াল্লাহু ইন্দাহু হুসনুস ছাওয়াব।

বাংলা উচ্চারণঃ লা ইয়াগুরান্নাকা তাকাল্লুবুল্লাযীনা কাফারূ ফিল বিলাদ।

বাংলা উচ্চারণ: মাতাউন কালীলুন; ছুম্মা মা'য়াহুম জাহান্নামু ওয়া বি'সাল মিহাদ।

বাংলা উচ্চারণ: লাকিনিল্লাযীনাত্ তাকাও রাব্বাহুম লাহুম জান্নাতুন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহারু খালিদীনা ফীহা নুযুলাম মিন ইনদিল্লাহি ওয়ামা ইনদিল্লাহি খাইরুল লিল আবরার। 

বাংলা উচ্চারণ : ওয়া ইন্না মিন আহলিল কিতাবি লামাই ইউ'মিনু বিল্লাহি ওয়ামা উনযিলা ইলাইকুম ওয়ামা উনযিলা ইলাইহিম খাশিয়ীনা লিল্লাহ। লা ইয়াশতারুনা বিআয়াতিল্লাহি ছামানান্ কালীলান। উলায়িকা লাহুম আজরুহুম ইনদা রাব্বিহিম। ইন্নাল্লাহা সারীউল হিসাব।

ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানুসবিরু ওয়া সাবিরূ ওয়া রাবিতু; ওয়াত্তাকুল্লাহা লাআল্লাকুম তুফলিহুন।

অর্থঃ নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাতদিনের আবর্তনে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে (বুদ্ধিমান লোকদের জন্য)।

অর্থ: দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় যারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে, (তারা বলে) হে প্রভু। এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সমস্ত পবিত্রতা তোমারই, আমাদেরকে তুমি জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচাও।

অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক। নিশ্চয় তুমি যাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করলে তাকে অপমানিত করলে; আর অত্যাচারীদের জন্য তো কোন সাহায্যকারী নেই।

অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহবানকারীকে ঈমানের প্রতি আহ্বান করতেঃ তোমাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আন। তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের পালনকর্তা। অতপর আমাদের সকল গোনাহ মাফ কর এবং আমাদের সকল দোষ-ত্রুটি দূর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেক লোকদের সাথে।

অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক। আমাদেরকে দাও, যা তুমি ওয়াদা করেছ তোমার রাসূলগণের মাধ্যমে এবং আমাদেরকে কিয়ামতের দিন তুমি অপমানিত কর না। নিশ্চয় তুমি অঙ্গিকার ভঙ্গ কর না।

অর্থ: অতপর তাদের প্রতিপালক তাদের দুআ (এভাবে) কবুল করে নিলেনঃ আমি তোমাদের কোন আমলকারী আমল বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা মহিলা। তোমরা পরস্পর এক। তারপর সে সমস্ত লোক, যারা হিজরত করেছে, নিজেদের দেশ থেকে যাদের বের করে দেয়া হয়েছে এবং আমার পথে যাদের প্রতি উৎপীড়ন করা হয়েছে এবং যারা যুদ্ধ করেছে ও ইন্তিকাল করেছে, নিশ্চয় আমি তাদের উপর থেকে অকল্যাণ অপসারিত করব এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। এ হল বিনিময় আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর উত্তম বিনিময় রয়েছে আল্লাহর কাছে।

অর্থঃ শহরে কাফিরদের চালচলন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয়।

অর্থ: এটা হল সামান্য উপকার, এরপর তাদের স্থান হবে জাহান্নাম। আর সেটি হল অতি নিকৃষ্টতর অবস্থান।

অর্থঃ কিন্তু যারা নিজেদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে প্রস্রবণ। তাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে সদা আপ্যায়ন চলতে থাকবে। আর যা আল্লাহর কাছে রয়েছে, তা সৎকর্মশীলদের জন্য খুবই উত্তম।

অর্থঃ আর আহলে কিতাবদের মধ্যে কেহ কেহ এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে এবং যা কিছু তোমার উপর নাযিল হয়, আর যা কিছু তাদের উপর নাযিল হয়েছে সেগুলোর উপরও, আল্লাহর সামনে বিনয়াবনত থাকে এবং আল্লাহর আয়াতসমূহে কম মূল্যের বিনিময়ে সওদা করে না, তারাই হল সে লোক, যাদের জন্য বিনিময় রয়েছে তোমাদের প্রতিপালকের কাছে। নিশ্চই আল্লাহ যথাশীঘ্র হিসাব বুঝিয়ে দেন।

অর্থঃ হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং পরস্পরের প্রতি সহিষ্ণু হও এবং দুশমনের মোকাবিলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমাদের উদ্দেশ্য অর্জনে সক্ষম হতে পার। (সূরা আল-ইমরান: ১৯০-২০০)

আরো পড়ুন:  হজ্জ করা জীবনে একবার ফরজ হজ্জের ব্যাখ্যা ও হজ্জের পারিভাষিক অর্থ এবং হজ্জ কখন ফরজ হয়

আলোচ্য আয়াতে "উলুল আলবাব" শব্দের অর্থ হল বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিসম্পন্ন লোক। বুদ্ধিমান কারা? শুধুমাত্র তারাই বুদ্ধিমান, যারা ঈমান গ্রহণ করে এবং সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে।

সারাবিশ্বে প্রত্যেক মানুষই বুদ্ধিমান হবার দাবিদার। একান্ত নির্বোধ ব্যক্তিও নিজেকে নির্বোধ বলে স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়। সেজন্যই কোরআন কারিমে বুদ্ধিমানদের এমন কয়েকটি লক্ষণ বলে দিয়েছে, যা প্রকৃতপক্ষেই বুদ্ধির মাপকাঠি হিসেবে গণ্য হতে পারে।

প্রথম লক্ষণ হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা। লক্ষণীয় যে, অনুভূত বিষয়ের জ্ঞান চোখ, কান, নাক, জিহবা প্রভৃতি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারাও লাভ করা যায়। তা নির্বোধ জীব-জন্তুর মধ্যেও রয়েছে। পক্ষান্তরে বুদ্ধির কাজ হল, উল্লেখিত নিদর্শনাদির মধ্য থেকে গৃহীত দলিল-প্রমাণের মাধ্যমে এমন কোন সিদ্ধান্তে পৌছা যা অনুভবযোগ্য নয় এবং যার দ্বারা বাস্তবতার সর্বশেষ উৎকর্ষ লাভ করতে পারে।

এ মূলনীতির ভিত্তিতে সৃষ্টজগতের প্রতি লক্ষ্য করলে আসমান, জমিন এবং এর মধ্যস্থিত সমস্ত সৃষ্টি ও সেগুলোর ক্ষুদ্র-বৃহৎ সামগ্রীর সুষ্ঠু ও বিস্ময়কর পরিচালন ব্যবস্থা বুদ্ধিকে এমন এক সত্তার সন্ধান দেয়, যা জ্ঞান-বিবিজ্ঞান ও শক্তি-সামর্থ্যের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত এবং যিনি যাবতীয় বস্তুকে বিশেষ হিকমতের দ্বারা তৈরি করেছেন। তাঁরই ইচ্ছায় এ সমগ্র ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। বস্তুত সে সত্তা একমাত্র বিশ্ব প্রভু আল্লাহ তায়ালা।

মানবজাতির ইচ্ছা ও পরিকল্পনার ব্যর্থতা সর্বদা সর্বত্রই প্রায় পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। কাজেই এ ব্যবস্থার পরিচালক মানুষকে বলা চলে না। সেজন্য আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং এর মধ্যস্থিত উৎপন্ন ও বস্তুর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে বিবেক-বুদ্ধির সামনে একটিমাত্র পরিণতি সাব্যস্ত হয়ে যায়। তা হল আল্লাহ তায়ালার পরিচয় লাভ, তাঁর আনুগত্য এবং তাঁরই যিকির করা। যে লোক এ ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করবে, সে বুদ্ধিমান হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য নয়। তাই কোরআন মজীদে বুদ্ধিমানদের লক্ষণ বর্ণনায় বলা হয়েছে-

الَّذِينَ يَذْكُرُونَ الله قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِم - (ال عمران - (۱۹۱)

উচ্চারণ: আল্লাযিনা ইয়াযকুরুনাল্লাহা কিয়ামাও ওয়া কুউদাওঁ ওয়া আলা জুনুবিহিম।

অর্থঃ বুদ্ধিমান হচ্ছে সে সব লোক, যারা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে শায়িত অবস্থায় অর্থাৎ সর্বাবস্থায় সর্বক্ষণ আল্লাহ তায়ালার স্মরণে নিয়োজিত থাকে।

 (সূরা আল-ইমরান: ১৯১)

বর্তমানে সারা পৃথিবীতে যে বিষয়টিকে বুদ্ধি এবং বুদ্ধিমানের মাপকাঠি বলে গণ্য কর হচ্ছে তা শুধু ধোঁকা ছাড়া আর কিছু নয়। কেহ ধন-সম্পদ জমা করাকে বুদ্ধিমত্তা সাব্যস্ত করছে। আবার কেহ বিভিন্ন ধরনের কলকজা তৈরি করা কিংবা বাষ্পবিদ্যুৎকে প্রকৃত শক্তি মনে করার নাম রেখেছে বুদ্ধিমত্তা। আসলে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন কাঁচামাল থেকে কল-কারখানা পর্যন্ত এবং কারখানা থেকে বাষ্প বিদ্যুতের শক্তি পর্যন্ত পৌঁছে। কিন্তু বুদ্ধির কাজ হল আরও এগিয়ে দেয়া। যাতে মানুষ বুঝতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে যে, আসল কাজটি কি মাটি, পানি বা লোহা-তামার, না মেশিনের; বরং আসল কাজটি হল তাঁরই যিনি আগুন, পানি ও বায়ুকে সৃষ্টি করেছেন- যার ফলে এ বাষ্প, বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং সে সব লোকই বুদ্ধিমান হওয়ার যোগ্য, যারা আল্লাহকে চেনবেন এবং সর্বাবস্থায় সর্বদা তাঁকে স্মরণ করবেন।

মোটকথা মহান আল্লাহ সৃষ্টি ও সৃষ্টি জগতের উপর চিন্তা-গবেষণা করে তাঁর মাহাত্ম্যও মহিমা সম্পর্কে অবগত হওয়া একটি মহৎ ও উচ্চ স্তরের ইবাদত। এগুলোর মধ্যে গভীরভাবে চিন্তা-গবেষণা করে তা থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ না করা একান্তই নির্বুদ্ধিতা ও বোকামী। আলোচ্য আয়াতের শেষে বলা হয়েছে-

رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً - (ال عمران - (۱۹۱)

উচ্চারণঃ রাব্বানা মা খালাকতা হাযা বাতিলা। 

(সূরা আল-ইমরান: ১৯১)

অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালার অগণিত সৃষ্টির উপর যে লোক চিন্তা-ভাবনা করে, সে এ অবস্থায় না পৌঁছে পারে না যে, এসব বস্তু আল্লাহ নিরর্থক সৃষ্টি করেননি, এসবের সৃষ্টির পিছনের হাজারও তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। এ সমুদয় বস্তুকে আল্লাহ মানুষের সেবায় নিয়োজিত করে।

দিয়ে মানুষকে চিন্তা-ভাবনা করার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যে, পৃথিবী সবকিছু তাদের কল্যাণের জন্য তৈরি করা হয়েছে, আর তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে একমাত্র মহান আল্লাহ ইবাদতের উদ্দেশ্যে। এটাই হচ্ছে তাদের জীবনের লক্ষ্য।

চিন্তা ও গবেষণা শেষে প্রকৃত জ্ঞানী এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে, এ গোটা বিশ্ব সৃষ্টি নিরর্থক নয়, বরং এগুলো সবই বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরত ও হিকমতেরই শ্রেষ্ঠ প্রমাণ। এরপর নিজেদের প্রতিপালককে চিনে নিয়ে তার দরবারে তিনটি আরজি পেশ করে। (১) জাহান্নাম থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর। (২) আমাদেরকে আখিরাতের লাঞ্ছনা থেকে অব্যাহতি দান কর। (৩) আর তৃতীয় আরজি হচ্ছে, আমরা তোমার তরফ থেকে আগত আহ্বানকারী রাসূল (সঃ)-এর আহ্বান শুনেছি এবং তাতে ঈমান এনেছি। সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহগুলোর ক্ষমা করে দাও এবং আমাদের অন্যায় ও দোষ-ত্রুটির কাফ্ফারা করে দাও, আর নেককার ও সৎকর্মশীলদের সাথে আমাদেরকে মৃত্যু দান কর অর্থাৎ তাদের শ্রেণীভুক্ত করে দাও।

এর পরবর্তী আয়াতে চতুর্থ আরজিটি করা হয়েছে কল্যাণ লাভ সম্পর্কে যে, নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে জান্নাতের নিয়ামতসমূহের যে ওয়াদা তুমি দান করেছ, তা আমাদেরকে দান কর। আর কিয়ামতের দিন আমাদেরকে যেন লাঞ্ছনা ভোগ করতে না হয়।

সর্বশেষ আয়াতে মুসলমানগণকে তিনটি বিষয়ে নসীহত করা হয়েছে-(১) সবর (২) মুসাবারাহ ও (৩) মুরাবাতা আর তাকওয়া- যা এ তিনটির সাথে ওৎপ্রোতভাবে যুক্ত।

সবর শব্দের অর্থ-বিরত থাকা, সহ্য করা। আর কোরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় এর অর্থ নফসকে তার প্রকৃতি বিরুদ্ধ বিষয়ের উপর আটকে রাখা। সবর তিন প্রকার।

আরো পড়ুন: সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বাংলা উচ্চারণ অর্থ সহ ফজিলত

১। সবর আলাত্তাআত : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশাবলীর অনুবর্তিতা যত কঠিনই হোক না কেন, তাতে মনকে স্থির রাখা।

২। সবর আনীল মাআসী: আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যে সব বিষয়ে নিষেধ করেছেন, সেগুলো যত আকর্ষণীয়ই হোক না কেন, যত স্বাদেরই হোক না কেন, তা থেকে মনকে বিরত রাখা।

৩। সবর আলাল মাসায়েব: বালা-মুসিবত, দুঃখ-কষ্টের বেলায় ধৈর্যধারণ করা। দুঃখ-কষ্ট ও সুখ-শান্তিকে আল্লাহর তরফ থেকে আগত মনে করে মনমস্তিষ্ককে সেজন্য অধৈর্য করে না তোলা।

মুরাবাতাঃ অর্থাৎ ঘোড়াকে বেঁধে রাখা এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। ইসলামী সীমান্তের রক্ষা করার লক্ষ্যে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় থাকাকেই রেবাত বা মুরাবাতা বলে। সীমান্ত রক্ষার অনেক ফযীলত রয়েছে। রাসূল (সঃ) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় একদিনের সীমান্ত পাহারা সমগ্র দুনিয়া এবং এর মাঝে যা কিছু রয়েছে, সে সমুদয় থেকেও উত্তম।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url