হজ্জ করা জীবনে একবার ফরজ হজ্জের ব্যাখ্যা ও হজ্জের পারিভাষিক অর্থ এবং হজ্জ কখন ফরজ হয়

আজ এই আর্টিকেলটিতে হজ্জ কি হজ্জের ব্যাখ্যা হজ্জের শাব্দিক ও  পারিভাষিক অর্থ হজ্জ কখন ফরজ হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

হজ্জ

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করিম (সা) বলেছেন হে মানবজাতি নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি হজ্ব ফরজ করেছেন। তখন আকরা ইবনে আ হাবিস দাঁড়িয়ে বললেন হে আল্লাহর রাসূল প্রত্যেক বছরই কি হজ করা ফরজ? মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বললেন আমি যদি এর জবাবে হ্যাঁ বলি তবে সেটাই ওয়াজিব হয়ে যাবে আর যদি তা ওয়াজিব হয়ে যেত, তবে তোমরা তদানুযায়ী আমল করতে না। আর তোমরা তা করতে পারতে ও না। হজ মূলত একবারই ফরজ যদি কেউ এর অধিক করে তবে তা নফল।

 (তিরমিযী মুসনাদে আহমদ নাসাঈ দারেমী।

আরো পড়ুন: সূরা মাউন বাংলা উচ্চারণ অর্থ সহ শানে নুযুল ও ফজিলত

হজ্জের ব্যাখ্যা 

হাদিসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর একটি ভাষণের উল্লেখ করা হয়েছে। আলোচ্য হাদীসে 'হে মানবজাতি' রাসুলের এই সম্বোধনই এ কথা প্রমাণ করে। অবশ্য হযরত আবু হুরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত এ বিষয়ের ওপর একটি হাদিসের স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে। 

আল্লাহর রাসুল (সা) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দান করলেন। 

মুসনাদে আহমাদ-এ উদ্ধৃত হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত এ হাদিসের গুরুত্বে ও এ কথার উল্লেখ রয়েছে। হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে এ প্রসঙ্গে আরো তথ্য পাওয়া যায়। তা হল, যখন কোরআন মাজিদের আয়াত-


মানুষের মধ্যে যার যেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই ঘরের হজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য। (সূরা আলে ইমরান ৯৭) নাজিল হয়, তখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এই ভাষণ প্রদান করেন। কোরআন থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা অর্থাৎ তথায় যাওয়া আসার মত শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের প্রতিই ফরজ। কিন্তু এটা জীবনে কয়বার আদায় করতে হবে, কিংবা জীবনের মাত্র একবার হজ্জ আদায় করলেই দায়িত্ব পালন শেষ হয়ে যাবে কিনা তা হাদিস থেকে জানা যায় যে, হজ্জ জীবনে একবার আদায় করায় ফরজ। একবার ফরজ আদায় করার পরও যদি কেউ হজ্জ করে তবে তা নফল হবে এবং তাতে নফল হজ্জ পালনেরই সওয়াব পাওয়া যাবে। 

হযরত আকরাম (রা) এর মনে এ সম্পর্কে প্রশ্ন জেগেছিল। সেজন্যই তিনি রাসূলের কথা শোনার পর প্রশ্নটিই পেশ করেছিলেন। অন্য হাদিসের বর্ণনা মতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) প্রশ্নটির জবাব সঙ্গে সঙ্গে দেননি। বরং তিনি চুপ করে ছিলেন। রাসুলের প্রথমত চুপ থাকার তাৎপর্য থেকে এটাই বুঝতে পারা যায় যে তিনি এভাবে প্রশ্ন করাকে মোটেও পছন্দ করেছে পারেননি বলে এ ধরনের ক্ষেত্রে চুপ থাকায় শ্রেয় মনে করেন। অন্য কথায় অধিক শরীয়াতি দায়িত্ব পেয়ে বসার আশঙ্কা রয়েছে। পূর্বেও কয়েকবার এরূপ প্রশ্ন উঠেছে। নবী করীম (সা) তা নিষেধ করে দিয়েছেন। কিন্তু নবী করীম (সা) যেহেতু দুনিয়ায় শরীঅতের জরুরি জ্ঞান বিস্তারের দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন এজন্য তিনি বেশিক্ষণ চুপ করে থাকতে পারলেন না। প্রশ্নকারী যখন একবার দুবার তিনবার প্রশ্নটি উপস্থাপন করলে তখন নবী করীম (সা) বললেন এর উত্তরে আমি হ্যাঁ বললে প্রত্যেকে বছরেই হজ্জ করা ফরজ হয়ে পড়ত। প্রত্যেক বছরে হজ করা হবে, না এক বছর করলেই একজনের সারা জীবনের কর্তব্য পালন হয়ে যাবে, সে সম্পর্কে ফায়সালা করার দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলে করীমের (সা) উপর অর্পিত হয়েছিল। এজন্য তিনি জবাবে বলেছিলেন যে, আমি হ্যাঁ বলে তা ওয়াজিব হয়ে যেত কিন্তু তোমরা তা করবে না বা করতে পারবে না। তাই জীবনে একবার হজ্জ করাকে ফরজ করা হয়েছে। 

হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেছেন আমি নবী করীম (সা) কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ্জ করলো এবং এ সময়ের মধ্যে স্ত্রী সহবাসও কোনরূপ ফাসিকী কাজ করল না সে তার মা কর্তৃক ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে গেল। 

হজ্বের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ 

হজ্জ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। হজ্জ শব্দের অর্থ কোন বিষয়ে বা কাজের ইচ্ছা বা ঢৃঢ় সংকল্প গ্রহণ।

খলীল বলেছেন হজ্জ অর্থ কোন মহৎ বিরাট কাজের বারবার ইচ্ছা ও সংকল্প কখন করা। 

আযহারী বলেন হজ অর্থ কোন স্থানে একবারের পর দ্বিতীয়বার আসা। এ কারণে মক্কা গমন কে আল্লাহর ঘরের হজ বলা হয়। 

ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় হওয়ার শব্দ অর্থ হচ্ছে-

আল্লাহর ঘরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কতগুলো বিশেষ ও নির্দিষ্ট কাজ সহকারে মহান ঘরের যিয়ারতের সংকল্প করাই হল হজ্জ। 

বদরুদ্দীন আইনি হজের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন 

আল্লাহর ঘরের সম্মান ও মহত্ত্ব প্রকাশের উদ্দেশ্যে উপহার জিয়ারতের সংকল্প করাই হজ্জ। 


এর মানে হজের সংজ্ঞা দিতে এগিয়ে বলেন 

কাবা ঘরের আনুষ্ঠানের দিকে পালন ও আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের উদ্দেশ্যে তথায় গমন করাই হজ। 

আল কোরআনে হজ্ব ফরজ হওয়ার দলিল 

কোরআন মাজিদের যে আয়াতে হজ্জ হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা হল 

ন্তমানুষের মধ্যে যার যেখানে সেখানে যাওয়া সমস্ত আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই ঘরের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য।

 (সূরা আল ইমরান ৯৭)

এ আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর ঘর পর্যন্ত যাতায়াত সংক্রান্ত যাবতীয় ভাই সুযোগ-সুবিধা ও শক্তি সামর্থের অধিকারী প্রত্যক ব্যক্তির উপর হজ করা ফরজ। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ও হজ ফরজ হওয়ার কথা সুপষ্টভাষায় ঘোষণা করেছেন ইসলামের পাঁচটি রুকুনের মধ্যে হজ একটি। এ সম্পর্কিত হাদিস সময়ে ১৬ জন সাহাবী কর্তৃক অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে ও বলিষ্ঠ ভাষায় বর্ণিত ও হাদিসের গ্রন্থাবলীতে উদ্দ্রিত হয়েছে সব কয়টি হাদিসে হজকে ইসলামের পঞ্চম রুকন বলা হয়েছে এ ভাষায়-

আল্লাহর ঘরে হজ্জ যদি তথায় যাতায়াতের সামর্থ্য তোমার থাকে হে আল্লাহর ঘর এই হজ ফরজ হওয়ার কারণ আর আল্লাহর ঘর কাবা শরীফ মাত্র একটি এজন্য হয় জীবনে মাত্র একবার এই ফরজ। জীবনে একাধিক বার হজ করা ফরজ নয় যে লোক হজ করে তাকে বলা হয় আলহাজ্ব হাজী কিন্তু এটা কোন পদবী বা উপাধি নয় এ এ আলহাজ্ব বা হাজী শব্দটির হজ করার পর নামের পূর্বে ব্যবহার করার যথার্থ নয় কারণ কেউ যদি নামাজ আদায় করে তবে তার নামের পূর্বে নামাজি বা যাকাত আদায় করলে তাকে যাকাত দাতা বলা হয় না। অনুরূপ হজ করলে তাকে হাজী নামে ডাকা ঠিক নয়।

আরো পড়ুন: সূরা আল যিলযাল বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ শানে নুযূল ও ফজিলত

হজ্জ কখন ফরজ হয় 

কেউ কেউ বলেছেন হজ্জ হিজরতের পূর্বেই ফরজ হয়েছে। কিন্তু এটা সর্বজনগ্রাহ কথা নয়। ইমাম কুরতুবী বলেছেন হজ্জ ফরজ হয়েছে হিজরতের পঞ্চম বছর। অধিকাংশ আলেমদের মত হল হজ্জ ফরজ হয়েছে ষষ্ঠ হিজরী সনে কেননা আসনে কোরআন নিয়ে আয়াত-

তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরা পালন করো (সূরা আল বাকারা-১৯৬)

কিন্তু নবম হিজরী শুনে হজ্জ ফরজ হওয়ার কথা অধিক সঠিক। আল্লামা মাওয়ার্দী বলেছেন অষ্টম হিজরী শুনে হজ্জ ফরজ হয়েছে। হজ্জ ফরজ হওয়ার তারিখ বা সাল নিয়ে মতভেদ থাকলেও ইসলামের পঞ্চম বুনিয়াদ এবং সামর্থ্যবানদের উপর তা ফরজ তাতে কোন মতভেদ নেই। সুতরাং ফরজ হওয়ার তারিখ নিয়ে মতভেদ হজ্জ ফরজ হওয়ার গুরুত্বকে খাটো করে না।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url