অন্তরের পবিত্রতা এবং তার প্রতিক্রিয়াসমূহ
আজ এই আর্টিকেলটিতে অন্তরের পবিত্রতা এবং তার প্রতিক্রিয়াসমূহ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
হামদ ও সানার পরে-
অবশ্যই ঐ সমস্ত মুমিনেরা সফলতা অর্জন করেছে, যারা খুশু-খুজুর সঙ্গে নামাজ আদায় করে এবং অহেতুক ও অনর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে এবং জাকাত প্রদান করে।
[সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১-৪]
সম্মানিত প্রিয় ভাইয়েরা, আমি যে আয়াত আপনাদের সামনে তিলাওয়াত করেছি, এগুলোর ব্যাখ্যা পূর্বের কয়েক জুমআ ধরে চলছে। এই আয়াতগুলোর মধ্যে আল্লাহ তাআলা সফল মুমিনদের জন্য এটা জরুরি করে দিয়েছেন যে, তাঁদের আখলাক পবিত্র হতে হবে। কুরআনুল কারিমে নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়াতে পাঠানোর একটা উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষদের আখলাককে পবিত্র করবেন। এর গুরুত্ব এজন্য দেওয়া হয়েছে যে, মানুষের যতগুলো আমল ও কাজকর্ম আছে, এই সবগুলোই তার আখলাকের ওপর নির্ভরশীল। যদি মানুষ কোনো ভালো কাজ করে, তাহলে এটা ভালো আখলাকের কারণেই করে থাকে। আর যদি সে কোন খারাপ কাজ করে তাহলে এটা সে খারাপ আখলাকের কারণেই করে থাকে। যদি মানুষের আখলাক ঠিক হয়ে যায়, তাহলে পুরো জীবন ঠিক হয়ে যাবে। আর যদি মানুষের আখলাক খারাপ হয়ে যায় তাহলে পুরো জীবন খারাপ হয়ে যাবে।
এ কথা জনাবে রাসুল সা. এক হাদিসের মধ্যে ইরশাদ করেছেন যে-
শরীরের মধ্যে এমন একটি গোশতের টুকরা আছে যদি তা ঠিক হয়ে যায় তাহলে পুরো শরীর ঠিক হয়ে যায়। আর যদি তা খারাপ হয়ে যায় তাহলে পুরো শরীর খারাপ হয়ে যায়। আর তাহলো মানুষের অন্তর। [৬] এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, অন্তরের মধ্যে যে জজবা এবং খাহেশাত সৃষ্টি হয় যদি তা ঠিক না হয়, তাহলে মানুষের পুরো জিন্দেগি খারাপ হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন: মিথ্যার নিষিদ্ধতা ও তার প্রকারভেদ সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা
বিশৃঙ্খলার কারণে আখলাক খারাপ হওয়া
বর্তমান জামানায় এর গুরুত্ব এজন্য বেশি যে, আমরা নিজেদের আশপাশে যে বিশৃঙ্খলা ছড়ানো ছিটানো দেখছি, যদি এ ব্যাপারে চিন্তা করি তাহলে এটা দেখা যাবে যে, এই বিশৃঙ্খলা মূলত এই বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল যে, আজকে আখলাক ঠিক করার প্রতি কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। যদি আমাদের অন্তরের জজবাগুলো সঠিক দিকনির্দেশনা পেত, আমাদের অন্তরে নেক খাহেশাত সৃষ্টি হতো, তাহলে আজকে আমরা আমাদের আশপাশে এত বড় বিশৃঙ্খলা দেখতাম না। কোনো জালেম অন্যের ওপর এজন্য জুলুম করে যে, তার অন্তরে এরকম জজবা ও খাহেশাত সৃষ্টি হতে থাকে, যা শয়তানি জজবা এবং শয়তানি খাহেশাত, যা খারাপ এবং নাপাকি দ্বারা পরিপূর্ণ। কোনো মানুষ উলঙ্গপনা ও অশ্লীলতায় এজন্য লিপ্ত থাকে যে, তার অন্তরে খারাপ খাহেশাত এবং খারাপ জজবা সৃষ্টি হচ্ছে। যদি এই খারাপ চিন্তা ভাবনা এবং জজবা সৃষ্টি না হতো, তাহলে সে উশৃঙ্খলা ও উলঙ্গপনা কাজ করত না। এই জিনিসের কারণে আমাদের মুআশারায় বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ছে।
আখলাক খারাপ হওয়ার ফলাফল
বিশেষ করে মুআশারায়, মুআমালায় ও রাজনীতিতে খারাপ চরিত্র আমাদেরকে সর্বনিম্ন স্তরে ফেলে দিয়েছে। আজ আমাদের দেশে যে অবস্থা চলছে এতে প্রত্যেক ব্যক্তি এই অভিযোগ করছে যে, ঘুষের বাজার গরম হয়ে গিয়েছে। দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। হাবাম খাওয়ার জন্য মানুষ মুখ খুলে বসে আছে। হারাম সম্পদকে বৈধ মাল হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। যেভাবে বৈধ সম্পদ হালাল, অনুরূপভাবে ঘুষের মালও হালাল, ধোঁকার মালও হালাল, মিথ্যার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদও হালাল। বরং অনেক সময় ওই লোকেরা ব্যক্তিগতভাবে নিজেরা নামাজ পড়ে এবং অন্যান্য ইবাদাতও আদায় করে, ওয়াজ-নসিহত শ্রবণ করে। কিন্তু যখন ঐ লোকেরা দুনিয়াবি কাজকর্মে আত্মনিয়োগ করে এবং টাকা-পয়সার লেনদেন করে, তখন তাতে হালাল-হারাম এর পার্থক্য করে না। তারা এটা চিন্তা করে না যে, আমি যে টাকা পয়সা কামাই করছি এটা হালাল পন্থায় কামাই করছি নাকি হারাম পন্থায়? আমার মুখে যে লোকমা যাচ্ছে এটা হালাল লোকমা নাকি হারাম লোকমা? বরং বর্তমানে টাকা-পয়সা উপার্জনের জন্য মিথ্যা বলতেও বাঁধে না। মিথ্যা সার্টিফিকেট বানানোতে কোনো ভয় সৃষ্টি হয় না। মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে কোনো লজ্জা লাগে না। যখন টাকা পয়সার মুআমালা চলে আসে, তখন পুরো দ্বীনদারি এবং পুরো তাকওয়া দূরে সরে যায়।
টাকা পয়সা উপার্জনের প্রতিযোগিতা
বর্তমানে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে যে, উভয় হাতে যতো টাকা পয়সা কামানো যায় কামিয়ে নিব। চাই হালাল পন্থায় হোক অথবা হারাম পন্থায়। টাকা পয়সা আসা দরকার। এর জন্য যদি ঘুষ গ্রহণ করতে হয়, তাহলে ঘুষ নেব। যদি ঘুষ দিতে হয়, তাহলে ঘুষ দিব। এর জন্য যদি ধোঁকা দিতে হয় তাহলে ধোঁকা দিব। যদি মিথ্যা কাগজপত্র বানানোর প্রয়োজন পড়ে, তাহলে মিথ্যা কাগজ বানাবো। যদি মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার দরকার হয় তাহলে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবো। যা কিছু করার দরকার সবকিছুই করব। কিন্তু টাকা পয়সা আমার চাই। বর্তমানে আমাদের মুআশারায় যে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়েছে এটা মূলত এই চিন্তা-ভাবনার ফলাফলেই ছড়িয়েছে।
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের মুহাব্বত কমতির ফলাফল
যদি আল্লাহ তাআলার মুহাব্বত এবং আল্লাহ তাআলার রাসুলের মুহাব্বত এবং মুসলমান ভাইয়ের মুহাব্বত অন্তরে থাকত, তাহলে দুনিয়ার মুহাব্বত এবং দুনিয়ার ধন-সম্পদের মুহাব্বত অন্তরে প্রাধান্য পেত না এবং দুনিয়া অর্জনের জন্য মানুষ হালাল-হারামকে এক করে ফেলত না।
ইরাকের ওপর আমেরিকার হামলা
বর্তমানে পুরো উম্মতের মুসলিমার অন্তর এই ঘটনার কারণে ডেভঙে গেছে, যা বিগত দিনে ইরাকের ওপর আপতিত হয়েছে। বাগদাদ পতনের যে মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি সামনে এসেছে, এ কারণে প্রত্যেক মুসলমানের অন্তর শুকিয়ে গেছে। মানুষেরা পেরেশান হয়েছে আর এই পেরেশানিটা বৈধ। কেননা, এক মুসলিম দেশে নিষ্ঠুরতা ও সহিংসতার সঙ্গে আক্রমণ করা হচ্ছে আর পুরো বিশ্ব তামাশা দেখছে এবং কোনো মুসলিম দেশ তার সাহায্যে এগিয়ে আসছে না। এই ঘটনার কারণে পুরো উন্মতে মুসলিমার মধ্যে একটা অস্থিরতা, একটা ব্যথা, একটা আফসোস, এবং একটা কষ্ট সৃষ্টি হয়েছে।
আরো পড়ুন: আল্লাহর পাকের নিয়ামত নিয়ে ভাবুন
কুরআনুল কারিমের বাণী এবং এর ওপর আমল ছেড়ে দেওয়ার ফলাফল
কিন্তু এই কথা স্মরণ রাখুন যে, আল্লাহ তাআলা এই দুনিয়াকে আলমে আসবাব হিসেবে বানিয়েছেন। তিনি এই দুনিয়াতে আমাদের ওপর কিছু কাজ ফরজ করেছেন এবং এই দুনিয়াতে এই নিয়ম বানিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি যেরকম আসবাব গ্রহণ করবে আল্লাহ তাআলা তাকে ওরকমই ফলাফল দান করবেন। শতাব্দী ধরে আমাদের এই অবস্থা যে, আমরা কুরআনুল কারিমের ইরশাদকে পিছনে ফেলে রেখেছি। কুরআনুল কারিমের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইরশাদ হলো যে-
তোমরা কাফিরদের মোকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সদাসজ্জিত অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে যা দ্বারা আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকেভীত করবে।
[ সুরা আনফাল, আয়াত: ৬০ ]
অর্থাৎ, তোমরা যত বেশি নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করতে পারো এবং শক্তি অর্জন করতে পারো, তা অর্জন করো। আজ থেকে ১৪ শত বছর পূর্বে এর মাধ্যমে মুসলমানদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে যে, তোমরা এরকম শক্তি অর্জন করো, যার মাধ্যমে তোমরা আল্লাহর দুশমনদের ওপর এবং নিজেদের দুশমনদের ওপর ভীতি সঞ্চার করতে পারো। এই হুকুমের দাবি এটা ছিল যে, পুরো উম্মতে মুসলিমা যেখানেই থাকুক নিজে নিজেকে শক্তিশালী বানানোর পুরোপুরি চেষ্টা করবে। প্রতিরোধের দিক থেকে, সরঞ্জামাদির দিক থেকে এবং অর্থনীতির দিক থেকে নিজেদেরকে শক্তিশালী করবে।
মুসলমানগণ সরঞ্জামাদির মাধ্যমে সমৃদ্ধশীল
কিন্তু সমষ্টিগতভাবে যদি উম্মতে মুসলিমার ওপর দৃষ্টি দেওয়া হয়, তাহলে এটা দেখা যাবে যে, মুসলমানগণ নিজেরা নিজেদেরকে মজবুত বানানোর পরিবর্তে নিজেদের সমস্ত ভাগ্যের বাগডোর অন্যের হাতে দিয়ে দিয়েছে। আজ মুসলমানদের সংখ্যা এত বেশি যে, ভূপৃষ্ঠের ইতিহাসে এত বেশি সংখ্যা এর পূর্বে কখনও হয়নি। বর্তমানে মুসলমানদের নিকট এত সরঞ্জামাদি আছে ইতিহাসে এর পূর্বে এত সরঞ্জামাদি কখনও মুসলমানদের নিকট ছিল না। বর্তমানে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে এত বেশি ধন-সম্পদ দান করেছেন ইতিহাসে এর পূর্বে এত ধন-সম্পদ কখনও তাদের নিকট ছিল না। দুনিয়ার বড় বড় সরঞ্জামাদি সৃষ্টি করা আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের অধীনে দান করেছেন। তেল এখান থেকে বের হয়, গ্যাস এখান থেকে বের হয়, স্বর্ণ এখান থেকে বের হয় এবং আল্লাহ তাআলা ভালো মানবতার যোগ্যতাসমূহ এখানে দান করেছেন। পুরো পৃথিবীর নকশা উঠিয়ে যদি দেখা হয় তাহলে এটা দেখা যাবে যে, পুরো পৃথিবীর রুহ মুসলমানদের নিকট।
আত্মস্বার্থকে প্রথমে রাখার পরিণতি
মরক্কো থেকে নিয়ে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ইসলামি রাষ্ট্রের ধারাবাহিকতা এমন যেন একটা শিকলের মতো। যেখানে মুসলিম দেশ পরস্পর মিলে আছে। মাঝে শুধুমাত্র দুটি দেশ প্রতিবন্ধক আছে। একটা ইসরাইল আরেকটা হলো ভারত। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ রাজপথ মুসলমানদের দখলে আছে। সুইজ নদী তাদের কাছে আছে। তাদের কাছে বসফরাস প্রণালি রয়েছে। এডেন উপসাগর তাদের কাছে রয়েছে। যদি মুসলমানগণ একত্রিত হয়ে নিজেদের এই শক্তি ব্যবহার করে তাহলে অমুসলিমদের শ্বাস রুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু মুসলমানদের অবস্থা হলো যে, এই সমস্ত সরঞ্জামাদি থেকে উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের নিজস্বার্থ নিয়ে চিন্তা করে। নিজের আত্মস্বার্থের পরিণতি এই হলো যে, ওই দেশসমূহ যেখানে স্বর্ণের ছড়াছড়ি রয়েছে, যেখানে তেলের প্রস্রবণ সৃষ্টি হচ্ছে, তারা নিজেদের জিন্দেগির ভরসা অন্যান্য রাষ্ট্রের থেকে আমদানিকৃত সরঞ্জামাদির ওপর রেখেছে। তাদের নিজেদের দেশে কোনো কিছুই সৃষ্টি হয় না। তাদের দেশগুলোতে এরকম কোনো ব্যক্তিও প্রস্তুত করা হয় না, যারা এই যুগ অনুযায়ী সরঞ্জামাদি তৈরি করতে পারে এবং যুগ উপযোগী অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করতে পারে।
আমরা স্বার্থপরতায় নিপতিত
এসব কিছু এজন্য হচ্ছে যে, এই সমস্ত ধন-ভান্ডারের ওপর এবং সমস্ত সরঞ্জামাদির ওপর আমাদের স্বার্থপরতার ভূত চেপে বসেছে। প্রত্যেক মানুষ এটা চায় যে, আমার টাকাপয়সা দরকার। তাই বৈধ পন্থায় হোক বা হারাম পন্থায় হোক। সাময়িকভাবে আমি খুশি হয়ে যাই, সাময়িকভাবে আমার কাজ হয়ে যায়, সাময়িকভাবে আমার শান্তি অর্জন হয়ে যায়। যদিও এর জন্য আমাকে দেশ ও জাতিকে বাজি রাখতে হয়। যদিও এর জন্য আমার পুরো ধর্ম বিক্রি করতে হয়। কিন্তু আমি কিভাবে আমার ভাগ্য সোজা করব? এই হলো পরিবেশ, যার মধ্যে আমরা সকলেই জীবন অতিবাহিত করছি। শাসক থেকে নিয়ে সাধারণ পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তিই এই রোগে নিপতিত।
আরো পড়ুন: উহুদের দিন রাসুলের পরামর্শ সর্ম্পকে আলোচনা
আমাদের দেশে দুর্নীতি
দুর্নীতি নিয়ে আজ সবাই কাঁদছে। প্রত্যেক ব্যক্তি এটা বলে যে, হুকুমতের যেকোনো কার্যালয়ে যাও, ওই সময় পর্যন্ত কাজ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত পয়সা না খাওয়ানো হবে। কার্যালয়ে লোকেরা হারাম খাওয়ার জন্য মুখ খুলে বসে আছে। এই অভিযোগ প্রত্যেক ব্যক্তিই করছে। কিন্তু যখন তার সুযোগ এসে যায় তখন সেও নিজের মুখ খোলা ছাড়া থাকে না। সে এর চেয়ে বেশি ঘুষ গ্রহণ করে, যে পরিমাণ ঘুষ অন্যদেরকে দেওয়ার অভিযোগ করেছিল। সে অন্যের চেয়ে বেশি দুর্নীতি প্রদর্শন করে, মিথ্যা সার্টিফিকেট বানিয়ে দেয়, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, এইসব কাজ আমাদের দেশে এবং আমাদের সমাজে ঘটছে।
দুনিয়াতে সফলতার জন্য মেহনত শর্ত
নিঃসন্দেহে এই দুনিয়া আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য বানিয়েছেন। কিন্তু এই দুনিয়া এজন্য বানিয়েছেন যে, এর মধ্যে মেহনত এবং চেষ্টা করে হালাল এবং জায়েজ পদ্ধতিতে উপার্জন করো। তাঁর উপকরণসমূহ নিজের কল্যাণের জন্য এবং উম্মতের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করো। এই দুনিয়া আল্লাহ তাআলা এজন্য বানাননি যে, প্রত্যেক মানুষ অন্যকে ধোঁকা দিয়ে ও চক্রান্ত করে ধন-সম্পদ উপার্জন করবে, অন্যের ওপর ডাকাতি করবে এবং স্বীয় মানিব্যাগ বোঝাই করে দেশ ও জাতিকে ভুলে যাবে। বর্তমানে যেহেতু মুসলমানেরা এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। এজন্য সব জায়গায় তাদেরকে পেটানো হচ্ছে। দুশমনের কাছে কি অভিযোগ করবে? দুশমনের কাজ তো এটাই যে. সে সর্বদা আমাদেরকে ধ্বংস করবে। অভিযোগ আমাদের নিজেদের ওপর যে, আমরা নিজেরা নিজেদেরকে এরকম বানিয়েছি যে, দুনিয়াতে যে জাতি চাইবে এসে আমাদের ওপর ডাকাতি করবে এবং আনন্দ উল্লাস করে এখান থেকে চলে যাবে।
আল্লাহ তাআলার একটি মূলনীতি
স্মরণ রাখুন। এই অবস্থা ওই সময় পর্যন্ত পরিবর্তন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিজেরা নিজেদেরকে পরিবর্তন না করব। কুরআনুল কারিমে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে-
আল্লাহ তাআলা কোনো জাতির অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে জাতি নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত না হয়।
[ সুরা বাদ, আয়াত :১১ ]
এটা কুরআনুল কারিমের বাণী, যা আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে বলে দেওয়া হয়েছে যে, যদি তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে না পারো, তাহলে তোমাদের অবস্থাও পরিবর্তন হবে না। যদি তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে মার খাও, তাহলে তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মার খাবে যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের কৃতকর্মকে না ছাড়বে।
আমাদের দুআ কেন কবুল হচ্ছে না
বর্তমানে মানুষেরা এটা বলে যে, আল্লাহ তাআলার কাছে এত দুআ করছি, এত চাইতেছি কিন্তু আমাদের দুআগুলো কবুল হচ্ছে না। আমাদের বিজয় আসছে না। আমরা দুশমনদের ওপর বিজয় লাভ করতে পারছি না। এর কারণ কি? এ পর্যন্ত যে, মানুষের বিশ্বাস ভেঙে যাচ্ছে। মানুষের অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের সাহায্য কেন করছেন না? আমাদের সাহায্য কেন করছেন না? কিন্তু যেমন আমি পূর্বে আরজ করেছিলাম যে, আল্লাহ তাআলা এই দুনিয়াকে আলমে আসবাব হিসেবে বানিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত না হবে, আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসুলের আওয়াজের ওপর কান ধরার জন্য প্রস্তুত না হবে, বরং যেখানে তোমাদের চার পয়সার ফায়দা হবে সেখানে তোমরা আল্লাহকে ভুলে যাবে এবং তাঁর রাসুলকেও ভুলে যাবে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তোমাদের সাহায্য কেন করবেন? কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে যে-
অর্থাৎ, তারা আল্লাহ তাআলাকে ভুলে গিয়েছে। আল্লাহ তাআলাও তাদেরকে ভুলে গিয়েছেন।
[ সুরা তাওবা, আয়াত: ৬৭ ]
আল্লাহ তাআলাকে ভুলে যাওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে, তারা আল্লাহ তাআলার আহকামকে ছেড়ে দিয়েছে।
আমরা সম্পূর্ণ দ্বীনের ওপর আমল করছি না
সাধারণত মানুষের মনে এই ধারণা আসে যে, আমি আল্লাহ তাআলাকে কিভাবে ভুলেছি? আল্লাহ তাআলা আমাকে আদেশ করেছেন যে, নামাজ পড়ো! আমরা নামাজ পড়ছি। আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন যে, জুমআর নামাজের জন্য আসো। আমরা জুমআর নামাজের জন্য আসছি। আল্লাহ তাআলার হুকুম ছিল যে, রমজানের রোজল রাখো! আমরা রমজানের রোজা রাখছি। অতএব, আমরা আল্লাহ তাআলাকে ভুলিনি। মূল কথা হলো মানুষেরা শুধুমাত্র নামাজ পড়া, রোজা রাখাকে দ্বীন মনে করেছে। জাকাত দেওয়া, হজ করা এবং উমরা করাকে দ্বীন মনে করে নিয়েছে। অথচ, দ্বীনের অনেকগুলো শাখা আছে। এর মধ্যে থেকে মুআমালাত একটি শাখা। এর মধ্যে থেকে মুআশারা একটি। এর মধ্যে থেকে আখলাক একটি। এ-সবগুলো দ্বীনের শাখা। এখন আমরা নামাজ তো পড়ে নিয়েছি, রোজা তো রেখে নিয়েছি, ভালোভাবে ওমরা করেছি। কিন্তু যখন আল্লাহ তাআলার হুকুমের সামনে নিজেদের স্বার্থকে কুরবান করার সময় আসে, তখন ওখান থেকে সরে যাই এবং বিভিন্ন তাবিল করা শুরু করি যে, বর্তমানে সমস্ত লোকেরা এরকম করছে এবং অবস্থা এমন হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আজ আমরা আল্লাহ তাআলার আহকামগুলোকে ভুলে গিয়েছি। বিশেষ করে নিজেদের সামাজিক জীবনে, নিজেদের ব্যবসায়িক জীবনে, চারিত্রিক জীবনে, বাজনৈতিক জীবনে ইসলামকে এবং ইসলামের বিধি বিধানকে ভুলে গিয়েছি।
আমরা শত্রুদের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে রয়েছি
এর একটি শাখা হলো যে, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আদেশ করেছিলেন যে, নিজেদের জন্য শক্তি সঞ্চার করো, কিন্তু আমরা এই শক্তি সঞ্চার করিনি। এবং এই শক্তি কিভাবে অর্জন হয়? যখন আমাদের সমস্ত উপকরণ ঘুষ হিসেবে হচ্ছে, দুর্নীতি হিসেবে হচ্ছে এবং এর ফলে সর্বদা আমরা দুশমনদের সামনে ভিক্ষার পেয়ালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। তাদের কাছে চাইতেছি যে, আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদেরকে সাহায্য করুন। এখন যদি ওই শত্রুরা আমাদের মারে অথবা আমাদের ওপর শাসন কায়েম করে, তাহলে এব অভিযোগ কেন করি? কেননা, আমরা নিজেরা নিজেদেরকে তাদের মুখাপেক্ষী বানিয়ে দিয়েছি। আমরা নিজেদের অবস্থা এরকম বানিয়ে রেখেছি যে, এর ফলে আমাদের জীবন তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে। অতএব, তাদের কাছে অভিযোগের কি আছে। অভিযোগ তো নিজেদের কাছে যে, আমরা নিজেরা নিজেদেরকে অপদস্থ করেছি। যদি আজও আমাদের পাকিস্তানের মতো দেশ উপকরণগুলোর ঠিক ঠিক ভাবে, আমানতদারি ও দ্বীনদারির সঙ্গে ব্যবহার করত এবং আমরা এমন প্রতিজ্ঞা করে নিতান যে, আমরা আমাদের ক্ষমতা অনুযায়ী পা বাড়াব এবং আমরা আমাদের সরঞ্জামাদির মধ্যে থেকে কাজ করব এবং নিজেদের উপকরণের সঠিক ব্যবহার করব, তাহলে আমাদের ভিক্ষার পেয়ালা নিয়ে অন্যের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ত না। এবং আমরা নিজেরাই যথেষ্ট হয়ে যেতাম। নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারতাম, নিজেদের শক্তি একত্রিত করতে পারতাম। কিন্তু এই দেশে ঘুষ এবং দুর্নীতি আমাদের জীবনযাত্রাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
আরো পড়ুন: ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন ও তার ফলাফল
এই ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন
মোটকথা, এই যা কিছু হচ্ছে (আমেরিকা ইরাকের ওপর আক্রমণ করে সেখানের শাসন ব্যবস্থাকে ক্ষমতার মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং নিজেরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে) এব ওপর আক্ষেপ নিজের জায়গায় ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের এই ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি। সেই শিক্ষা হলো যে, আমাদের মধ্য থেকে প্রত্যেক ব্যক্তি এ সংকল্প করবে যে, আজকের পরে কোনো হারাম লোকমা আমাদের পেটে যাবে না, কোনো হারাম পয়সা আমাদের ঘরে আসবে না, ঘুষের পয়সা আসবে না, ধোঁকার পয়সা আসবে না, মিথ্যার পয়সা আসবে না, সুদের পয়সা আসবে না। ঘরে যে পয়সা আসবে সেটা হালাল এবং মেহনত ও চেষ্টা পরিশ্রমের পয়সা হতে হবে। আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করে আপনাদেরকে বলতে পারি যে, যে দিন জাতি এই সংকল্প করবে, তখন থেকে কোনো দুশমন তাদের ওপর বিজয় লাভ করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
ব্যক্তির সংস্কারের মাধ্যমে সমাজের সংস্কার হয়
মানুষেরা এই আপত্তি করে যে, যখন পুরো সমাজব্যবস্থা খারাপ। তখন যদি আমরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন করে নেই, তাহলে আমরা একা পুরো সমাজব্যবস্থাকে কিভাবে পরিবর্তন করব? একা কিই-বা পরিবর্তন করতে পারব? আমাদের পরিবর্তনের কারণে সমাজব্যবস্থায় কি প্রভাব পড়বে? স্মরণ রাখুন। এটা একটা শয়তানি ধোঁকা। যদি প্রত্যেক ব্যক্তি এমন চিন্তা করে, তাহলে কখনও সংস্কার হবে না। সংস্কার এভাবে হয় যে, এক ব্যক্তি নিজের জীবনকে ঠিক করবে। এর ফলে কমপক্ষে দুনিয়া থেকে একটা খারাবি দূর হয়ে যাবে। যখন একটা খারাবি দূর হলো, তখন আশা করা যায় একটা বাতি প্রজ্বলিত হলো আর আল্লাহ তাআলার সুন্নাত হলো যে, যখন একটা চেরাগ প্রজ্বলিত হয় তখন এই চেরাগের মাধ্যমে দ্বিতীয় আরেকটি চেরাগ প্রজ্বলিত হয় এবং দ্বিতীয় চেরাগ থেকে তৃতীয় চেরাগ প্রজ্বলিত হয়। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে চতুর্দিককে আলোক উজ্জ্বল করে দেন। মোটকথা, একদিকে তো এই হলো যে, প্রত্যেক মানুষ নিজের দিকে লক্ষ রাখবে এবং এই সংকল্প করবে যে, আমি নিজের জীবনে আল্লাহ তাআলার হুকুমের আনুগত্য করব। আল্লাহ তাআলার এমন নাফরমানি করব না. যার মাধ্যমে পুরো সমাজ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ কোনো দর্নীতি করব না এবং কোনো হারাম পয়সা আমার ঘরে আসবে না। অন্যদিকে এই দেশের উপকরণগুলোর সঠিক ব্যবহার করবে, তখন এই দেশেও উন্নতি আদি হবে। রাজেল ক্ষমতা এসে যাব্যে যখন দেশে ক্ষমতা এসে যাবে তখন কোনো দুপমদ এই দুঃসাহস করবে না যে, সে এখানে কোনো কুদৃষ্টি দিবে।
আমেরিকার কাপুরুষতা
আপনারা দেখছেন যে. এত বড় সুপার পাওয়ার (আমেরিকা) যাব ক্ষমতা এবং শক্তি পুরো দুনিয়ায় ছেত্রে আহে। তারাও নিজেদের বাহাদুবি প্রদর্শনের জন্য নিবস্ত্র মুসলমানদের কাছে এসেছে। আফগানিস্তান, যাদের কাছে কোনো জঙ্গি বিমান ছিল না এবং নতুন কোনো অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল না, তাদের কাছে সুশৃঙ্খল কোনো সৈন্যবাহিনী ছিল না অথবা ওই দেশ (ইরাক) যেখানে বছরের পর বছর পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের বিধি-নিলে আরোপ ছিল। তারা ওষুরের এক ফোঁটাও বাহির থেকে আনাতে পারত না। বাদের বিমানগুলোকে আকাশে উঠতে বাধা দেওয়া হতো, তাদের ওপর নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছে। আসেবিকা একাকী আক্রমণ করেনি বরং ব্রিটেন এবং অন্যান্য সম্মিলিত রাষ্ট্রের সৈন্যবাহিনীরা সাথে আক্রমণ করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া) বিদ্যমান ছিল, ওই সময় পর্যন্ত তাকে কোনো দেশ আক্রমণ করার দুঃসাহস দেলায়নি। কিন্তু যখন তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী শেষ হয়ে গেল এবং নিবস্তু মুসলমানদের কাছে আসলো তখন তাদের ওপর আক্রমণ করল এবং তাদের ওপর নিজেদের বাহাদুরি পরিদর্শন করার ইচ্ছা জাগ্রত হলো।
এরকম আক্রমণ কতদিন পর্যন্ত হবে
অতএব, বারক্ষণ পর্যন্ত উন্মতে মুসলিমা নিজেরা নিজেদেরকে এরকম প্রতিদ্বন্দ্বী না বানাবে যে, দুশমন। যখন তার ওপর আক্রমণ করার ইচ্ছা করবে তখন তাদের কম্পন সৃষ্টি হয়ে নারে, ওই সময় পর্যন্ত এরকমই হতে থাকবে যে, কাল আফগানিস্তানের ওপর আক্রমণ করেছে এবং আজ ইরাকের ওপর আক্রমণ করেছে এবং আগামীতে অন্য আরেকটি মুসলিম দেশের ওপর আক্রমণ করবে। কিন্তু যদি উম্মতে মুসলিমা কুরআনুল কারিদের এই হুকুমের ওপর আমল করে যে-
অর্থাৎ, তোমরা যত শক্তি অর্জন করতে পারো, তা করো।
[সুরা আনফাল, আয়াত :৬০]
তাহলে ইনশাআল্লাহ দুশমনেবা আমাদের ওপর খারাপ দৃষ্টি ফেলানোর দুঃসাহস করবে না। তার এ শক্তি এই দুর্নীতির ময়দানে অর্জন করতে পারবে না। এই শক্তি ওই সময় অর্জন হবে, যখন আমরা নিজেরা নিজেদেরকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করব এবং দুর্নীতি শেষ করে দেবো।
অন্তরকে সমস্ত রোগ থেকে পবিত্র করো
এবং এ সমস্ত খারাবি এজন্য সৃষ্টি হচ্ছে যে, আমাদের অন্তরে ধনসম্পদের মুহাব্বত বসে গেছে। অন্তরে দুনিয়ার চাকচিক্য ও সৌন্দর্যের মুহাব্বত বসে গেছে। অন্তরে স্বার্থপরতার মুহাব্বত বসে গেছে। এই মুহাব্বত আমাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
কুরআনুল কারিমের বক্তব্য হলো অর্থাৎ, সফলতা অর্জনকারী মুমিনেরা নিজেরা নিজেদের এ সমস্ত রোগ থেকে পবিত্র করে। যদি তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে এসমস্ত রোগ থেকে পবিত্র বানাও, তাহলে তোমরাও সফলতা অর্জন করবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এসমস্ত কথাবার্তার ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url