আল্লাহ তাআলার কাছে মুহাব্বত কামনা করো
আল্লাহ তাআলার কাছে মুহাব্বত কামনা করো
গত কয়েকদিন যাবৎ আল্লাহ তাআলার মুহাব্বত এবং তার আসবাবের বয়ান চলছে। এই মালফুজে হজরত থানভি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ তাআলার মুহাব্বত হাসিল করার পাঁচটি আসবাব বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে থেকে চারটা আসবাবের বয়ান বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এর ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। সামনে পঞ্চম সবাব এটা বর্ণনা করেছেন যে, 'আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করা।' এর দুইটা উদ্দেশ্য হতে পারে এক উদ্দেশ্য হলো, যা গতকালকে আরজ করেছিলাম যে-সর্বদা আল্লাহ তাআলার কাছে কিছু না কিছু চাইবে। চলতে ফিরতে মনে মনে আল্লাহ তাআলার কাছে চাইবে। উঠতে বসতে তাঁর কাছে চাইবে। এর দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো মুহাব্বতও তাঁর কাছেই চাও। এবং বলো যে, হে আল্লাহ, আমরা আপনার মুহাব্বতের মুখাপেক্ষী। আপনি আপনার মুহাব্বত আমাদের দান করুন। সুতরাং নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই এই দুআ করেছেন-
হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আপনার মুহাব্বত কামনা করছি যে, আমার অন্তরে আপনার মুহাব্বত সৃষ্টি করে দিন এবং যে মুহাব্বত আপনার কাছে আমাকে উপকৃত করবে ওই মুহাব্বত দান করুন। [৪৩] নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য আরেকটি দুআ পড়তেন
হে আল্লাহ, দুনিয়ার সমস্ত জিনিস থেকে আপনার মুহাব্বত আমার কাছে বেশি প্রিয় বানিয়ে দিন।
আল্লাহ তাআলার মুহাব্বত এই তিনটি জিনিস থেকে বেশি
অন্য আরেকটি দুআয় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
হে আল্লাহ, আপনার মুহাব্বত আমার জানের থেকে বেশি প্রিয় বানিয়ে দিন। আমার পরিবারের থেকে বেশি প্রিয় বানিয়ে দিন। আমার ঠান্ডা পানির চেয়ে বেশি প্রিয় বানিয়ে দিন। [82]
নবিজির কাছে ঠাণ্ডা পানি অনেক প্রিয় ছিল
এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঠাণ্ডা পানির প্রতি মুহাব্বত এবং আগ্রহ অনুভব করা যায়। সুতরাং নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঠাণ্ডা পানি এত প্রিয় ছিল যে, 'বিরে গরস' মদিনা মুনাওয়ারার দুই মাইল দূরে একটি কুয়া ছিল। সেখান থেকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য পানি নিয়ে আসা হতো। সুতরাং অন্য কোনো জিনিসের ব্যাপারে হাদিসের কিতাবের মধ্যে এরকম পাওয়া যায় না যে, বাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অমুক খাদ্য বেশি প্রিয় ছিল এবং অমুখ খাদ্য অমুক জায়গা থেকে এনে দেওয়া হতো। শুধুমাত্র পানি সম্পর্কে এই বর্ণনা পাওয়া যায় যে, 'বিরে গরস' থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য পানি নিয়ে আসা হতো। এ কারণে যে, এই কুয়ার পানি অন্যান্য কুয়ার তুলনায় বেশি ঠাণ্ডা এবং বেশি মিষ্টি ছিল। বাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ওসিয়ত করেছিলেন যে, ওফাতের পরে যেন আমার গোসল 'বিরে গরস' এর পানি দ্বারা দেওয়া হয়। সুতরাং নবিজিকে সে পানি দ্বারা গোসল দেওয়া হয়েছে। ঠান্ডা পানি নবিজির এত পছন্দ ছিল। এ কারণে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুয করেছেন যে, হে আল্লাহ! আপনার সত্তাকে আমার জানের চেয়ে বেশি প্রিয় বানিয়ে দিন। আমার পরিবারের চেয়ে বেশি প্রিয় বানিয়ে দিন এবং ঠাণ্ডা পানির চেয়ে বেশি প্রিয় বানিয়ে দিন। অতএব, আল্লাহ তাআলার কাছে চাও যে, হে আল্লাহ! আপনার মুহাব্বাত দান করুন এবং আপনার মুহাব্বতকে সমস্ত মুহাব্বতের ওপর প্রাধান্য দিয়ে দিন।
ঝুলি এবং পেয়ালাও তাঁর কাছে চাও
সম্মানিত পিতাজি এই ঘটনা শোনাতেন যে, একবার হজরত থানভি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মজলিসে এই বিষয়ে আলোচনা করছিলেন যে, প্রত্যেক জিনিস আল্লাহ তাআলার কাছে থেকেই চাওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার কমতি করা হয় না। এই বিষয়টাই কোনো কবি তার কবিতাতে বলেছেন যে-
হজরত বলেন যে, চাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি থেকে যায়। নচেত যদি মানুষ চায় তাহলে আল্লাহ তাআলার কাছে কোনো জিনিসের কমতি নেই। অতএব, প্রিয় ভাই! আল্লাহ তাআলার সামনে ঝুলি রাখা দরকার। এরপরে আল্লাহ তাআলা এই বুলিকে ভরে দিবেন। হজরত মাজজুব সাহেব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রশ্ন করেছেন যে, হজরত, যদি কারও কাছে ঝুলি না থাকে, তাহলে সে কি করবে? তখন হজরত বললেন যে, বুলিও তাঁর কাছেই চাইবে এবং এটা বলবে যে, হে আল্লাহ, আমার কাছে তো বুলিও নেই আপনার দয়া অনুগ্রহে বুলিও দান করুন। আমার চাওয়ার যোগ্যতা নেই, আমাকে চাওয়ার যোগ্যতা দান করুন।
চাওয়ার পদ্ধতিও তাঁর কাছেই চাও
সুতরাং এক দুআর মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে চেয়েছেন যে
হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ভালো জিনিস কামনা করছি। অর্থাৎ, আমি আপনার কাছে উত্তম সওয়াল করছি, হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এটা চাইতেছি যে, আমাকে ভালো দুআ করার তাওফিক দান করুন এবং ভালোভাবে আমাকে কবুল করুন। অতএব, বুলিও তাঁর কাছেই চাও।
উত্তম দুআ চাওয়ার তাওফিক তাঁর কাছেই চাও
যখন আপনি কোনো দুআ কবুল হওয়ার মাকামে পৌঁছবেন অথবা দুআ কবুল হওয়ার সুযোগ আপনার হয়ে যাবে, যার মধ্যে দুআ কবুল হওয়ার বেশি আশা করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ইফতারের সময় অথবা সেহরির সময় অথবা তাহাজ্জুদের সময় অথবা জুমআর দিন অথবা বাইতুল্লাহ শরিফের ওপর প্রথম দৃষ্টি পড়ার সময় অথবা আপনি তাওয়াফ করছেন ইত্যাদি এরকম জায়গায় দুআ করার পূর্বে এটা চান যে, হে আল্লাহ! আমাকে উত্তম দুআ করার তাওফিক দান করুন। অর্থাৎ, এরকম দুআ করব যা আমার দ্বীনি এবং দুনিয়াবি উপকারে আসে। এরপরে বলবে, হে আল্লাহ, এটাকে আমার জন্য কবুল করুন। অতএব, এই সমস্ত জায়গায় যেখানে দুআ কবুল হয় উত্তম দুআ করার তাওফিক আল্লাহ তাআলার কাছেই চাও।
বাইতুল্লাহর ওপর প্রথম দৃষ্টি পড়ার সময় দুআ
যখন মানুষ প্রথমে বাইতুল্লাহ শরিফকে দেখে, তখন মানুষের বুঝে আসে না যে, এখন সুযোগ এসে গেছে। এই সুযোগে কি চাইব? তখন আল্লাহর বান্দাদের আশ্চর্য ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। সুতরাং একবার ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির কাছে কেউ জিজ্ঞাসা করল যে, ওই সময় কি চাইব? ইমাম সাহেব বললেন যে, এমন দুআ করো যে, আমি যেন 'মুস্তাজাবুত-দাওয়াত' হয়ে যাই। অর্থাৎ, সারাজীবন আমার সমস্ত দুআ কবুল করুন। আল্লাহ তাআলা ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির অন্তরে এই বিষয়টি ঢেলে দিয়েছিলেন। মোটকথা, চাওয়াটাও একটা জ্ঞান এবং একটা ফন, যা প্রত্যেকের বুঝে আসে না। আমি যখন হারামাইনে যাই এবং বাইতুল্লাহর ওপর দৃষ্টি পড়ে তখন আমি বলি, হে আল্লাহ, আমার তো বুঝে আসছে না। হে আল্লাহ, যে দুআ আপনার কাছে আমার জন্য বেশি উত্তম, ওই দুআ আমার অন্তরে ঢেলে দিন এবং সেভাবে দুআ করার তাওফিক দান করুন। এ বিষয়টাকে হজরতওয়ালা বলেছেন যে, ঝুলিটাও তাঁর কাছেই চাও। এভাবে মুহাব্বতও তাঁর কাছে চাও যে, হে আল্লাহ, আপনার মুহাব্বত আমার অন্তরে সৃষ্টি করে দিন এবং এই মুহাব্বতকে সমস্ত মুহাব্বতের ওপর প্রাধান্য দিয়ে দিন।
আসবাবে মুহাব্বতের সারমর্ম
মোটকথা, হজরতওয়ালা আসবাবে মুহাব্বতের ক্ষেত্রে ছয়টি বিষয় আলোচনা করেছেন।
(১) বেশি বেশি জিকির করা।
(২) আল্লাহ তাআলার নিয়ামতরাজিকে স্মরণ করা।
(৩) নিজের অবস্থান এবং হাকিকতকে কল্পনা করা।
(৪) কোনো আল্লাহওয়ালার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা।
(৫) আনুগত্যের ওপর অবিচল থাকা।
(৬) আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করা।
এই ছয়টি বিষয়ের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত হয় এবং আল্লাহ তাআলার মুহাব্বত অন্তরে গেঁথে যায়। আল্লাহ তাআলা স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে এই সমস্ত বিষয়গুলো আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুন।
মুহাব্বতের বিশেষ কোনো দরজা চেয়ো না
সামনে হজরতওয়ালার সংস্কারমূলক কথা শুনুন। তিনি বলেছেন যে, এই ব্যবস্থাপনায় তো কোনো ভুল নেই। শুধুমাত্র একটি ভুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা সতর্ক করা প্রয়োজন। তা হলো 'নিজের জেহেনে মুহাব্বতের কোন দরজা খুঁজে তার অপেক্ষায় থাকা এটা একটা ভুল। অর্থাৎ, যে বিষয় এবং মুহাব্বত সৃষ্টি করার যে আসবাব বলা হয়েছে এর মধ্যে কোনো ভুল নেই। এই সবগুলো একেবারেই সহিহ। এগুলো গ্রহণযোগ্য এবং এগুলোর মাধ্যমে মুহাব্বত সৃষ্টি হবে, ইনশাআল্লাহ। কিন্তু ভুল এভাবে হয় যে, মুহাব্বতের বিশেষ কোনো দরজা নিজের জন্য নির্বাচন করে তার অপেক্ষায় থাকা যে, আমাকে মুহাব্বতের এই দরজা অর্জন হওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, মনে এই কল্পনা এসে গেল যে, হজরত জুনায়েদ বাগদাদি রহমতুল্লাহি আলাইহির যে মুহাববত অর্জন হয়েছে এটা আমার অর্জন হয়ে যাক অথবা হজরত ওয়ায়েজ করনি বহমতুল্লাহি আলাইহির যে মুহাব্বত অর্জন হয়েছিল সেটা আমার অর্জন হয়ে যাক এবং হজরত শাহ আব্দুল কাদের জিলানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির যে মুহাব্বত অর্জন হয়েছিল তা আমার অর্জন হয়ে যাক। কেমন যেন মুহাব্বতের এক বিশেষ দরজা খুঁজে নিজের জন্য নির্বাচন করে নিল যে, আমাকে এই দরজা অর্জন করতে হবে। এখন এই দরজার অপেক্ষায় বসে গেল। এরপরে যখন ওই দরজার মুহাব্বত অর্জন হলো না, তখন ওই ব্যক্তি হয়তো আল্লাহ তাআলার না-শোকর করতে থাকে অথবা মুহাব্বত সৃষ্টি করার আসবাব সঠিক হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করতে থাকে অথবা একেবারেই নিরাশ হয়ে যায়।
মুহাব্বত পাত্র অনুযায়ী দেওয়া হয়
এজন্য এই ফয়সালা করা যে, কোন স্তরের মুহাব্বত তোমার অর্জন হবে? এই ফয়সালা করার অধিকার তোমার নেই। এই ফয়সালা ওই সত্তাই করবেন, যিনি মুহাব্বত দান করবেন যে, তোমাদের কোন স্তরের মুহাব্বত দিতে হবে। যে স্তরের মুহাব্বত তোমাদের দেওয়া দরকার ওই স্তরের মুহাব্বতই তোমাদের জন্য উপকারী হবে।
পাত্র অনুযায়ী জিনিস দেওয়া হয়। তোমাদের পাত্র যেমন ওই পরিমাণ মুহাব্বত তোমাদেরকে দেওয়া হবে। অতএব, তোমাদের মুহাব্বতের একটা স্তর খুঁজে এটা বলা যে, এই স্তরের মুহাব্বত আমার অর্জন হওয়া উচিত। এটা চাওয়ার কোনো অধিকার তোমাদের নেই। কিন্তু মুহাব্বতের যে স্তর তোমাদের মিলবে ইনশাআল্লাহ তোমাদের জন্য সেটাই যথেষ্ট হবে। তবে শর্ত হলো যে, এই সমস্ত ব্যবস্থাপনার ওপর আমল করো।
অকৃতজ্ঞতা এবং নিরাশের শিকার হয়ে যাবে
অবস্থা এই হয় যে, আমরা একদিকে অনেক বুজুর্গের হিদায়াতের ওপর আমল করা শুরু করি এবং অন্যদিকে নিজের জন্য কোনো উঁচু স্তর নির্ধারণ করে নেই যে, এটা আমার গন্তব্য। আমাকে এই গন্তব্যে পৌঁছতে হবে। এই ব্যবস্থাপনার ওপর আমল শুরু করার পরে যখন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য অনেক দূরে মনে হয়, তখন এর ফল এই দাঁড়ায় যে, এখন পর্যন্ত যা কিছু অর্জন হয়েছে এগুলোর অমূল্যায়ন এবং অকৃতজ্ঞতা শুরু হয়ে যায়। যেহেতু কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য অর্জন হয়নি, এজন্য নিরাশ হয়ে যায়। এরপরে এই নিরাশের ফলে ওই আমলগুলোকে ছেড়ে দেয় এবং ব্যবস্থাপনা পরিত্যাগ করে। এজন্য হজরতওয়ালা বলেন যে, নিজের পক্ষ থেকে কোনো স্তর নির্ধারণ করো না। যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করো; তাহলে ইনশাআল্লাহ এর মাধ্যমে ফলাফল অবশ্যই পাওয়া যাবে। তাই ওই স্তরের ফল না হোক যা তোমরা নিজের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছ, তবে তোমাদের অনুযায়ী যতটুকু উপকারী এতটুকু অবশ্যই অর্জন হবে। কোনো কবি সুন্দরভাবে বলেছেন যে-
যখন এই রাস্তায় এসে গেলে তখন ইনশাআল্লাহ অবশ্যই সফল হবে। অতএব, এদিক ওদিক না দেখে যা কিছু তোমার অর্জন হয়েছে, এর ওপর শোকরিয়া আদায় করো এবং এই ব্যবস্থাপনায় লেগে থাক, তোমাদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।
আমাকে যা কিছু দান করেছেন আমার জন্য সেটাই উপযোগী
আমাদের হজরতওয়ালার একটি কবিতা বড় আশ্চর্য ধরনের এই কবিতাকে ওই ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত বুঝতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত এই বিষয়বস্তু তার সামনে না থাকবে যা আমি বয়ান করছি। তিনি বলেন যে-
অর্থাৎ, তাতে আমার কি লাভ? অন্যদের কি মিলেছে এবং কি মিলেনি, অন্যরা কি পেয়েছে এবং পায়নি? কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমাকে যা কিছু দান করেছেন আমার জন্য সেটাই উপযোগী এবং এটাই আমার অর্জন। অতএব, নিজের জন্য কোনো স্তর নির্ধারণ করা এরপরে সেটা না পাওয়ার কারণে অভিযোগ সৃষ্টি হওয়া, নিরাশ হওয়া এসব কিছুই ভুল। যখন ব্যবস্থাপনাগুলো সঠিক হবে তখন ইনশাআল্লাহ এর ফলও অবশ্যই প্রকাশিত হবে।
একটি চিঠি এবং হজরতওয়ালার উত্তর
একবার আমি হজরতওয়ালাকে চিঠি লিখলাম যে, অমুক কাজ আমার দ্বারা হচ্ছে না, অমুক কাজ আমার দ্বারা হচ্ছে না এবং যেই ব্যক্তির থেকে এই কাজ হয় না সে দুনিয়াতে আর কি কাজ করবে? হজরতওয়ালা এই শেষ ইবারতের ওপর দাগ টেনে লিখেছেন যে, 'তুমি কি নিজের কাছ থেকে অনেক বড় বিষয় প্রকাশিত হওয়ার আশা করছ?' অর্থাৎ, তোমার এই বক্তব্য, যার দ্বারা এই কাজ হতে পারে না। তার দ্বারা আর কি কাজ হবে? কেমন যেন নিজ সত্তা থেকে অনেক বড় কাজ সংগঠিত হওয়ার আশা করে বসে আছো যে, আমি তো এমন স্তরের ব্যক্তি। আমার থেকে এরকম বড় কাজ হওয়া উচিত। যেহেতু সেই কাজ হচ্ছে না এজন্য নিরাশ হয়ে গিয়েছি। মূলত এই উত্তরের মাধ্যমে এই সতর্ক করেছেন যে, বাস্তবিকপক্ষে অন্তরে এই খেয়াল সৃষ্টি হওয়ার আশা করা অহংকার। অর্থাৎ, নিজের জন্য মহান কাজ নির্ধারণ করে রাখা যে, এটা হওয়া দরকার এবং যখন সেটা না হয় তখন নিরাশ হয়ে যায়। অতএব, এই মনসার বাস্তবতা হলো অহংকার।
সারমর্ম
সারমর্ম হলো যে, মুহাব্বত অর্জনের যে ব্যবস্থাপনা বলে দেওয়া হয়েছে এর ওপর আমল করো এবং নিজের জন্য মুহাব্বতের কোনো স্তর নির্ধারণ করা যে, মুহাব্বতের এ স্তর পর্যন্ত আমি পৌঁছাব। এই ব্যবস্থাপনার ফলে মুহাব্বতের যেই দরজা অর্জন হয়, এটাই তোমার জন্য উত্তম হবে। তুমি এরই যোগ্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এই ব্যবস্থাপনার ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url