ইসলামি ব্যাংকের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ভিত্তিক ব্যাংকিং পদ্ধতিতে উদ্যোক্তা কিভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয় তা বলতে পারবেন।
ইসলামি ব্যাংকের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং-এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। একই বছর ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এরপর ১৯৮৭ সালে আল-বারাকা ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৫ সালে আরো দু'টি ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ দুটি ব্যাংক হলো সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিঃ ও আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংক লিঃ। এদেশে ইসলামি ব্যাংকের প্রাথমিক সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং ইসলামি ব্যাংকের সম্ভাবনা ও ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব উপলব্ধি করে প্রাইম ব্যাংকে একটি ইসলামি বুথ খোলা হয়েছে। এ বুথে লেনদেনের ক্ষেত্রে জনসাধারণের আগ্রহ উল্লেখ করার মত। বাংলাদেশে প্রথমে যারা ইসলামি ব্যাংকের যাত্রা শুরু করেন তাদের অভিজ্ঞতার অভাব ছিল, প্রশিক্ষিত জনশক্তি ও উপায় উপকরণের অভাব ছিল। তা সত্বেও গত দুই যুগের অধিক সময় ধরে বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং-এর অভিজ্ঞতায় সাফল্য ও সম্ভাবনার যে ইংঙ্গিত লক্ষ্য করা গেছে তাতে এ দাবি খুবই যুক্তিসঙ্গত যে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের সকল ব্যাংক ব্যবস্থাকেই ইসলামিকরণ করা উচিৎ। নিম্নে ইসলামি ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরা হল-
আরো পড়ুন: ইসলামি রাষ্ট্রের আয়ের উৎসসমূহ
১. সুদমুক্ত লেনদেনের পরিবেশ সৃষ্টি: ইসলামি ব্যাংকের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী সুদমুক্ত লেনদেনের স্বার্থে। আল্লাহ পাক সুদকে সম্পূর্ণভাবে হারাম করেছেন। এমতাবস্থায় কোন মুসলমান সুদভিত্তিক লেনদেন করতেই পারে না। কিন্তু ইসলামি ব্যাংকের অনুপস্থিতিতে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে বাধ্য হয়েই একজন মুসলমানকে সুদী ব্যাংকের সাথে লেনদেন করতে হয়। ইসলামি ব্যাংক এই দুর্বিসহ অবস্থা থেকে মুসলমানদের মুক্তি দেয় এবং সুদমুক্ত লেনদেনের সুযোগ তৈরী করে।
২. স্বল্পবিত্তের লোকদের বিনিয়োগ/সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দান: সুদ ভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সাধারণত সহায়ক জামানত ছাড়া ঋণ প্রদান করেনা। যার অর্থ হলো, যারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি অথবা কমপক্ষে জামানত দেয়ার মত যথেষ্ট স্থাবর সম্পত্তি আছে সেই-ই শুধু ঋণ পাওয়ার যোগ্য। এ ব্যবস্থায় স্বল্প বিত্তের মানুষ ঋণ পায়না। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেরও বেশীরভাগ মানুষ হয় বিত্তহীন নয়তো স্বল্পবিত্তের। ফলে সুদী ব্যাংকসমূহ থেকে তাদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ একেবারে নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য চাই জামানতবিহীন ঋণের নিশ্চয়তা। কেবল ইসলামি ব্যাংকই জামানতবিহীন সুদমুক্ত ঋণ/ লাভ-লোকসানে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগের নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম।
৩. উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান: সুদভিত্তিক ব্যাংকিং পদ্ধতিতে ঋণের মাধ্যমে শিল্প বা ব্যবসায়ে অর্থায়ন করা হলে যদি কোন কারণে লোকসান হয় তবে ব্যাংক সে লোকসানের দায় বহন করেনা। সম্পূর্ণ ক্ষতি বহন করতে হয় উদ্যোগী ঋণগ্রহীতা ব্যবসায়ী বা ফার্মকে। উদ্যোক্তা এক্ষেত্রে যুগপৎভাবে তিন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
এক. উদ্যোক্তা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় উদ্যোগ বা প্রয়াসের সুযোগ ব্যয় করে অর্থাৎ যে শ্রম বা প্রয়াস নিয়োজিত করার পর উদ্যোক্তা আলোচ্য লোকসানের সম্মুখীন হলেন তার সেই নিজস্ব শ্রম বা প্রয়াস অন্য কোন ফার্মের নিকট বিক্রি করলে অবশ্যই একটা দাম পেতেন। অন্য কথায়, উদ্যোক্তা অন্য কোথাও চাকুরী করলে প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট বেতন পেতেন কিন্তু সেই শ্রম লাভের আশায় নিজের প্রতিষ্ঠানে বিনা পারিশ্রমিকে বিনিয়োগ করেছেন। এখন যখন নিজের প্রতিষ্ঠানে লোকসান হলো, তখন উদ্যোক্তা না পেলেন লাভ না পেলেন বেতন।
দুই. আলোচ্যক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা তার শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব যে পরিমাণ মূলধন নিয়োগ করেছিলেন, লোকসান হওয়ার ফলে তার উপর প্রত্যাশিত মুনাফা তো পাচেছনই না উপরন্ত পুরা কারবারের ক্ষতি তাকেই বহন করতে হচেছ যার অর্থ তার স্বনিয়োজিত মূলধনের পরিমাণ কমে যাওয়া।
তিন. উদ্যোগ ও মূলধনের এই বিরাট ক্ষতির বোঝার উপর শাকের আঁটি হিসেবে এবার যোগ হয় সুদে অর্থলগ্নিকারী ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের সুদ বাবদ পাপ্য বিরাট অংকের টাকা যা কোন অবস্থাতেই মওকুফযোগ্য নয়।
বলা বাহুল্য, এ ধরনের ঋণদানব্যবস্থা নতুন পুরাতন সকল প্রকারের উদ্যোক্তাকেই নিরুৎসাহিত ও সর্বশান্ত করতে বাধ্য। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের জন্য এ ধরণের ঋণদানব্যবস্থা কোনক্রমেই উৎসাহব্যঞ্জক হতে পারেনা। একারণেই স্বাধীনতার তিন যুগের অধিক সময় পার হওয়ার পরও বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ অশিক্ষিত ও হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার যুবক শিল্পোদ্যোগ গ্রহণে এগিয়ে আসেনি। এরফলে একদিকে দেশের শিল্পায়ন ব্যহত হয়েছে অন্যদিকে অগণিত উদ্যমী কর্মপ্রার্থী যুবক হয়ে গেছে বেকার, যা তাদের মধ্যে জন্ম দিয়েছে মাত্মক হতাশা, আর এ সর্বব্যাপী হতাশাই তাদেরকে ঠেলে দিয়েছে সর্বনাশা নেশার কবলে কিংবা দাঁড় করিয়েছে রাস্তায় খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, মাস্তানী আর সন্ত্রাসের নিয়ামক হিসেবে।
ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থা এ চরম হতাশাব্যঞ্জক অবস্থা থেকে এ দেশে বাণিজ্যকে যেমন রক্ষা করতে পারে তেমনি হতাশাগ্রস্ত অথচ সম্ভাবনাময় এই বিরাট যুবসমাজকে দিতে পারে সম্মানজনক জীবিকা ও কাজের সন্ধান। কেননা ইসলামি ব্যাংকের মুদারাবা পদ্ধতিতে ব্যাংক যদি কোন উদ্যোগী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা পরিচালনা বা শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ প্রদান করে তবে প্রকৃত লোকসানের সবটাই বহন করবে ব্যাংক। বিশেষকরে স্বল্পবিত্তের জামানতবিহীন সৎ, যোগ্য ও উদ্যমী নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য এ যে কতবড় সুসংবাদ তা বুঝতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। কেউ ভাবতে পারেন যে, এ ব্যবস্থায় উদ্যোগী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকান্ডের মাধ্যমে লোকসান ডেকে আনতে পারে কিংবা হিসাবপত্রে অসাধুতার আশ্রয় নিয়ে প্রকৃত লাভকে লোকসান দেখিয়ে ব্যাংকের বারোটা বাজাতে পারে? এ ধারণা মোটেই যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবভিত্তিক নয়। কারণ-
প্রথমত: প্রকৃত লোকসানে উদ্যোক্তার দায় না থাকলেও প্রকৃতলাভে তার অবশ্যই অংশ রয়েছে। সুতরাং অবহেলার মাধ্যমে নিজের লভ্যাংশ খুইয়ে দেয়া স্বাভাবিক আচরণ নয়।
দ্বিতীয়ত: আধুনিক হিসাব পদ্ধতি এতই জটিল ও স্বপ্রমাণিত যে, প্রকৃত লাভকে লোকসানে রূপান্তরিত করা খুবই কঠিন, বলা যায় অসম্ভব ব্যাপার।
তৃতীয়ত: মুদারাবা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কারবার পরিচালনার মৌল নীতিমালা ও শর্তাবলীর বিষয়ে ইসলামি ব্যাংক ও মুদারিব ব্যক্তি বা সংগঠনের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি মুদারিব কর্তৃক যথাযথ অনুসৃত হচেছ কি-না তা তদারক করার জন্য ইসলামি ব্যাংক (ছাহেবে মাল) একটি মনিটরিং সেল গঠণ করে থাকে যার ফলে মুদারিবের পক্ষে চুক্তির শর্ত লংঘন করে বা এড়িয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে কারবারকে ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড় করানো খুব সহজ হবেনা। অন্যকথায়, উদ্যোক্তা কখনোই এককভাবে ব্যবসার ভাগ্য নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে না।
আরো পড়ুন: ইসলামি ব্যাংকের উৎপত্তি ও ক্রম বিকাশ
৪. অত্যাবশ্যকীয় উৎপাদন নিশ্চিত করা: সুদী ব্যবস্থায় উৎপাদকের পরিচালনা ব্যয়ের (operating cost) পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট আর্থিক ব্যয় (financial cost) ও থাকে। এ আর্থিক ব্যয় সাধারণত সুদের হারের সমান। ইসলামি বিনিয়োগ পদ্ধতিতে কোন নির্দিষ্ট ব্যয়ের বালাই নেই। যেমন, প্রচলিত ব্যবস্থায় সুদের হার যদি ১৫% হয়, তার অর্থ হচেছ উৎপাদককে সমুচচ বিন্দুতে পৌছার জন্য (break even point) তার উৎপাদন খরচের অতিরিক্ত কমপক্ষে ১৫% লাভ করতেই হবে। অন্যকথায় জাতীয় স্বার্থে একটি প্রকল্প যতই গুরুত্বপূর্ণ হোকনা কেন তা থেকে উপার্জনযোগ্য লাভের হার কমপক্ষে ১৫% না হলে সুদী ব্যবস্থায় সে প্রকল্পে বিনিয়োগের কোন সুযোগই নেই। বাংলাদেশের অনেকগুলি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী কেন জীবন রক্ষাকারী ঔষধের চেয়ে কেবল অধিক লাভের জন্য জীবন সাজানোর প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদানে অধিকমাত্রায় ঝুঁকে পড়ছে তার যথার্থ ব্যাখ্যা হচেছ এ সুদী লগ্নী ব্যবস্থা। ১৩ কোটি মানুষের এ বাংলাদেশে জীবন সাজানোর চেয়ে জীবন বাঁচানোর সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অনেক বেশী প্রয়োজন। বলাই বাহুল্য, ইসলামি ব্যাংকব্যবস্থাই এদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য কাংঙ্খিত সেই দ্রব্যাদির উৎপাদন নিশ্চিৎ করতে সক্ষম।
৫. দেউলিয়াত্বের হাত থেকে ব্যাংকিং সেক্টরকে বাঁচানো: ব্যাংকিং ব্যবসাকে বলা হয় পরের ধনে পোদ্দারি। সে কারণেই ব্যাংক ব্যবসা শতকরা একশত ভাগ বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। কোন ব্যাংকের উপর একবার মানুষের আস্থা বিনষ্ট হলে তা ফিরে পাওয়া খুবই কঠিন। আর কোন ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়ার অর্থ আমানতকারীদের চূড়ান্ত সর্বনাশ। সুদী ব্যাংকিং জগতে প্রায়শঃ এ দুর্ঘটনাটি ঘটছে। বাংলাদেশে বি.সি.আই এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বি.সি.আই.সি কেলেঙ্কারি এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে। এমনকি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত পুজিবাদী রাষ্ট্রে ও প্রায় প্রতি বছরই শতাধিক ব্যাংকে দেউলিয়ার ঘটনা ঘটে। অথচ গত প্রায় তিন যুগের মধ্যে সমগ্র পৃথিবীতে কোন ইসলামি ব্যাংক দেউলিয়া গ্রস্থ হয়নি। কারণ, ইসলামি ব্যাংকের গঠন কাঠামোতে এমন উপাদান সন্নিবেশিত আছে যার ফলে একটি প্রকৃত ইসলামি ব্যাংক কখনো দেউলিয়া হতে পারেনা। ইসলামি ব্যাংকের ধাক্কা সামলাবার ক্ষমতা (shock absorbing capacity) সুদী ব্যাংকের তুলনায় অনেক অনেক বেশী। সাময়িকভাবে কোন ইসলামি ব্যাংকের আর্থিক লোকসান হতেও পারে। কিন্তু যেহেতু- ইসলামি ব্যাংকের সাথে আমানতকারীর সম্পর্ক মুনাফা বন্টন নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, তাই ব্যাংকের প্রকৃত ক্ষতি আমানতকারীকেই বহণ করতে হয়। অর্থাৎ, লোকসানের বেলায় ইসলামি ব্যাংককে আমানতকারীর আমানতের উপর কোন নির্দিষ্ট লাভ তো করতে হয়-ই না, উপরন্ত আনুপাতিকভাবে আমানতকারীর আমানত হ্রাস পায়। এভাবেই ইসলামি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা পায়। এদিক থেকে বিচার করলেও বাংলাদেশের মত অস্থিতিশীল অর্থনীতির একটি দেশে ইসলামি ব্যাংকই হতে পারে সর্বোত্তম পছন্দ।
৬. ব্যাংক সৃষ্ট মুদ্রাস্ফিতি দুর করা: প্রচলিত সুদী ব্যাংক ব্যবস্থায় ব্যাংকসমূহ কম আমানত সৃষ্টি করে থাকে। একে ঋণসৃষ্টি বলেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। সুদভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকের ন্যায় ক্রয় বিক্রয় করে না বরং ঋণদান করে। ব্যাংক যখন কোন মক্কেলকে ঋণদান করে তখন তাকে ঋণের অর্থ হাতে হাতে না দিয়ে দুতরফা দাখিলার নিয়মানুসারে ব্যাংকে রক্ষিত মক্কেলের হিসাবে মঞ্জুরকৃত ঋণের অর্থ জমা করে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকে (secondary deposit) মাধ্যমিক আমানতের সৃষ্টি হয়, ফলে ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ বেড়ে যায়। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণদানক্ষমতা যেহেতু আমানতের পরিমাণের উপর নির্ভরশীল তাই ঋণসৃষ্টির প্রক্রিয়া প্রবৃদ্ধি পাইলে কাজগুলো (fictitious) আমানতের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণদানক্ষমতা ও বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, কোন সুদী ব্যাংকের প্রাথমিক আমানতের পরিমাণ ১ কোটি টাকা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনগত রিজার্ভ অনুপাত (legal reservse ratio) ৪%। এমতাবস্থায় ঐ বাণিজ্যিক ব্যাংকটি তার এক কোটি টাকার প্রকৃত আমানত থেকে ১০% বাদ দিয়ে সর্বাধিক ৯০ লাখ টাকা ঋণদান করতে পারবেন। এ টাকা মক্কেলকে সরাসরি নগদ টাকায় না দিয়ে ব্যাংকে রক্ষিত তার একাউন্টে জমা করার ফলে ব্যাংকের মাধ্যমিক আমানত (secondary deposit) সৃষ্টি ৯০ লাখ টাকা। এ ৯০ লাখ টাকা থেকে আইনগত রিজার্ভের অনুপাত ১০% (৯,০০০ টাকা) বাদ দিয়ে বাকী ৮১,০০০ টাকা ব্যাংক নতুন করে ঋণদান করতে পারবে। এ ভাবে সুদী বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রত্যেকটি ঋণদান নতুন আমানতের সৃষ্টি করতে থাকে এবং ব্যাংক ঋণের পরিমাণও বাড়তে থাকে। এ ধরণের কাগুজে (fictitious) ঋণদান অর্থনীতিতে মুদ্রার সরবরাহ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় যা মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে, ইসলামি ব্যাংক অর্থের লগ্নি করেনা বরং পণ্যের কেনাবেচাই ইসলামি ব্যাংকের মূল ভিত্তি। এ ইসলামি বিনিয়োগ মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি ত করেইনা বরং উল্টা মুদ্রাস্ফীতি দূর করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
৭. অংশগহণমূলক আয়ন নিশ্চিৎ করা: ইসলামি ব্যাংক ঝুঁকিতে অংশগহণ করে মূলত উদ্যোক্তাকে শুধু উৎসাহিতই করেনা বরং ব্যাংক তার অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও তত্ত্বাবধান দিয়ে মক্কেলের ব্যাবসার সাফল্য নিশ্চিৎ করতে চায়। কারণ, ইসলামি বিনিয়োগ পদ্ধতিতে মক্কেলের ব্যবসার সাফল্য ও ব্যর্থতার সাথে ব্যাংকের স্বার্থও জড়ানো থাকে। একের সাফল্য অন্যকে উদ্বুদ্ধ করে আর এভাবেই জোয়ার আসে শিল্প ও বাণিজ্যক্ষেত্রে।
৮. জাতীয়ভাবে সঞ্চয় বৃদ্ধি: এদেশের শতকরা ৯০ ভাগ অধিবাসী মুসলিম। ইসলাম সকল প্রকার সুদকে চূড়ান্তভাবে হারাম করেছে। আল-কুরআনে সুদখোরের বিরুদ্ধে আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সঃ) এর পক্ষ থেকে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হাদীস শরীফে সুদের আদান প্রদানকে নিজের মায়ের সাথে সত্তর বার ব্যভিচারের সমতুল্য গণ্য করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ স্বভাবগতভাবে খুবই ধর্মপ্রান বিধায় দেশের এক বিরাট সংখ্যক মানুষ সুদের ভয়ে কখনোই তাদের সঞ্চয় ব্যাংকে জমা রাখেনা। কেবল অধিক সংখ্যায় ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এসব সঞ্চয় সংগ্রহ ও তা উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ করা সম্ভব।
৯. ঈমানদার আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষা: মুসলমানদের মধ্যে যারা সুদী ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন তাদের অনেকেই ধর্মীয় কারণে জমাকৃত অর্থের উপর সুদ গ্রহণ করেন না। যার অর্থ হলো, ক্ষুদ্র আমানতকারীগন তাদের ঈমান রক্ষার প্রয়োজনে আমানতের উপর ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত থাকতে বাধ্য হচেছন এবং এ অর্থ থেকে যাচেছ ব্যাংক মালিকের কাছে যে প্রকৃতপক্ষে এর হকদার নয়। এ ব্যবস্থা আমানতকারীদের নিরুৎসাহিত করতে বাধ্য। দেশে ইসলামি ব্যাংক কর্মরত থাকলে ক্ষুদ্র ঈমানদার আমানতকারীগণকে তাদের আমানতের উপর আয় থেকে বঞ্চিত হতে হয় না।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url