কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা পুষ্টি ঔষধি গুনাগুণ ও অপকারিতা

 কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। গ্রামগঞ্জে শহরে এবং দেশের সর্ব স্থানে কাঁঠাল পাওয়া যায়। কাঁঠাল ফলটি দামে অনেক সস্তা তাই ধনী-গরীব সবাই খেতে পারে। কাঁঠাল গ্রাম অঞ্চলে প্রচুর জন্মায়। বাংলাদেশে যতগুলো উপকারী ফল জন্মে তার মধ্য কাঁঠালের নাম সবচাইতে উপরের দিকে রয়েছে। কাঁঠাল বাংলাদেশের জন্মানো এমন একটি ফল যাতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ ঔষধি গুণ ও উপকারিতা। মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান যেমন থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম সহ বিভিন্ন প্রকারের পুষ্টি উপাদান।


আরো পড়ুনঃ কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

এছাড়া আমিষ শর্করা এবং বিভিন্ন রকম ভিটামিনের ভান্ডার হচ্ছে এই কাঁঠাল। তাই আজ আমরা এই আর্টিকেলটিতে জেনে নিই স্বাস্থ্য গঠনে কাঁঠালের উপকারিতা পুষ্টিগুণ এবং অল্প কিছু অপকারিতা সম্পর্কে।

যে সকল পুষ্টি মানুষের দেহে প্রয়োজন তার পোড়ায় সবই কাঁঠালের মধ্যে আছে। এজন্যই বাঙালিরা পুষ্টির অভাব পূরণ করার জন্য কাঁঠাল খেয়ে থাকেন। শুধু তাই নয় কাঁঠাল পুষ্টির রাজা এবং গরিবের খাদ্য হিসেবে পরিচিত।

কাঁঠালের খাওয়ার উপকারিতা

  • কাঁঠালে থাকা ভিটামিন সি চুল দাঁত ও দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া ও ক্যান্সারও টিউমারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
  • কাঁঠালে থাকা প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে।
  • কাঁঠালের থাকা ভিটামিন এ রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • কাঁঠালে থাকা ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস আলসার পাইলস ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এবং বার্ধক্য ও উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • কাঁঠালে রয়েছে পটাশিয়াম ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • কাঁঠালের রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন যা চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • কাঁঠালে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালোরি এজন্যই কাঁঠাল খেলে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায়।
  • কাঁঠালে থাকা সোডিয়াম ও পটাশিয়াম শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্সকে ঠিক রাখে যা উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট ভালো রাখে।
  • কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় হজমের সমস্যা দূর করে। যা হজম শক্তি বাড়ায়, পেট পরিষ্কার রাখে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • কাঁঠালে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড় মজবুত করে ও অস্টিওপোডরসিস রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • কাঁঠালে আয়রন থাকে যা রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ বাড়ায়। রক্তস্বল্পতা রোগীদের জন্য কাঁঠাল খুবই উপকারী যা দেহের রক্তস্বল্পতা দূর করে।
  • কাঁঠালে কোনো ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই এবং ক্ষতিকারক ফ্যাটের পরিমাণ কম হওয়ায় ওজন বাড়ার খুব একটা আশঙ্কা থাকে না।
  • টেনশন নার্ভাসনেস ও বদ হজম কমাতে কাঁঠালের  অনেক ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • দুগ্ধদানকারী মা তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
  • মায়ের পুষ্টিতে প্রতিদিন ২০০ গ্রাম পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশুর সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়ে যায়।

কাঁঠাল খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

  • কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ  এবং সি রয়েছে এই ভিটামিন এ দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে। কাঁঠালে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • কাঁঠাল ফাইবারের ভালো একটি উৎস। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
  • আলসারের সমস্যা প্রাকৃতিক উপায়ে কমাতে সাহায্য করে কাটালে থাকা এক ধরনের উপকারী উপাদান।
  • কাঁঠাল বেশ কয়েক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর উৎস। এসব উপাদান হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • কাটালে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
  • কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। নিয়মিত ফলটি খেলে তাই ত্বক ভালো থাকে ও ত্বককে রোদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দূরে রাখা যায়।
  • কাঁঠাল খেলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা থাকে। ফলে অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে দূরে থাকা যায় ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • কাঁঠাল খেলে ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগের ঝুঁকি কমে যায়। কারণ কাঁঠালে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলস থেকে রক্ষা করে।
  • কাটালে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের গঠনে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি হাড় শক্তিশালী রাখতে সহায়তা করে।
  • আয়রন মিলে কাঁঠাল থেকে। এই খনিজ উপাদান রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।

কাঁঠালের পুষ্টি ও গুনাগুন

ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ : ভিটামিন সি মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চুল দাঁত ও দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখতে সহায়তা করে আর এই ভিটামিন সি রয়েছে কাটালে এই কাঁঠালে থাকা ভিটামিন এ রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ফাইটো-নিউট্রয়েন্টস : কাঁঠালে থাকা ফাইটো-নিউট্রয়েন্টস আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়তা করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট : মানব দেহ বুড়িয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী হচ্ছে ফ্রী রেডিক্যালস আর কাঁঠালে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিক্যালস থেকে আমাদের দেহকে রক্ষা করে। এছাড়াও আমাদের শরীরে সর্দি-কাশি রোগ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ।

ম্যাঙ্গানিজ : কাঁঠালে থাকা প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান এবং ম্যাঙ্গানিজ যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।

ভিটামিন বি৬ : কাটালে টাকা ভিটামিন বি ৬ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

আরো পড়ুনঃ বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগণ 

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পুষ্টি উপাদান  সমূহ

  • শক্তি ৩৯৭ কিলো ক্যালরি।
  • খাদ্য আঁশ ২.০০ গ্রাম
  • চিনি ১৯.০৮ গ্রাম।
  • স্নেহ ০৬৪ গ্রাম।
  • প্রোটিন ১.৭২ গ্রাম।
  • ভিটামিন এ ৫ মাইক্রোগ্রাম।
  • ভিটা ক্যারোটিন ৬১ মাইক্রো গ্রাম।
  • লুটিন জিয়াক্সনথিন ১৫৭ মাইক্রো গ্রাম।
  • থায়ামিন (বি১) ০.১০৫ মিলিগ্রাম।
  • রিব্যালারি (বি২) ০.৫৫ মিলিগ্রাম)
  • নায়াসিন (বি৩) ০.৯২ মিলিগ্রাম।
  • প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) ০.২৩৫ মিলিগ্রাম।
  • ভিটামিন (বি৬) ০.৩২৯ মিলিগ্রাম।
  • ফোলেট (বি৯) ২৪ মাইক্রোগ্রাম।
  • ভিটামিন সি ১৩.৮ মিলিগ্রাম। 
  • ভিটামিন ই ০.৩৪ মিলিগ্রাম। 
  • ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম। 
  • লৌহ ০.২৩ মিলিগ্রাম। 
  • ম্যাগনেসিয়াম ২৯ মিলিগ্রাম। 
  • ম্যাঙ্গানিজ ০.০৪৩ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস ২১ মিলিগ্রাম।
  • পটাশিয়াম ৪৪৮ মিলিগ্রাম।
  • সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম।
  • জিংক ০.১৩ মিলিগ্রাম।

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে যে পরিমাণ পুষ্টি উৎপাদন থাকে

  • শক্তি ৯৮ ক্যালরি। 
  • কার্বোহাইডেট ৩৮.৪ গ্রাম।
  • প্রোটিন ৬.৬ গ্রাম 
  • ফাইবার ১.৫ গ্রাম।
  • চর্বি ০.৪ গ্রাম।
  • ক্যালসিয়াম ০.৫ থেকে ০.৫৫ মিলিগ্রাম। 
  • ফসফরাস ০.১৩ থেকে ০.২৩ মিলিগ্রাম 
  • আয়রন ১.২ মিলিগ্রাম। 
  • সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম। 
  • পটাশিয়াম ৪.০৭ মিলিগ্রাম।

কাঁঠালের ঔষধি গুনাগুন

কাঁঠালে রয়েছে বিভিন্ন ওষুধি গুনাগুন কাঠাল গাছের শিকড় বিভিন্ন রোগের নিরাময় প্রতিষেধক এবং উপশমকারী।

  • কাঁঠালের শেকড় হাঁপানি নিরাময় করতে সাহায্য করে, যাদের হাঁপানি সমস্যা রয়েছে তারা কাঁঠালের শেকর সিদ্ধ করে তার পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করলে তা তাদের রোগের প্রকোপ কমাতে সহায়তা করে।
  • কাঁঠালের শেকর চর্ম রোগের সমস্যার সমাধান ও খুবই কার্যকরী হিসেবে কাজ করে।
  • জ্বর এবং ডায়রিয়া নিরাময়ে ও কাঁঠালের শেকড় খুব ভালো উপহার করে।

কাঁঠাল খাওয়ার অপকারিতা

কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। কাঁঠালে যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি কাঁঠালের অল্প কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। এখন কাঁঠালের অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।

যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের কাঁঠাল খাওয়া কিছুটা বিধি-নিষেধ আছে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।  কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি তাদের কাঁঠাল না খাওয়াই ভালো। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ আমি তাকাই কাঁঠাল একটি গুরুপাক ফল মানে আমিষের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি হজম হতে সময় বেশি নেয়। তাছাড়াও অধিক পরিমাণে কাঁঠাল খেলে তা বদহজম হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url