ডালিম বা বেদেনা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা পুষ্টিগুণ
ডালিম বা বেদেনা সম্পর্কে বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ডালিম প্রায় তিন হাজার বছরের বেশি পুরাতন একটি ফল। ডালিম বা বেদেনার রং লাল হয়। ডালিমের মধ্যে অসংখ্য লাল রঙের ছোট ছোট রসালো দানা থাকে। স্বাস্থ্যের দিক থেকে দেখলে ডালিম একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। বাংলাদেশের সকল জেলায় প্রায় ডালিম বা বেদেনা কম বেশি চাষ করা হয়। কিন্তু ভারতে সবচেয়ে বেশি এর চাষ করা হয়।
ডালিম গাছ দেখতে সুন্দর এবং আকারে ছোট হয়। গাছের ফল আসার আগে একটি বড় লাল রঙের সুন্দর ফুল ফোটে। ফুলগুলো কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর। এবং তারপর ফুল থেকে ফল হয়। আজ আমরা ডালিম বা বেদেনা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আপনারদের জানবো।
ছোট বাচ্চাদের পানির তৃষ্ণা লাগলে ডালিম খেতে দিন ঃ
বাচ্চাদের খুব তৃষ্ণা লাগলে ডালিম, জিরা ও নাগ কেশর সমপরিমাণে নিয়ে গুড়া তৈরি করতে হবে। তারপর ওই পাউডার চিনি ও মধু মিশিয়ে বাচ্চাদের চাটতে দিন তাহলে এটি তৃষ্ণা নিবারণ করবে।
রক্তস্বল্পতা এবং জন্ডিসের ডালিম খান ঃ
রক্তশূন্যতা ও জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য ২৫০ মিলি ডালিমের রসের সঙ্গে ৭৫০ গ্রাম চিনি মিশিয়ে সিরাপ তৈরি করতে হবে। তারপর এটি দিনে তিন থেকে চার বার সেবন করতে হবে। তাহলে এটি রক্তস্বল্পতা ও জন্ডিসের জন্য উপকারী হবে।
মাঝে মাঝে প্রায় অনেকেই ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করেন। এ ধরনের ব্যক্তিদের জন্য ২০ গ্রাম তাজা ডালিম পাতা গ্রহণ করা উচিত এবং ৪০০ মিলি জলে সিদ্ধ করা উচিত। ১০০ মিলি জল অবশিষ্ট থাকলে তাতে গরম দুধ মিশিয়ে পান করলে উপকার পাওয়া যাবে। এটি শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন ঃআমের উপকারিতা, অপকারিতা ও ভিটামিন
ডালিম ডায়েরিয়ার জন্য উপকারীঃ
ডালিম ফলের দুই থেকে তিন গ্রাম খোসার গুলো করে খেলে ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। সকাল বেলায় ও সন্ধ্যা বেলায় তাজা জলের সঙ্গে পান করা হয় তাহলে এটি ডায়রিয়া জন্য খুবই উপকারী।
১গ্রাম ডালিমের ছাল (ফল বা মূলের ছাল) পাউডার সমান পরিমাণ জায়ফল বুড়ো এবং ২৫০ মিলিগ্রাম জাফরান মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর এটি পিষে মধুর সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপরে এটি সেবন করতে হবে। তাহলে ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
ডালিম হৃদ রোগের জন্য উপকারীঃ
হার্টের রোগীরা ও ডালিম খাওয়ার ফলে উপকারিতা পেতে পারেন। ইঁদুর রোগে ১০০ মিলি জলে ১০ গ্রাম ডালিমের তাজা পাতা পিষে ছেঁকে রস বের করে নিতে হবে। সকাল সন্ধ্যা নিয়মিত পান করলে হৃদরোগের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়।
টিবি রোগের সাথে লড়াইয়ে ডালিমের উপকারিতা ঃ
টিবি হলে একটি কঠিন রোগ। টিবি রোগ নিরাময়ের জন্য এ পদ্ধতিটি করতে হবে। ৪০-৪০গ্রাম পিপল, সাদা জিরা, শুকনো আদা এবং দারুচিনির গুঁড়ো একসাথে ২০০ মিলি সুস্বাদু ডালিমের রস ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
এর মধ্যে ১ থেকে ২ গ্রাম মিহি জাফরান এবং ২০০ গ্রাম পুরনো গুড় ভালোভাবে মিশে অল্প আছে রান্না করতে হবে। যখন এই ক্বাথ ট্যাবলেট বানানোর জন্য তৈরি হয়ে যাবে, তখন দশ গ্রাম ছোট এলাচের গুড়া যোগ করে ১ থেকে ২ গ্রাম ট্যাবলেট তৈরি করতে হয়। ছাগলের দুধের সাথে সকালেও সন্ধ্যায় দুইবেলা একটি করে ট্যাবলেট সেবন করার ফলে টিবি রোগ থেকে উপকার পাওয়া যাবে।
আরো পড়ুন ঃআনারসের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
ফুসফুসের রোগে ডালিমের উপকারীঃ
ফুসফুসে রোগ সারাতে ও ডালিম ব্যবহার করার ফলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। যারা বা যেসব ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন তারা ১০ থেকে ২০ মিলি ডালিম পাতার ক্বাথ দিনে দুই থেকে তিনবার পান করার ফলে ফুসফুসের রোগ থেকে স্বস্তি পাওয়া যায়।
রক্ত বমি দূর করতে ডালিমের উপকারিতা ঃ
রক্ত বমি দূর করার জন্য ডালিম উপকারী একটি ফল। রোগীকে দিনে দুবার ডালিম পাতার রস ৫ থেকে ১০ মিলি পান করা উচিত। এটি রক্ত বমি বন্ধ করতে সাহায্য করে। রক্তাক্ত পাইলসে ও এটি উপকার করে।
ডালিম চোখের জন্য উপকারীঃ
ডালিম চোখের জন্য খুব উপকারী একটি ফল। কারণ ডালিমের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। যা আমাদের চোখের স্বাস্থ্য সঠিক রাখতে সাহায্য করে। চোখের বিভিন্ন রকম সমস্যা হওয়া থেকে রোধ করে। এমনকি রাতকানা রোগ হওয়া থেকেও সুরক্ষা দিতে পারে।
বমি বন্ধ করতে ডালিম উপকারী ঃ
বমি হলে ১০ মিলি ডালিমের কুসুম কুসুম গরম রস পাঁচ গ্রাম চিনির সাথে মিশিয়ে পান করলে উপকার পাওয়া যায় এবং এতে বমি বন্ধ হয়ে যায়।
আরো পড়ুন ঃপেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
ডালিম চুল পড়া রোধ করে ঃ
চুল পড়া বা টাক পড়ার সমস্যা রোদে ডালিম খুব উপকারী একটি ফল। ডালিমের টাটকা তাজা সবুজ পাতার রস খেতে হবে। ১০০ গ্রাম ডালিম পাতার পেস্ট ও আধা লিটার সরিষার তেলের সাথে ভালো করে মিশাতে হবে। তারপর এই তেলটাকে সিদ্ধ করতে হবে। তারপর ঠান্ডা করে ভালো করে ছেঁকে নিতে হবে ওই তেলটি চুলে লাগাতে হবে। তাহলে চুল পড়া এবং টাকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
হাড় মজবুত করতে ডালিমের উপকারী ঃ
আমাদের শরীরের হাড় মজবুত করতে ডালিম একটি উপকারী ফল। কারণ ডালিম এর মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে। ডালিম খাওয়ার ফলে গায়ের ব্যথা ও দূর হয়।
মুখের দাগ দূর করতে ডালিমের উপকারী ঃ
মুখের দাগ দূর করতে ডালিম খুব উপকারী একটি ফল। মুখের দাগ নিয়ে সমস্যা থাকলে ডালিম ব্যবহার করে সুবিধা পেতে পারেন। তাজা ডালিমের পাতার রস আধা লিটার তেলের সাথে ভালো করে মিশিয়ে নেওয়ার পর মুখের ব্রণ এবং যে কোন মুখের দাগ ও কালো দাগের উপর মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।
ডালিম হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ঃ
ডালিম হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কারণ ডালিমের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। যা হজমশক্তি উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডালিম খাওয়ার অপকারিতা ঃ
- বেশ কিছু লোকের ডালিম বা বেদনায় এলার্জি থাকতে পারে। এলার্জির লক্ষণ হবে চুলকানি, নাক দিয়ে জল পড়া, শ্বাস নিতে অসুবিধা ইত্যাদি।
- অতিরিক্ত পরিমাণে ডালিম বা বেদেনা খাওয়ার ফলে বদ হজম হতে পারে কাঁশি হতে পারে।
- ডালিম বা বেদানার বীজ অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ার ফলে তত্নে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
- জ্বর, সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় তারা ভুগছেন এ রকম সমস্যা থাকলে ডালিম বা বেদেনা খাওয়া উচিত নয়।
- যেসব ব্যক্তিদের শরীর ঠান্ডা প্রকৃতির বা ঠান্ডা থাকে তাদের ডালিম খাওয়া উচিত নয়।
ডালিম বা বেদানার পুষ্টিগুণঃ
- খাদ্য শক্তি
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন কে
- ভিটামিন বি
- ভিটামিন ডি
- ক্যালসিয়াম
- পটাশিয়াম
- ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড
- ফাইবার
- প্রোটিন
- আইরন
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url