আনারসের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

আনারস রসালো ও তৃপ্তিকর সুস্বাদু ফল। ফলটিতে আঁশ ও ক্যালরি ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম থাকে। কোলেস্টেরল ও চর্বি মুক্ত বলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর জুড়ি নেই। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান জেলায় প্রচুর পরিমাণ আনারস চাষ করা হয়। এছাড়াও টাঙ্গাইলের ম  ধুপুর সহ দেশের অনেক জেলায় আনারস চাষ করা হয়। আমরা আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।


আনারস মিষ্টি রসালো ও তৃপ্তিকর সুস্বাদু ফল যা মানব দেহের জন্য অনেক উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম রয়েছে। ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ ও ক্যালরি রয়েছে এটি কোলেস্টেরল ও চর্বি মুক্ত তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এ ফলের ঝুড়ি নাই। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ

পুষ্টির অভাব পূরণেঃ

পুষ্টিগুনের ভরপুর এ ফলের নাম আনারস। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং পটাশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। এসব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

হজম শক্তিকে উন্নত করেঃ

আমাদের শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ও আনারসের জুড়ি নেই । আনারসে ব্রোমেলির নামক এনজাইম থাকে যা হজম শক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই বদহজম বা হজম জনিত যে কোন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আনারস খাওয়া যেতে প্রয়োজন।

ভাইরাসজনিত ঠান্ডা ও কাশি প্রতিরোধঃ

আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে তাই ভাইরাসজনিত ঠান্ডাও কাশি প্রতিরোধে অনেক ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়া জ্বর, জন্ডিস প্রতিরোধে আনারস বেশ উপকারী। এছাড়া নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যথা এবং বঙ্কাইটিসের বিকল্প ওষুধ হিসেবে আনারসের রস খেতে পারেন।

শরীরে ওজন কমাতে সহায়তা করে ঃ

আনারসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে। এছাড়া এতে কোন ফ্যাট না থাকায় সঠিক পরিমানে আনারস খেলে বা আনারসের জুস পান করলে তা শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। আনারস আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের পথ হতে পারে। দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় আনারস। ফলে শিরা-ধমনীর মধ্য দিয়ে সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে।

দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষায় ঃ

আনারসে  অনেক ক্যালসিয়াম থাকাই তা দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে থাকে। নিয়মিত আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর সংক্রমণ কম হয় ফলে দাঁত ঠিক থাকে। এছাড়া মাড়ির যে কোন সমস্যা সমাধান করতে আনারস বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন থাকে।

আরো পড়ুন ঃ আদা খাওয়ার উপকারিতা  অপকারিতা

চোখের যত্নে আনারস ঃ

আনারস চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাওয়া রোগ "ম্যাকুলার ডিগ্রেডেশন" রোগটি হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। আনারসে রয়েছে বেটা কেরোটিন। প্রতিদিন আনারস খেলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০% পর্যন্ত কমে যায়। ফলে আমাদের চোখ সুস্থ থাকে।

ত্বকের যত্নে আনারস ঃ

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি যা আমাদের শক্তির যোগান দেয়। এতে থাকা প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচাই। এছাড়া দেহের তৈলাক্ত ব্রণ সহ সব রূপ লাবণ্য আনারসের যথেষ্ট  গুন রয়েছে।

হাড়ের সমস্যা জনিত রোগ প্রতিরোধ ঃ 

আনারসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া এতে থাকে ম্যাঙ্গানিজ আর কি করে তোলে মজবুত ও শক্ত। তাই খাওয়ার তালিকায় পরিমিত পরিমান আনারস থাকলে হাড়ের সমস্যা জনিত যে কোন রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

কৃমিনাশক হিসাবে ঃ

কৃমিনাশক হিসেবে আনারসের রস ভালো কাজ করে থাকে । তাই নিয়মিত আনারস খেলে কয়েক দিনের মধ্যে কৃমির উৎপাত বন্ধ হয়ে যায়। কৃমি দূর করতে সকালবেলায় ঘুম থেকে জেগে খালি পেটে আনারস খাওয়া উচিত।

ক্যান্সার প্রতিরোধে ঃ

 ফ্রি-রেডিকেল বা মুক্ত মূলক মানবদেহের কোষের উপর বিরূপ ক্রিয়ার সৃষ্টি করে ফলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে। আমাদের দেশি আনারসে আছে উচ্চমাত্রায় পানিতে দ্রব্নীয়  অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং পানিতে দ্রব্নীয় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা দেহকে এফ্রি রেডিকেল (মুক্ত মূলক) থেকে সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। ফলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ দেহে বাসা বাঁধতে পারে না।

আরো পড়ুন ঃপাকা পেঁপে ও কাঁচা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা

আনারসের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ

  • আনারসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা থাকলেও সবার জন্য ভালো কাজ করে না। অনেকেরই আনারস এলার্জি সমস্যা আছে, যেমনঃ বিভিন্ন ধরনের চুলকানি ফুসকুড়ি ইত্যাদি হতে পারে।
  • আনারসের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি যার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। আনারসের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি আমাদের দেহে রক্ত চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা আনারস বেশি না খেয়ে সপ্তাহে দুই দিন খেতে পারেন।
  • আনারস একটি এসিডিক ফল তাই খালি পেটে ফলটি খেলে পেটে প্রচন্ড ব্যথা তৈরি হতে পারে।
  •  কোন গ্যাস্ট্রিকের রোগী যদি খালি পেটে আনারসের সাথে দুধ খায় তাহলে তার পেটে পছন্দ ব্যথার "ফুট ট্যাবু"  এর উদ্ভব হতে পারে।
  • রক্ত তরল করার জন্য যে ওষুধ বানানো হয় তাতে আনারস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ফল দেহে রক্ত জমাট বাধার প্রক্রিয়ার কে বাধা প্রদান করে থাকে। তাই তাদের যাদের আনারস খেলে এসব সমস্যায় ভুগবেন তারা অবশ্যই আনারস থেকে দূরে থাকবেন।

***পুষ্টিগুণ সহ দেহকে সুস্থ রাখার একটি অতুলনীয় কার্যকরী ফল আনারস । বর্তমানে  আনারস এর দাম অনেক বেশি ৭০/৮০ টাকা পিচ। এছাড়া এর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় যেকোনো একটি ফল থাকলে ভালো হয়।  তাই আমরা চাইলেই প্রতিদিনের খাবারে আনারস  রাখতে পারিনা। কিন্তু যাদের সাধ্যের মধ্যে আছে তারা প্রতিদিনের খাবারে আনারস রাখতে পারেন।

ধন্যবাদ**



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url