লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টি গুনাগুন

 লাউ শাক আমাদের দেশের খুব জনপ্রিয় একটি শাক । লাউ শাক পছন্দ করেনা এমন মানুষ খুব কমই আছে। ছোট বড় সবারই পছন্দ করে এই লাউ শাক। বাংলাদেশের সর্বত্রই লাউ শাক দেখতে পাওয়া যায় তবে বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে চাষ বেশি পরিমাণে করা হয়। বর্তমানে শহরের মানুষেরাও ছাদে লাউ শাকের চাষ শুরু করেছেন। লাউ শাক খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। এটি খাবারে রয়েছে হাজারো পুষ্টিগুণে ভরা এবং এটি খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি চাহিদা অথবা পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে।


লাউ শাক সারা বছরই পাওয়া যায়। তবে শীতের মৌসুমে এটি বেশি পরিমাণে চাষ করা হয়। শুধু ফলই বেশি হয় না শীতের মৌসুমে লাউ শাক খেতে অনেক সুস্বাদু লাগে। লাউ শাক খাওয়ার ফলে বিভিন্ন পুষ্টির চাহিদা পূরণ তো হবেই সে সাথে রয়েছে স্বাস্থ্যের ও নানাবিধ উপকারিতা যা আপনার শরীরকে সুস্থ সবল ও রাখতে দারুন ভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।

আরো পড়ুনঃ চিনা বাদামের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত 

লাউ শাকের উপকারিতা

আয়রন হচ্ছে লাউ শাকে প্রধান উপাদান

লাউ শাকে আয়রন থাকার কারণে রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ এবং লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে শরীরের রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে। তাছাড়া এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি। আর আমরা তো জানি ভিটামিন সি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী। ভিটামিন সি বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ও ঠান্ডা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য লাউ শাক যথেষ্ট উপকারী সবজি এবং যারা ডায়েট কন্ট্রোল করে তাদের ক্ষেত্রে লাউ শাক অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার।

লাউ শাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে

লাউ শাক খাওয়ার ফলে শরীরে ঘাম জনিত লবণের ঘাটতি দূর করে। যারা অতিরিক্ত মাত্রায় ঘেমে যায় শরীর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ বের হয়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে লাউ শাক অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। এটি খাবার ফলে আপনার শরীরে লবণের ঘাটতি দূর করবে এবং সেই সাথে দাঁত ও হাড় কে মজবুত করবে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা আছে তারা লাউ শাক খেতে পারেন। এছাড়া যাদের পাইলসের সমস্যা আছে তারাও লাউ শাক খেতে পারেন। এতে আপনার সমস্যা অনেক অংশে কমে যাবে।

বিটা ক্যারোটিন লুটেইন এবং জিয়েজ্যান্থিনে পরিপূর্ণ হলো লাউ শাক

আমরা তো সবাই জানি বিটা ক্যারোটিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লুটেইন এবং জিয়েজ্যান্থিনে  চোখে নানাবিধ রোগের প্রতিরোধ করে থাকে। যাদের চোখে সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে লাউ শাক অত্যন্ত দরকারি এবং পুষ্টিকর খাবার। তাছাড়া এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং এটি খাওয়ার ফলে মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকে এবং পরিপূর্ণ ঘুম হয়। যাদের অতিরিক্ত মাথা গরম থাকে এবং ঠিকমতো ঘুম হয় না তাদের ক্ষেত্রে লাউ শাক বিশেষ গুরুত্ব অন্য ভূমিকা পালন করে থাকে। লাউ শাক খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের সাথে সাথে মাথা ও ঠান্ডা থাকবে এবং গভীর ঘুম হবে। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড় ও দাঁত মজবুত করে। অস্টিওপরেসিস এবং অন্যান্য ক্যালসিয়ামের অভাব জনিত রোগের ঝুঁকি ও কমায় লাউ শাক।

লাউশাকে পটাশিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে

লাউ শাকে যে পটাশিয়াম আছে মানব শরীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন সি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহায়তা করে থাকে। তবে ভিটামিন সি থেকে পটাশিয়ামের কার্যকারিতা অনেক শক্তিশালী এমনকি যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে লাউ শাক ঔষধের মতো কাজ করে। নিয়মিত লাউ শাক খাওয়ার ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা অনেক অংশ বৃদ্ধি পায় এবং যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে তারা নিয়মিত পরিমাণে লাউ শাক খেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ আঙ্গুরের  উপকারিতা পুষ্টিগণ ও লাল আঙ্গুরের উপকারিতা 

লাউ শাকের পুষ্টিগুণ

 লাউ শাকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি গুণ আছে। যা আপনারা প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখতে পারেন। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশেও আজকাল লাউ শাকের চাষ করা হচ্ছে। এতে করে যেমন দেশে পুষ্টি ঘাটতি চাহিদা পূরণ হচ্ছে সেই সাথে বাজারজাত করে অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। ব্যবসায়িকভাবে না হলেও অনেকের বাড়ির আঙিনায় অথবা বাড়ির ছাদে দেখা যায় এই লাউ গাছ লাগানো। এতে করে যেমন পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূর্ণ হচ্ছে সে সাথে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হচ্ছে। আমরা বলতে পারি যে লাউ শাক অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার এবং সেই সাথে সুষম এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাবার। আমরা লাউ চাষ করতে পারি সে সাথে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে ও অর্থ উপার্জন করতে পারি।

লাউ গাছের পাতা বা লাউ শাক খুবই উপকারী। যাদের খাবার কম হজম হয় বা অসুখ-বিসুখ লেগে থাকে তাদের জন্য লাউ শাক খুবই উপকারী । লাউ শাক নিয়মিত খেলে কর্ম শক্তি বৃদ্ধি পায় যাদের শরীর গরম বা মাথা গরম থাকে তারা লাউ শাক বা লাউ খেলে উপকার পাবেন। হৃদরোগে আক্রান্ত ও হাই প্রেসারের রোগীরা নিয়মিত লাউ শাক খেলে উপকার পাবেন। লাউ শাক খেলে শরীরের চামড়ার আদ্রতা বজায় থাকে ফলে শীতকালে চামড়ার টানটান ভাব কমে যায়।

কানের ব্যথায় লাউ গাছের নরম ডগার রস দিলে উপকার পাওয়া যায়। লাউ গাছের পাতার রসের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে জন্ডিস রোগে উপকার হয়। যাদের ঘুম কম হয় তারা রাতে লাউ বা লাউ শাক খেলে রাত জাগার প্রবণতা কমে ঘুমাইতে পারে। যাদের সব সময় মাথা গরম থাকে তারা লাউয়ের বীজ বেটে মাথায় তালুতে রাখলে বা ভরণ দিলে উপকার পাবেন । খাওয়ার অরুচি হলে লাউয়ের সবজি বা লাউ শাক বা লাউয়ের বাকলের ভাজি খেলে সমস্যা কমে যাবে ইনশাল্লাহ।

আরো পড়ুনঃ ডালিম বা বেদেনা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা পুষ্টিগুণ 

১০০ গ্রাম লাউ শাকের পুষ্টি গুণাগুণ

জলীয় অংশ ৯৬.১০ গ্রাম।

আঁশ ০.৬ গ্রাম।

আমিষ ০.২ গ্রাম। 

চর্বি ০.১ গ্রাম ।

শর্করা ২.৫ গ্রাম।

খাদ্য শক্তি ১২ কিলো ক্যালরি।

ধন্যবাদ*

দোয়া করি সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। নিয়মিত শরীরের যত্ন নিন এবং সুষম খাবার গ্রহণ করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url