চিনা বাদামের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত

 বাদাম আকারে অনেক  ছোট হলেও সকল প্রকার খাদ্য গুণাবলী এতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। যেমনঃ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, লিউটিন জিজ্যানথিনের  মতো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। ১০০ গ্রাম চিনা বাদামে থেকে আমরা যা পায়, ২.৯ গ্রাম খনিজ, ১.৭ গ্রাম আঁশ , খাদ্য শক্তি ক্যালোরি ৬৫৫, প্রোটিন ২০.৮ গ্রাম, তেল ৫৮.৯ গ্রাম, শর্করা ১০.৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম ২৩০ মিলিগ্রাম ও লৌহ .৫ মিলিগ্রাম খাদ্যগুণ পাওয়া যায়।


বাদাম বলতে চিনা বাদামকেই বোঝানো হয়েছে যা কম বেশি সবাই খেয়ে থাকেন। তবে অতি পরিচিত এই খাদ্য উপাদান সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য রয়েছে তা আমরা আজকে বিস্তারিত জানবো।

কোলেস্টেরল কমায় চিনা বাদাম

বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বর্তমাগীমন্যৌ্যোলঝ

চিনা বাদাম রক্ত থেকে সুক্রোজ এর মাত্রা কমিয়ে দেয়।প্রতিদিন সকালে এটি রাস্তার সাথে খেতে পারেন। তাছাড়া রাতে ১০ থেকে ১৫ টি বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে ডায়াবেটিস অনেক অংশে নিয়ন্ত্রণে থাকে। চিনা বাদামের এন্টি অক্সিডেন্ট দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

ওজন কমাতে বেশ কার্যকরী

বাংলাদেশের মানুষ অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন  অনেকে। এমন মানুষের সংখ্যক অনেক বেশি। শরীর থেকে ওজন কমাতে ভালো ফ্যাটের প্রয়োজন  অত্যাবশ্যক। চিনা বাদাম থেকে আপনি সেই ভালো ফ্যাট পেতে পারেন। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় এক মুঠো বাদাম যুক্ত করে আপনি অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাছাড়া এটি আপনার শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করবে।

আরো পড়ুন ঃআঙ্গুরের  উপকারিতা পুষ্টিগণ ও লাল আঙ্গুরের উপকারিতা 

স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে

কিছু কিছু মানুষের স্মৃতিশক্তি তুলনামূলকভাবে অন্যদের চেয়ে কম। খুব অল্প বয়সেই অনেকেই ভুগছেন মস্তিষ্কের সমস্যায়। ভুলে যাচ্ছেন সামান্য বিষয়ে এবং অনেক চেষ্টা করেও মনে রাখতে পারছেন না। এমনটা হয় যখন আমাদের মস্তিষ্ক পরিমাণ মতো পুষ্টি  পায় না। চিনা বাদাম কে মস্তিষ্কের খাবার হিসেবে গণ্য করা যায়। চিনা বাদামে প্রচুর পরিমাণে বি৩ আছে যা মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন চিনা বাদাম বা এর মাখন খাবেন যাতে করে আপনি স্বয়ংক্রিয় মস্তিষ্ক পেতে পারেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

মানুষের অনেক ছোট ছোট কারণে রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন যেমনঃ ঠান্ডা, কাশি, মাথা ব্যাথা, দুর্বলতা, খাওয়াই অরুচি এবং নিদ্রাহীনতা। শরীরের সঠিক পরিমাণে পুষ্টি না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। চিনা বাদামের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরে কঠিন রোগকে বাসা বাঁধতে দেয় না। তাই প্রতিদিন চিনা বাদাম খেয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। বাদামের সকল স্বাস্থ্য উপকারিতা উপভোগ করতে প্রতিদিন অবশ্যই এক মুঠো চিনা বাদাম খেতে পারেন।

হার্টের রোগ প্রতিরোধ করে

বর্তমান সময়ে হাটের রোগ বিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যুর একটি অন্যতম প্রধান কারণ। সবচেয়ে কমন হাটের সমস্যাগুলো হল উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি আটারি ডিজিস হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি। বিভিন্ন সময়ে করা নানাবিধ গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত বাদাম খাওয়ার ফলে হার্টের রোগ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ একসাথে দেখতে পাওয়া যায়। এমন ব্যক্তিদের জন্য চিনা বাদাম উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। এ ব্যাপারে ২০১৪ সালে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের উপর একটি গবেষণা চালিয়ে দেখা যায় যে প্রতিদিন ৪৬ গ্রাম পরিমাণ বাদাম খাওয়ার ফলে হার্ট ভালো থাকে।

পিত্তথলিতে পাথর হওয়া প্রতিরোধ করে

পিত্তথলিতে পাথর হওয়া বয়স্ক মানুষদের জন্য একটি কমন সমস্যা বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এ রোগের প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোনো লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায় না এবং এর চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে সার্জারি করতে হয়। কিভাবে এ রোগের  হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে জানতে সবারই কৌতুহল রয়েছে।

পিত্তথলিতে পাথর হওয়া ঠেকাতে চিনা বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে যে মাঝেমধ্যেই চিনা বাদাম খেয়ে থাকেন এমন পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম রয়েছে। চিনা বাদামের মধ্যে phytosterols নামক একটি বিশেষ উপাদান রয়েছে যা পিত্তথলিতে পাথর হওয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।

প্রদাহ নাশক হিসেবে কাজ করে 

প্রদাহ জনিত রোগ যেমন রিউমাটয়েড অ্যাড অথ আথাইটিস, পাকস্থলীতে আলসার ,বাতব্যাথা ইত্যাদিতে ওষুধের পাশাপাশি পথ্য হিসেবে চিনা বাদাম খাওয়া উপকারী হতে পারে। কারণ চিনা বাদাম এর মধ্যেও ফাইবার এন্টি অক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা প্রদাহ নাশক হিসেবে কাজ করে।

আরো পড়ুন ঃআমের উপকারিতা, অপকারিতা ও ভিটামিন 

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

গবেষণা দেখা গেছে যে বয়স্কদের জন্য নিয়মিত বাদাম খাওয়ার ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। পাকস্থলীর ক্যান্সার যাকে মেডিকেলের ভাষায় gastric non cardia adenocarcinoma বলা হয় । এছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল এর অভাব প্রভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় যার ফলে যে কোন রোগে আক্রান্ত হওয়াসহ ইনফেকশন  প্রতিরোধে সহায়তা করে।

যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি করে

যৌন সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা অনেক যার মধ্যে সবচেয়ে কমন একটি সমস্যা হলো ডিসফাংশন বা লিঙ্গ উত্থান না হওয়া। এই সমস্যার প্রতিকারে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে পাশাপাশি সহায়ক খাবার হিসেবে বাদাম খাওয়া উপকারী হতে পারে। কারণ চীনা বাদামের মধ্যে (Arginine নামক যে উপাদানটি রয়েছে তা লিঙ্গের মধ্যে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধির করার মাধ্যমে ইরেকটাইল ডিসফাংশন দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়া বাদামে বিদ্যমান ভিটামিন ই এবং মিনারেলস সমূহ শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান বৃদ্ধি করে।

জয়েন্টের ব্যথায় বাদামের তেল

বাত রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এর ফলে অনেকের ক্ষেত্রেই হাঁটু ব্যাথা হতে দেখা যায় বিশেষত বয়স্কদের জন্য এটি একটি কমন সমস্যা। ব্যথা নাশক ওষুধ সেবন করায় কিডনির জন্য ক্ষতিকর আর তাই সামান্য ব্যথাই ওষুধ না খেয়ে বরং প্রাকৃতিক ও নিরাপদ পদ্ধতি হিসেবে চিনা বাদামের তেল ব্যাথার স্থানে মালিশ করা যেতে পারে। তেল হালকা গরম করে মেসেজ করার ফলে ব্যথা নিরাময় হয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যাথা হলে সে ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক বা ফিজিওথেরাপিস্ট এর  শরণাপন্ন হতে হবে।

খুশকি দূর করে

মাথায় খুশকি দূর করতে চিনা বাদামের তেল ব্যবহার করতে পারেন। খুশকি দূর করতে তেলের সাথে সহায়ক উপাদান হিসেবে কয়েকটি ফোটা লেবুর রস যোগ করে মিশ্র তৈরি করুন। অতঃপর ভালোভাবে মাথায় ত্বকে লাগানো এবং দুই থেকে তিন ঘন্টা পরে গোসল করে নিন।

অনেকের ক্ষেত্রে মাথার ত্বকে সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগ হয়ে থাকে যা নিরাময়ের ক্ষেত্রে সহায়ক উপাদান হিসেবে চিনা বাদামের তেল ব্যবহার করা উপকারী হতে পারে। তবে কারো ক্ষেত্রে চিনা বাদামের তেল এলার্জি থাকলে ব্যবহার না করাই উত্তম।

চুল গজাতে সহায়তা করে

ভিটামিন ই ও উপকারী ফ্যাট সমৃদ্ধ বাদামের তেল নিয়মিত ব্যবহারের ফলে মাথায় নতুন চুল গজায়। প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবেই মাথা থেকে অনেকগুলো চুল পড়ে যায় আর সেই সাথে নতুন করে যাদের চুল গজায় না তাদের মাথায় চুল পাতলা হয়ে যায়। আর তাই নতুন চুল গজানোর জন্য নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার  গ্রহণের পাশাপাশি চিনা বাদামের তেল ব্যবহার করতে পারেন


চিনা বাদামের পুষ্টিগুণ পরিমাণ

শক্তি ৫৬৭ ক্যালোরি।

প্রোটিন ২৫.৮ গ্রাম।

শর্করা ১৬. ১৩ গ্রাম।

ফাইবার ৮.৫ গ্রাম।

চিনি ৪.৭২ গ্রাম।

মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ১৫.৫৬ গ্রাম।

স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৬.২৮ গ্রাম।

আরো পড়ুন ঃডালিম বা বেদেনা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা পুষ্টিগুণ

খনিজ ও পরিমান

পটাশিয়াম ৭৫০ মিলিগ্রাম।

ফসফরাস ৩৭৬ মিলিগ্রাম।

ম্যাগনেসিয়াম ১৬৮ মিলিগ্রাম।

ক্যালসিয়াম ৯২ মিলিগ্রাম

সোডিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম।

আইরন ৪.৫৮ মিলিগ্রাম।

জিংক ৩.২৭ মিলিগ্রাম।

ভিটামিন ও পরিমান

ভিটামিন বি১ ০.৬৪ মিলিগ্রাম।

ভিটামিন বি২ ০.১৪ মিলিগ্রাম।

ভিটামিন বি৩ ১২.০৭ মিলিগ্রাম।

ভিটামিন বি৬ ০.৩৫ মিলিগ্রাম।

ভিটামিন বি৯ ২৪০ মাইক্রো গ্রাম।

ভিটামিন ই ৮.৩৩ মিলিগ্রাম।

ধন্যবাদ***

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url