হযরত উমরের ভূমি সংস্কারনীতি
◆ পাঠ-১: ইসলামের ভূমি সংস্কার নীতি সম্পর্কে আলোকপাত করতে পারবেন।
◆ পাঠ-২: হযরত উমরের (রা) ভূমি সংস্কার নীতির উল্লেখ করতে পারবেন।
ভূমিকা
ভূমির সাথে সংশ্লিষ্ট জনগণের স্বার্থসংরক্ষণ ও ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলো পরিহার করে তাতে যে পরিবর্তন আনয়ন করা হয় তাকেই ভূমি সংস্কার বলে।
ডঃ ওয়ারনার এ সম্পর্কে বলেনঃ "প্রকৃত ভূমি সংস্কার বলতে ক্ষুদ্র কৃষক ও কৃষি মজুরদের স্বার্থে সম্পত্তি জমিতে অধিকারের পুনর্বণ্টনকে বুঝায়।" ভূমির মালিকানার নির্ধারণের মাধ্যমে ভূমির পুনর্বণ্টন, প্রকৃত বর্গাদেরকে জমি দান, সরকার ও প্রজাদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন, ভূমির খন্ডিতকরণ ও বিচ্ছিন্নতারোধ, খন্ডিত ও. বিচ্ছিন্ন জমিগুলোর একত্রীকরণ, ভাগচাষীদের স্বার্থসংরক্ষণ, কৃষি মজুরদের ন্যূনতম মজুরী নির্ধারণ ইত্যাদি কার্যাবলী ভূমি সংস্কারের অঙ্গ হিসেবে গণ্য করা যায়।
ইসলামের ভূমি সংস্কার নীতি
ভূমি আল্লাহর দান, মানুষ ও জীব জন্তুর জীবন ধারণের জন্য উহা একটি মৌলিক ও অপরিহার্য উপাদান। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ভূমিস্বত্ব কি হবে সে বিষয়ে নীরব থাকতে পারে না। এ বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহ ও সাহাবীদের আমলে কতগুলো ইতিবাচক নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে। ভূমি ব্যবস্থা পৃথিবীর সকল সমাজ বা দেশে বিশেষ করে সকল মুসলিম দেশে এক, একথা বলা যাবে না, তবে ইসলামের মৌলিক নীতিমালার আলোকে যে কোন দেশ নিজেদের ভূমিস্বত্ব কি ধরনের হবে তা নির্ধারণ করতে পারে।
জমির মালিকানা প্রশ্নে ইসলাম যে সুন্দর ব্যবস্থা নিরূপণ করেছে তা চাষীদের অনুকূলে। মানুষের মৌলিক চাহিদা যথা- খাদ্য বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা-এর প্রত্যেকটির জন্য জমির প্রয়োজন হয়। অতএব জমিতে প্রতিটি মানুষের স্বার্থ রয়েছে। মানব সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে প্রতিটি মানুষকেই জমির ব্যবহারিক মালিকানা দিতে হবে। এটাই ইসলামের নীতি। ভূমি বণ্টনের যে নীতি দেশের বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীকে ভূমি থেকে বঞ্চিত করে তা ইসলামি ভূমিনীতি হতে পারে না। ভূমি থেকে উৎপাদিত ফসলাদির অধিকাংশ স্বল্প সংখ্যক লোকদের হাতে কুক্ষিগত থাকবে তা ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামের দৃষ্টিতে জমির নিরঙ্কুশ মালিকানা কোন মানুষের থাকতে পারে না, জমির একচ্ছত্র মালিক হলেন আল্লাহ তাআলা। এ কারণেই জমির মালিক জমিদার হতে পারে না। ইসলাম জমিদারী প্রথার ঘোর বিরোধী। তাই ইসলাম রায়তী প্রথা প্রদান করে। এ প্রথা চাষীদের অনুকূলে। যারা সঠিক চাষী, যাদের লাঙ্গল-জোয়াল আছে, চাষের পশু আছে, চাষাবাদের সরঞ্জাম আছে, তাদের মধ্যে জমির সুষম পন্থায় বণ্টন করাই হলো ইসলামি ভূমি রক্ষার নীতি। আল্লাহ যমীনকে সকল মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন, যাতে তারা এর ফল ভোগ করতে পারে। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন-
যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা হিসেবে এবং আকাশকে ছাদ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন আর আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। তারপর ফসল উৎপাদন করেন তোমাদের উপজীবিকা হিসেবে।"
(সূরা আল-বাকারা: ২২)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে
"তিনি পৃথিবীতে উঁচু পর্বতমালাকে স্থাপন করেছেন, তাতে বরকত দান করেছেন এবং চারদিনের মধ্যে সকলের রিযিক বণ্টন করেছেন এমনভাবে যেন যে চায় সে তা সমানভাবে পেতে পারে।" (সূরা-মীম আস-সাজল। ১০)
পৃথিবীতে সকল মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী রিযকের অধিকারের প্রশ্নে সকলেই সমান। কিন্তু প্রয়োজন সকলের এক নয় বা রিষক আহরণের যোগ্যতাও সকলের সমান নয়। তাই এদিকে ইংগিত করে মহান আল্লাহ বলেন-
"আল্লাহ রিযিকে তোমাদের কাউকে কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। কিন্তু যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা অধিনস্থদেরকে তাদের ভরণ-পোষণ উপযোগী এমন কিছু দেয় না যাতে তারা তাদের সমান হয়ে যায়। তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে?" (সূরা আন-নাহল: ৭১)
আল্লাহতাআলার উক্ত বাণীতে মানুষের আয়ের ক্ষমতার পার্থক্যের কথা বলা হয়েছে, কেননা আল্লাহ সকল মানুষকে সমান ক্ষমতা দেননি। কিন্তু অন্য আয়াতে একথাও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা তাদের অধীনস্থ তথা কম উপার্জনশীল লোকদেরকে তাদের আয় থেকে কিছু দিবে না তা আল্লাহর অভিপ্রেত নয়। দুর্বল, অক্ষম বা কম সক্ষম ব্যক্তিদেরকেও তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পেতে দিতে হবে। যদি তারা তা না দেয়, তবে তা হবে আল্লাহর নিয়ামতকে অস্বীকার করার শামিল। কেননা অন্যের জীবিকার পথ বন্ধ করা কুরআনের দৃষ্টিতে দন্ডনীয় অপরাধ।
হযরত উমর (রা)-এর ভূমি ব্যবস্থা বা সংস্কারনীতি
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর মাদানী জীবনে সর্বপ্রথম ভূমি সংস্কার নীতির সূচনা হয়। পরবর্তীতে হযরত উমর (রা) ভূমি সংস্কারের ব্যাপারে ব্যাপক নীতিমালা প্রণয়ন করেন। ইসলামের বিধান অনুযায়ী একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু ভূমি সংস্কার ব্যবস্থা যে গড়ে তোলা যায় তা হযরত উমর (রা) বাস্তবে রূপ দিয়ে গেছেন। তিনি এমন একটি সফল ভূমি ব্যবস্থার রূপায়ন করে গেছেন যা সকল যুগের সকল সফল প্রশাসকের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। তাঁর খেলাফতকালে আরব উপ-দ্বীপের বাইরে সিরিয়া, ইরাক, ইরান ও মিশর বিজয় হয়, পরে এসব দেশে একটি যুগোপযোগী ভূমি সংস্কার নীতি প্রদান করা হয়। বিজয়ী আরব মুজাহিদগণ যাতে ইরাক ও সিরিয়ায় জমি কিনতে না পারে সে জন্য তিনি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
প্রাচীন যুগের জমিদারী প্রথার ন্যায় কুপ্রথা যাতে বিজিত দেশগুলোতে গড়ে উঠতে না পারে, সে জন্য তিনি অত্যন্ত সজাগ ছিলেন। পূর্বে রোমান শাসকরা কৃষকদের হাত থেকে জমি কেড়ে নিয়ে তা নিজেরা ভোগ দখল করত। খলীফা উমর (রা) বিজিত দেশের জমিদারী রাষ্ট্রীয় দখলে এনে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে তা বণ্টন করে দেন। মুসলিম বিজয়ের পূর্বে যে দেশের যে জমি যে অমুসলিম চাষীর অধিকারে ছিল সেই চাষীর জমির মালিকানা বহাল রেখে তার কাছ থেকে খারাজ বা ভূমি রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করেন। যার ফলে অভিজ্ঞ কৃষকরা দক্ষতার সাথে চাষাবাদ করে কৃষিকার্যে প্রভুত উন্নতি সাধন করে।
হযরত উমর (রা) বিজিত অঞ্চল থেকে খারাজ বা ভূমিকর আদায় করতেন, যা ভূমি রাজস্ব বা খাজনা নামে পরিচিত ছিল। এর সাথে তিনি উশর বা বাণিজ্য শুল্ক নামে একটি নতুন করও আদায় করতেন। খারাজ বা ভূমিকর ছিল রাষ্ট্রীয় আয়ের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস। অপরদিকে অমুসলমানদের নিকট থেকে জিযিয়া নামক এক প্রকার রাজস্ব আদায় করা হত। পূর্বে প্রচলিত এ সব করের হার খলীফা উমর (রা) সামান্য পরিবর্তন করেন। গণীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক-পঞ্চমাংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা রাখতেন, বাকী অংশগুলো মুসলিম মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন। পরিত্যক্ত বা উত্তরাধিকারবিহীন ভূমির মালিক ছিল রাষ্ট্র। এ ভূমি থেকেও রাষ্ট্র যথেষ্ট কর আদায় করতো। খলীফা উমর (রা) কর্তৃক এই ভূমি রাজস্ব সংস্কার ব্যবস্থায় এ নতুন কর ধার্যের ফলে ইসলামি রাষ্ট্রের আয় যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। হযরত উমর (রা)-এর ভূমি সংস্কার নীতি আজ মুসলিম বিশ্বে এক আদর্শ নীতি হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। নিম্নে হযরত উমর (রা)-এর ভূমি ব্যবস্থা বা সংস্কারের কয়েকটি নমুনা তুলে ধরা হলো:
সিরিয়া বিজয়ঃ হযরত উমর (রা) খলীফা নিযুক্ত হওয়ার পাঁচ মাস পরেই সিরিয়া বিজয় হয়। প্রবল যুদ্ধের পর সিরিয়াবাসী সন্ধি চুক্তিতে বাধ্য হয়। হযরত উমর (রা) প্রথমে সৈন্যদের মাঝে বিজিত অঞ্চলের জমিগুলো বণ্টন করে দিতে চাইলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সাহাবায়ে কিরামের বিরোধিতার ফলে তিনি তাঁর মত পরিবর্তন করেন এবং তা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে বিজিত অঞ্চলের মূল ভোগ-দখলকারীদের হাতে ন্যস্ত করেন। তার শর্ত ছিল যে, তারা এর রাজস্ব আদায় করবে- যা জনগণের কল্যাণে ব্যয়িত হবে। ফলে পরোক্ষভাবে সর্বসাধরণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
সাওয়াদ বিজয়: ১৫ হিজরী সনে ইরাকের অন্তর্গত সাওয়াদ নামক স্থান মুসলমানদের অধিকারে আসে। হযরত উমর (রা) ইরাক বিজয়ী সাআদকে লিখলেন- "যেসব অস্থাবর সম্পত্তি পাওয়া গেছে তা জনগণের মধ্যে বণ্টন করে দাও। কিন্তু জমি ও খাল ইত্যাদি দেবে না। কেননা, তা বর্তমান মানুষের মধ্যে বণ্টন করা হলে অনাগত মানুষের জন্য কিছুই থাকবে না।"
জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ
হযরত উমর (রা) তার সুদীর্ঘ খিলাফতের সময়ে ভূমি ব্যবস্থায় জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের মত এক বিপশ্চবী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দূরদৃষ্টির অধিকারী। তাই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, ইসলামি রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব ও উন্নতি কৃষক সমাজের উন্নতি ব্যতীত সম্ভব নয়। আর এজন্যই তিনি বিজিত দেশসমূহে বিশেষত আরববাসীদের জন্য জমি ক্রয়-বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছিলেন।
হযরত উমর (রা)-এর ভূমি ব্যবস্থার স্বরূপ বা ধরন নিম্নরূপ:
ক. ইকতা বা ব্যক্তি মালিকানা পদ্ধতি: ইকতা মানে কাউকে কাতিয়াহ বা এক টুকরা জমি বরাদ্দ দেয়া। অর্থাৎ এর দ্বারা কোন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জমি প্রদান করাকে বুঝায়। নবী করীম (সা)-এর সময়ে এ প্রথা চালু ছিল। কিন্তু ইসলামে নব্য সামন্ত সৃষ্টির আশংকায় হযরত উমর (রা) এ প্রথার বিরোধী ছিলেন, তবে তিনি কিছু নতুন নিয়ম চালু করেন। ক্রমাগত তিন বছর জমি অনাবাদী রাখলে ঐ জমির উপর ভূমি মালিকের কোন বৈধ অধিকার থাকবে না। হযরত বিলাল (রা)-এর মত ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও হযরত উমর (রা) এ নীতি গ্রহণ করেন। আর তা করা হয়েছিল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নের জন্যই।
খ. হিমা পদ্ধতি: এক বা একাধিক গোত্র যখন কোন জমির মালিক হতো এবং তাদের সামাজিক প্রয়োজন পূরণের জন্য ঐ জমি ব্যবহার করতো, তখন সে পদ্ধতিকে বলা হতো হিমা-পদ্ধতি। হিমা-পদ্ধতিতে ভূমির মালিকগণ তাদের উৎপাদিত শস্যের উপর উশর প্রদান করতো। কোন হিমা উশর দিতে ব্যর্থ হলে তা বাজেয়াপ্ত হতো। মূলত হিমা পদ্ধতি সমবায় চাষ পদ্ধতির প্রাথমিক রূপ।
রাষ্ট্রীয় মালিকানা
হযরত উমর (রা)-এর ফিখলাফত কালে রাষ্ট্রীয় মালিকানা পদ্ধতি ব্যাপকতা লাভ করে। এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ছিল জমির মালিক ও চাষী ছিল টেন্যান্ট। এতে চাষীর অধিকারে জমি থাকত না এবং তারা জমি হস্তান্তরও করতে পারত না। এ রাষ্ট্রীয় মালিকানা দু'প্রকারে বিভক্ত ছিল। (ক) সাওয়াকী (খ) ফাই।
ক. সাওয়াকীঃ প্রকৃতপক্ষে সাওয়াকী ছিল জনগণের সম্পত্তি। এগুলো জনগণের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হতো। তা হস্তান্তরের অধিকার কারো ছিল না এবং টেন্যান্ট খারাজ বা কর হিসেবে কিছু অর্থের বিনিময়ে ভূমি আবাদ করতো।
খ. ফাইঃ এ ধরনের জমি সরাসরি রাষ্ট্রের হাতে থাকত। রাষ্ট্র বিভিন্ন প্রয়োজনে তা কাজে লাগাত। আর রাসূল (সা) ও পরবর্তী খলীফাগণও তা করতেন। সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় জমির উপর সকল লোককেই খারাজ প্রদান করা হত।
চাষী মালিক
জমির মালিক নিজেই নিজের জমি চাষ করতো। আরবের সর্বত্র এবং সিরিয়াতে এ প্রথা চালু ছিল। উল্লেখ্য যে, ভূমির মালিকানা ভিত্তিতে চাষীগণ নিম্নোক্ত শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল।
ক. অচাষী মালিক: এ শ্রেণীর লোকদের জমি ছিল, কিন্তু তারা নিজেরা জমি চাষ না করে অন্য লোকদের দ্বারা জমি চাষ করাতো। সিরিয়া ও মিশরে এ ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।
খ. ভূমিহীন চাষী: বেসরকারি ভূমি মালিকদের জমির ভোগ-দখলদার চাষীরাই এ শ্রেণীভুক্ত। এ শ্রেণীর চাষাবাদ পদ্ধতি সর্বত্রই প্রচলিত ছিল।
গ. মালিক চাষী: এ শ্রেণীর চাষীদের চাষভূক্ত জমির উপর নিজেদের মালিকানা স্বত্ব থাকত এবং বড় বড় ভূস্বামীর সাথে এদের পার্থক্য ছিল কেবল জ্যোতের আকৃতিতে। হযরত উমর (রা)-এর খিলাফত কালে ভূমিকে পুনর্বিন্যাস করে তা চাষাবাদের আয়ত্তাধীন নিয়ে আসা হতো এবং সম্পূর্ণ শরীআতের নির্দেশমত তা পরিচালিত হতো।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামের ভূমি ব্যবস্থা ছিল পৃথিবীর সকল ভূমি ব্যবস্থার চেয়ে অধিকতর ন্যায়সঙ্গত ও সর্ববাদীসম্মত। হযরত উমর (রা)-এর ভূমি ব্যবস্থা তারই সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। আজকের দুনিয়া যদি হযরত উমরের এ নীতি গ্রহণ করতো তাহলে সমাজে সামন্তবাদ শ্রেণীর উদ্ভব হতো না এবং দরিদ্র কৃষককূল মুক্তি পেতো।
তাছাড়া কুরআন-হাদীস ভূমির যথাযথ ব্যবহারের উপর যে গুরুত্ব-আরোপ করেছে, এর ভিত্তিতে ভূমির চাষাবাদ হলে খাদ্যের অভাবে লাখ লাখ বনি আদম অনাহারে-অর্ধাহারে নিঃশেষ হতো না। যার সুস্পষ্ট প্রমাণ হযরত উমর (রা)-এর ভূমি নীতিই বহন করে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url