ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসা ও শরীআতের দৃষ্টিতে ব্যবসায়ের গুরুত্ব
ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসায় এর সংজ্ঞা ব্যবসায় বৈধ হওয়ার প্রমাণাদি উপস্থাপন ব্যবসায় হালাল হওয়ার উপকারিতা ব্যবসায় এর পরিধি ব্যবসায় এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করতে পারবেন।
ভূমিকা
ইসলামি জীবন ব্যবস্থা মানুষের ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির সনদ। এটি ভারসাম্যপূর্ণ একটি জীবন বিধান। জীবন চলতে মানুষের প্রয়োজনীয় সবকিছুর দিক নির্দেশ রয়েছে এ ধর্ম ও বিধানে।
ব্যবসায়-বাণিজ্যের সাথে মানুষের জীবন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ব্যবসায় ছাড়া পার্থিব জীবন অচল। সমাজের একজন মানুষের নিকট অন্যজনের প্রয়োজনীয় বস্তুটি পাওয়া যায়। যার নিকট অপ্রয়োজনীয় বস্তুটি রয়েছে সেটি যদি বিক্রি না করত তবে অন্য ব্যক্তিটি তার চাহিদা পূরণ করতে পারত না। আবার ক্রেতা বস্তুটি ক্রয় করার মধ্য দিয়ে স্বীয় চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়। জীবনকে সচল ও প্রাণবন্ত রাখার তাগিদে আদিকাল থেকে এ ব্যবসায় পদ্ধতি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে ধরন পরিবর্তনশীল।
এক সময় পণ্যে-পণ্যে কেনা-বেচা হত আর এখন পণ্যে-মুদ্রায় কেনা-বেচা হয়। এক সময় ব্যবসায় হত শুধু হাটে-বাজারে। বর্তমানে ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবসায় করা যায়।
ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য বিক্রেতার মুনাফা লাভ আর ক্রেতার সুবিধা ভোগ। অনেক অসৎ ব্যবসায়ী তাই চতুরতা ও ঠকবাজির আশ্রয় নিয়ে থাকে। বেশী মুনাফার আশায় ক্রেতাকে ঠকায়। ইসলাম এসব বন্ধে অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ইসলামে ব্যবসায় ও বাজারনীতি একটি স্বীকৃত বিষয়। এমনকি এক্ষেত্রে ইসলাম প্রেরণা যোগায়। ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসায় একটি জনহিতকর কাজ। ঠকবাজির স্থান নেই এ কাজে। সৎ উপায়ে ব্যবসায় একটি ইবাদত।
ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) সততামূলক জনহিতকর ব্যবসায়ের প্রচলন করেন। আরব জাহান থেকে তিনি সেসব ব্যবসায় নিষিদ্ধ করেন যা উৎপীড়ন ও ঠকবাজির নামান্তর। তিনি মাপে কম দেওয়া হারাম ঘোষণা করেন, ভেজাল দেওয়া নিষিদ্ধ করেন, বিক্রিত সম্পদে ভেজাল থাকলে ফেরৎ দেওয়ার বিধান পেশ করেন। এসব বর্ণনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় ইসলাম ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সরব ও সুস্পষ্ট দিক নির্দেশক।
বর্তমান ইউনিটে আমরা ইসলামের আলোকে ব্যবসায় ও বাজারনীতি বিষয়ক মৌলিক কিছু নীতিমালা আলোচনা আলোচনা করছি। আলোচনার সুবিধার জন্য এ ইউনিটকে ১০টি পাঠে ভাগ করা হয়েছে।
ব্যবসায়-এর সংজ্ঞা
আরবী শব্দের প্রতিশব্দ হল ব্যবসায়। শব্দটি অনেক ক্ষেত্রে শুধু বেচা-কেনা অর্থে ব্যবহৃত হয়।
বর্তমান অর্থনীতিতে ব্যবসায় বলতে যা বুঝায় সে অর্থেই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আরবী ভাষায় শব্দটিও ব্যবসায় অর্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ইসলামি অর্থনীতির পরিভাষায় ব্যবসায় বলতে বুঝায়
মুনাফা ও উপকারিতা লাভের আশায় সন্তুষ্টচিত্তে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাথে অনুরূপ মূল্যমানের লেন-দেনের যাবতীয় কার্যাবলীকে বুঝায়।
আধুনিক অর্থনীতিবিগণ ব্যবসায়ের যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তার সাথে ইসলামি সংজ্ঞার কোনরূপ বৈপরীত্য নেই। তাদের মতে ধন-সম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন অথবা ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত মানুষের যাবতীয় কার্যাবলীকে ব্যবসায় বলা হয়।
পার্থক্য হচ্ছে, যে সব ব্যবসায়ে সামান্য অকল্যাণ বা প্রতারণার আশ্রয় আছে ইসলাম তা সমর্থন করে না। যেমন মদ ও হিরোইনের ব্যবসায়। অপরপক্ষে সাধারণ ব্যবসায়নীতি এ ধরনের ব্যবসায়কে উপেক্ষা করে না।
শরীআতের দৃষ্টিতে ব্যবসায়ের গুরুত্ব
ইসলামে ব্যবসায় করা মুবাহ ও বৈধ। কুরআন ও সুন্নাহ ব্যবসায়কে সমর্থন করে। মহান আল্লাহ বলেন-
"আল্লাহ ব্যবসায়কে হালাল করেছেন আল-সুদকে হারাম করেছেন।" (সূরা আল-বাকারা: ২৭৫)
তিনি আরো বলেন-
"তবে হ্যাঁ, তোমাদের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে ব্যবসায় হলে অসুবিধা নেই।" (সূরা আন-নিসা ২৯) রাসূলুল্লাহ (সা) বিশ্বস্ত ব্যবসায় এর সমর্থনে এবং এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করে বলেন-
"সত্যবাদী ব্যবসায়ী নবী সত্যবাদী ও শহীদদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” ( তিরমিযী )
আছাড়া ইসলাম অত্যন্ত বাস্তবমুখী ও বিজ্ঞান সম্মত একটি আদর্শ জীবন ব্যবস্থা। ব্যবস্যায় বৈধ না হলে জিনিসপত্রের লেনদেন সম্বব হতো না, আর লেন-দেন না থাকলে পার্থিব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ত। যা কামা হতে পারে না। বাস্তবতার ইসলামে ব্যবসায় বৈধ।।
ব্যবসার হালাল হওয়ার কারণ
মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য-পানীয় ও বন্ত্রের প্রয়োজন। যতদিন জীবন আছে ততদিন কেউ খাদ্য-বস্ত্র থেকে বিমুখ হতে পারে না। এসব জিনিসের সবকিছু ব্যক্তির নিজের পক্ষে সমাধা করা সম্ভব হয় না। এজন্য তাকে আন্যর দ্বারস্থ হতে হয়। পারস্পরিক লেন-দেনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে তার জন্য যা প্রয়োজন তা অন্য থেকে এহণ করাবে আর যার প্রয়োজন নেই অথচ নিজের কাছে আছে তা অন্যের চাহিদা অনুযায়ী প্রদান করবে। লেন-দ্যোনর এ পন্থায় বিধি-নিষেধ নেই। সকলের চাহিদা পূরণ হওয়ার এ পদ্ধতির নামই ব্যবসায়।
ব্যবসায় বৈধ করা না হলে মানুষের জীবন ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ত।
কাগজের মুদ্রায় জিনিস লেন-দেন করা আধুনিক পদ্ধতি মাত্র। এর ফলে মাল-সামান লেন-দেন সহজ হয়।
ব্যবসায়-এর পরিধি
ব্যবসায় এর পরিধি ব্যাপক। মানুষের জীবনের প্রয়োজনীয় সব জিনিসের ব্যবসায় করা বৈধ। তবে আল্লাহ তাআলা যেসব বস্তু হারাম করেছেন তার ব্যবসায় বৈধ নয়। এজন্য মদ, রক্ত, শুকর ইত্যাদির ব্যবসায় বৈধ নয়। এব্যাপারে ইসলামি শরীয়তের মূলনীতি হচ্ছে
"শরীয়তে যা হারাম করা হয়েছে তা ব্যতীত অন্য সব জিনিস মুবাহ।"
ব্যবসায়-এর প্রভাব
ইসলামি শরীয়ত সম্মত বস্তু শরয়ী পদ্ধতিতে বেচা-কেনা হলে বিক্রিত বস্তুতে ক্রেতার মালিকানা অর্পিত হয় এবং যে অর্থ বিক্রেতা ক্রেতা থেকে যে অর্থ গ্রহণ করেছে তাতে পূর্ব মালিকানা অর্জিত হয় এবং হালাল সম্পদ হিসেবে তা নিজের প্রয়োজন মত খরচ করা বৈধ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url