হযরত মুসা (আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবন কাহিনী

 আজ এই আর্টিকেলটিতে হযরত মুসা (আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করা হলো


হযরত মুসা (আ) ছিলেন একজন বিখ্যাত নবী। তার পিতার নাম ইমরান। মাতার নাম ইউখাবেজ। তিনি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১০৪০ অব্দে মিশরে বনি ইসরাইল বংশে জন্ম গ্রহণ করেন। প্রাচীনকালে মিশরের বাদশা কে ফিরআউন বলা হতো । তাদের মধ্যে এক ফিরাউনের নাম ছিল ওলীদ। ওলীদ ছিল খুব লোভী। তার আকাঙ্ক্ষা ছিল নিজেকে উপাস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। সে তার মন্ত্রী ও বন্ধু হামানের পরামর্শে রাজ্যের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিল। জনগণ ধর্ম ও জ্ঞানচর্চা ভুলে মূর্খের পরিণত হলো। সুযোগ বুঝে সে নিজেকে উপাস্য বলে ঘোষণা করল। কিবতী বংশ ও তার অনুগত ছিল, তারা তাকে পুজো করতে শুরু করল। কিন্তু বনী ইসরাইল বংশ তখনও হযরত ইউসুফ (আ) এর একত্ববাদের ধর্ম মেনে চলত। তারা ফেরআউনকে খোদা বলতে সম্মত হলো না। ফিরআউন ও কিবতী বংশ বুনি ইসরাইলদের উপর কঠিন নির্যাতন চালাতে লাগলো। এরই মধ্যে ওলীদ স্বপ্নে দেখল যে, বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে এক ঝলক আগুন বের হয়ে এসে তার রাজপ্রাসাদ সহ গ্রাস করেছে। তার অনুসারী কিবতী বংশকেও জ্বালিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বনি ইসরাইলগণ সম্পূর্ণ নিরাপদ। আগুন তাদের স্পর্শ করছে না। ফিরআউন রাজ্যের গণকদের ডেকে এরা ব্যাখ্যা চাইল। বালআম বাউর নামে এক গণক বলল, ইসরাইল বংশের একটি পুত্র শিশু জন্মগ্রহণ করবে। সে আপনার ও আপনার রাজত্বের ধ্বংসের কারণ হবে এবং কিবতী বংশ ধ্বংস হবে। স্বপ্নের ব্যাখ্যা শুনে ফেরাউন তার সিংহাসন থেকে লাফিয়ে উঠলো সে রাজ্যময় সৈন্যদের পাহারা নিযুক্ত করল এবং জন্মগ্রহণকারী সকল ইসরাইল শিশু পুত্রকে হত্যার নির্দেশ দিল। সৈন্যরা গর্ভবতী মহিলাদের তালিকা তৈরি করল। আর জন্মগ্রহণকারী পুত্র সন্তানকে হত্যা করতে লাগলো এভাবে অসংখ্য ইসরাইলি শিশু পুত্র ফিরাউনের লোকদের হাতে নিহত হলো।

আরো পড়ুনঃ আয়াতুল কুরসী ও সূরা হাশরের শেষের ৩ আয়াত বাংলা অর্থসহ ফযীলত 

জন্ম

হযরত মুসা (আ) এর মাতা গর্ভধারণ করেছিলেন। আল্লাহর কুদরতে ফিরাউনের লোকেরা তা বুঝতেই পারেনি। তার জন্ম হলো মা ফিরাউনের ভয়ে শিশু মুসাকেক একটি সিন্দুকে ভরে আল্লাহর নির্দেশে নদীতে ভাসিয়ে দিলেন। আল্লাহর কুদরতে সিন্দুকটি ভাসতে ভাসতে নদীর তীরবর্তী ফিরাউনের রাজপ্রাসাদের ঘাটে গিয়ে ভিড়ল। ফুটফুটে মায়া ভরা চেহারার শিশুটিকে দেখে ফিরাউনের স্ত্রী হযরত আছিয়া কোলে তুলে নিলেন। আছিয়া ছিলেন ইসরাইলি কন্যা। তিনি এক আল্লাহকে বিশ্বাস করতেন। ফিরআউন তাকে জোর করে বিয়ে করেছিলেন। শিশু মূসা (আ) অন্য কারো দুধ পান না করাই হযরত মুসা (আ) এর বড় বোন মরিয়মের পরামর্শে মুসা (আ) এর মাকেই ধাত্রী নিয়োগ করা হলো। আল্লাহ তাআলার অসীম কুদরতে মুসা (আ) ফিরাউনের ঘরে তারই অর্থ ব্যয় মায়ের কোলে লালিত পালিত হতে লাগলেন।

মাদইয়ান বা মাদয়ান গমন

একবার মুসা (আ) দেখতে পেলেন কিবতী বংশীয় ফিরাউনের এক বাবুর্চি এক ইসরাইলি কাঠুরিয়ার প্রতি অত্যাচার করছে। তিনি ইসরাইলকে বাঁচানোর জন্য কি কিবতীকে একটি ঘুষি মারলেন। এতে সে মারা যায়। পরের দিনও অনুরুপ ঘটনা ঘটলো। আর এক কিবতী আগের দিনের ইসরাইলের উপর অত্যাচার করছিল। মুসা (আ) এগিয়ে গেলে ইসরাইলি ভয় পেয়ে পূর্ব দিনের ঘটনা বলে দেয়। কিবতী এসে ফিরাউনকে খবর দিল যে, কিবতীর হত্যাকারী মুসা (আ)। ফিরাউন মুসা (আ) এর দন্ড ঘোষণা করল। এই ঘটনা জানতে পেরে পেরে মুসা (আ) মিশর ছেড়ে লোহিত সাগরের পূর্ব তীরে মাদায়ান চলে যান। সেখানে তিনি বিখ্যাত নবী হযরত শুআইব (আ) এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। মুসা (আ) এর খেদমত কর্মদক্ষতা ও চারিত্রিক গুণের মুগ্ধ হয়ে তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা সফুরাকে তার সাথে বিয়ে দেন। সেখানে তিনি দশ বছর কাটান। এ সময় তিনি বকরি ও চড়িয়েছেন।

আরো পড়ুনঃ রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি সম্পর্কিত দোয়া অর্থ সহ বিস্তারিত

নবুয়ত লাভ

হযরত মুসা (আ) স্ত্রী সফুরা এবং খাদেম ও মেষ, বকরি পাল নিয়ে মায়ের সাথে দেখা করার জন্য মাদায়ান থেকে মিশর যাত্রা করলেন। পথে আগুনের খুব প্রয়োজন ছিল।

 দূর থেকে আলো দেখে তিনি আগুনের খোঁজে তুর পাহাড়ের কাছে গেলেন। তিনি পাহাড়ের পাদদেশে 'তুয়া' নামক পবিত্র উপত্যকায় নবুয়াত লাভ করেন। আল্লাহ তাআলা তাকে বললেন আমি তোমাকে মনোনীত করেছি। অতএব যা আদেশ করা হয়ে হয় তা শুনতে থাকো।  সুরা ত্বাহা : ১৩।

এ সময় আল্লাহ তা'আলা হযরত মুসা (আ) এর সাথে সরাসরি কথা বলেছিলেন। এজন্য তিনি কালিমুল্লাহ উপাধিতে ভূষিত হন।

আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা (আ) কে ফিরাউনের নিকট গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। হযরত মূসা (আ) আল্লাহর কাছে তার দুর্বলতা ও অসুবিধার কথা জানিয়ে দেওয়া দোয়া করলেন। তিনি যেন তাকে সাহস দেন। আল্লাহ তাআলা তার কাজ সহজ করে দেন এবং তার মুখের জড়তা দূর করে দেন। যাতে লোকেরা তার কথা বুঝতে পারে। তিনি তার ভাই হারুন (আ) কে ও সহযোগী হিসেবে চাইলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রার্থনা কবুল করলেন।

হযরত মুসা (আ) তার ভাই হারুন (আ) কে নিয়ে ফিরাউনের কাছে গিয়ে দিনের দাওয়াত দিলেন। তিনি আল্লাহর দেওয়া অলৌকিক ঘটনা দেখালেন। কিন্তু ফিরাউন কিছুতেই ঈমান আনলো না বরং সেই হযরত মূসা (আ) কে হত্যা করা সংকল্প করল।

দলবলসহ ফিরাউনের ধ্বংস

হযরত মুসা (আ) ফিরাউনের কুমতলব জানতে পেরে ইসরাইলিদের নিয়ে মিশর ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। সংবাদ পেয়ে ফিরাউন তার সেনাবাহিনী নিয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করল। মুসা (আ) তার অনুসারীদের নিয়ে নীলনদের তীরে উপস্থিত হলেন। সামনে নীলনদ ও পিছনে ফিরাউন বাহিনী।

এমতাবস্থায় আল্লাহ তায়ালার আদেশে হযরত মুসা (আ) হাতের লাঠি দ্বারা নদীতে আঘাত করলেন। পানি দুই ধারে সরে গেল। বনি ইসরাইলের বারোটি দলের জন্য বারোটি রাস্তা হয়ে গেল। হযরত মুসা (আ) তার লোকজন সহ নিরাপদে নদী পার হয়ে গেলেন। ফিরাউনরা নদীতে শুকনো রাস্তা দেখে সে রাস্তা ধরে পার হতে লাগল। যেই না তারা নদীর মাঝখানে পৌঁছালো অমনি রাস্তা নদীর পানিতে মিলিয়ে গেল। ফিরা ফিরাউন তার সদলবল ডুবে মরল। আল্লাহর নবীকে ধ্বংস করতে গিয়ে নিজেই সদলবলে  ধ্বংস হলো।

আরো পড়ুনঃ খলিফা হযরত আবু বক্কর (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

হযরত মুসা (আঃ) এর তাওরাত লাভ

হযরত মুসা (আ) আল্লাহর নির্দেশে তাওরাত কিতাব আনার জন্য তুর পাহাড়ে গেলেন। সেখানে তিনি ইবাদতে নিমগ্ন ছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে সামেরী নামক এক ব্যক্তির ধোঁকায় পড়ে অনুসারীদের অনেকেই গো-বৎস পূজার জড়িয়ে পড়লো। হযরত মুসা (আ) তাওরাত নিয়ে ফিরে এসে এই অবস্থা দেখে ভীষণ ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হলেন। তওবা হিসাবে গো-বৎস পূজারীদের হত্যার নির্দেশ হলো। এতে ৭০ হাজার বনি ইসরাইল নিহত হলো। হযরত মূসা (আ) হযরত ও হযরত হারুন (আ) এর কান্নাকাটিতে অবশিষ্টদের ক্ষমা করা হলো। হযরত মুসা (আ)  ১২০ বছর জীবিত ছিলেন



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url