ডাবের পানি খাওয়ার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

 আমাদের কিডনিতে পাথর জমা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত তরল পান গুরুত্বপূর্ণ। শুধু পানি ভালো উৎস হলেও স্বল্পমেয়াদী দুটি গবেষণায় দেখা যায়, ডাবের পানি পান করা সাধারণ পানির চেয়েও বেশি উপকারী হতে পারে ভুলে গবেষকরা জানান।



ডাবের পানি বাইরের সৌন্দর্য চর্চার পাশাপাশি শরীরের ভেতরেরও যত্নের প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন সুষম পুষ্টিকর খাবার। শরীরের ভিতর ও বাহিরে দুটোই ভালো রাখে এমন একটি পানীয় হলো ডাবের পানি। প্রতিদিন একটি ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন হার্বস আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকের রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমি ।তিনি জানান আয়ুর্বেদশাস্ত্রে বলা হয়, খালি পেটে জল, ভরা পেটে ফল। দুপুরের খাবারের পর একটি ডাবের পানি খেলে শরীর খুব সুস্থ এবং ত্বক হবে সুন্দর।

আরো পড়ুন ঃ তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টি গুনাগুন

ডাবের পানির ১০টি উপকারিতা

১। ত্বকের ইনফেকশন ও অন্যান্য সমস্যায় ডাবের পানির ব্যবহার বেশ প্রচলিত । ডাবের পানিতে আছে আন্টিফাংগাল ও এন্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ। এছাড়া ডাবের পানি ত্বকের অতিরিক্ত তেলকে দূর করতে ময়েশ্চারাইজার হিসাবে ও কাজ করে।

২। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে ডাবের পানি অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি যা ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণ করে।

৩। হাড়কে মজবুত রাখার জন্য দরকার ক্যালসিয়াম সহ আরো অনেক পুষ্টিগুণ। ডাবের পানিতে যে ক্যালসিয়াম আছে তা হাড়ের জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। এবং আছে ম্যাগনেসিয়াম, যা হাড়কে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

৪। যাদের অ্যাকনের সমস্যা রয়েছে, তারা ডাবের পানি তুলাই ভিজিয়ে ত্বকের উপর লাগাতে পারেন। তৈলাক্ত বা শুষ্ক যে কোন ত্বকেই ব্যবহার করতে পারেন ডাবের পানি। ডাবের পানি খেলে মুখের ত্বক আর্দ্র হয়। পাশাপাশি বেশ তরতাজা ও দেখায়। তাছাড়া ডাবের শাঁসে যে ক্যালোরি রয়েছে তা কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।

৫। অতিরিক্ত গরমের ফলে শরীরে ঘামের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পানি বেরিয়ে যায়। আবার কখনো গরমে বমির ফলে ও শরীর পানি শূন্য হয়ে পড়ে  ফলে ডিহাইড্রেশনের মত সমস্যা দেখা দেয়। ডাবে আছে কার্বোহাইডেট যা শক্তি বাড়ায় । এবং শরীরে পানি শূন্যতা পূরণ করে।

৬। ডাবের পানিতে যেয়ে প্রাকৃতিক শর্করা ও মিনারেল রয়েছে তার শরীরকে শীতল ও আর্দ্র রাখে । এজন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যোদ্ধাদের স্যালাইনের বিকল্প হিসেবে ডাবের পানি দেওয়া হতো। এর ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফাইবার কর্মশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

৭। ডাবের পানি খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে এবং ক্ষুধার প্রবণতা কমে আসে। ফলে কম খাওয়া হয় । এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডাবের পানিতে কোন চর্বি নেই, বরং এটি শরীরের অতিরিক্ত চিনি শোষণ করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৮। ডাবের পানি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। ফলে গরমের সময়ও শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকে।

৯। ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের পাচতন্ত্রকে পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

 হজম শক্তি অনেক বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া নিয়মিত ডাবের পানি খেলে অ্যাসিডিটির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

১০। ডাবের পানি প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করেন তাদের জন্য ডাবের পানি খুব উপকারী। এছাড়া ডাবের পানিতে রয়েছে ডাই- ইউরেটিক উপাদান যা ইউরিনারি ট্রাক ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে নষ্টই শুধু করেনা পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে।

আরো পড়ুন ঃ পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ 

এছাড়া ডাবের পানি খাওয়ার আছে আরো উপকারিতা

  • নিয়মিত ডাবের পানি খেলে খাবার ভালোভাবে হজম হয়। তাই শরীরের ভেতর হজম হওয়া খাবার মেদ হিসেবে জমার সুযোগেই পায় না। ফলে ওজন কমতে শুরু করে।
  • ডাবের পানি পেট পরিষ্কার রাখে তাই ব্রণ বা কালো দাগ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং সি যা ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী এবং চুলের গোড়া মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
  • ডাবের পানিতে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে। তাই ডাবের পানি নখের ভঙ্গুরতা দূর করতে সাহায্য করে। নখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
  • নিয়মিত ডাবের পানি খেলে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয় সেই সঙ্গে চোখের ফোলা ভাব কমায়। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকায় ঠোঁট ফাটা ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করে।

আরো পড়ুন ঃ চিনা বাদামের উপকারিতা ও পুষ্টিগণ সম্পর্কে বিস্তারিত 

ডাবের পানির স্বাস্থ্যগত ৭টি উপকারিতা 

পুষ্টির ভালো উৎস

ডাবের পানিতে ৯৪ শতাংশ জলীয় অংশ ও খুবই অল্প পরিমাণে ফ্যাট থাকে। এক কাপ বা ২৪০ মিলিমিটার ডাবের পানিতে  ৬০  ক্যালরি ছাড়া ও থাকে ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৮ গ্রাম চিনি, প্রতিদিনের দরকারি ক্যালসিয়ামের ৪ শতাংশ, ম্যাগনেসিয়ামের ৪ শতাংশ, ফসফরাসের ২ শতাংশ ও পটাশিয়ামের ১৫ শতাংশ। 

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকতে পারে

প্রাণীর উপর গবেষণায় দেখা যায়,্যডাবের পানিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি রেডিকেলগুলোকে পরিবর্তনে সহায়তা করে। যাতে করে এগুলো শরীরের ক্ষতি না করতে পারে, তবে এখন পর্যন্ত মানব দেহের ওপর এর সংক্রান্ত কোনো গবেষণা হয়নি।

ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা কমাতে সহায়তা করে 

গবেষণায় দেখা যায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ইঁদুরের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যগত উপকারে আসতে পারে ডাবের পানি। ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ইঁদুরের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমায় ডাবের পানি। মানবদেহে এ ধরনের প্রভাব বুঝতে আরো গবেষণা হওয়া দরকার।

কিডনিতে পাথর জমা প্রতিরোধে সহায়তা করে

কিডনিতে পাথর জমা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত তরল পান গুরুত্বপূর্ণ। শুধু পানি ভালো উৎস হলেও স্বল্পমেয়াদি দুটি গবেষণায় দেখা যায়, ডাবের পানি সাধারণ পানির চেয়েও বেশি উপকারী হতে পারে।

হৃদপিন্ডের সুস্বাস্থ্যের সহায়তা করে 

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে ডাবের পানি। ২০০৮ সালের এক গবেষণার অংশ হিসেবে গবেষকরা ইঁদুরের দুটি দলের একটি কে ফ্যাট ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার খাওয়ান । আরেকটি দলকে দেওয়া হয় ডাবের পানির উচ্চ  ডোজ (শরীরের ওজনের প্রতি ১০০ গ্রামের বিপরীতে ৪ মিলিলিটার। ৪৫ দিন পর দেখা যায় ডাবের পানি খাওয়া দলটির দেহে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড  কমেছে । মানবদেহে এমন প্রভাব নিয়ে আরো গবেষণা দরকার।

ব্যায়ামের পর পানির ঘাটতিপূর্ণ সহায়তা করে

ব্যায়ামের পর উপযুক্ত পানিও হতে পারে ডাবের পানি। এটি পানির ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি ব্যায়ামের কারণে ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণে সহায়তা সহায়ক হতে পারে। এক ধরনের খনিজ পদার্থ, যা শরীরে তরলের ভারসাম্য ধরে রাখার পাশাপাশি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

শারীকে সিক্ত রাখার সুস্বাদু উৎস

রাসায়নিক মুক্ত ডাবের পানি হালকা মিষ্টি। এতে বাদামের কিছুটা ফ্লেভার ও আছে । এ পানীয়তে অনেক কম ক্যালোরি ও কার্বোহাইডেট । এ কারণে এতে তুলনামূলক স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও কম।

ধন্যবাদ**


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url