তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টি গুনাগুন

 তরমুজ গ্রীষ্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল গুলির মধ্যে একটি এবং এটি ভিটামিন খনিজ এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর। তরমুজ খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে। তবে এর সাথে যুক্ত কিছু সমস্যা রয়েছে।



আজ আমরা জানবো তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে।

তরমুজ একটি পুষ্টিকর ফল যা ভিটামিন মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর তরমুজ খাওয়া অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করতে পারে।

লাল টুকটুকে রসালো তরমুজ বাজারে চলে এসেছে গরমের ক্লান্তি দূর করতে। গ্রীস্মের গরমে তরমুজের বিকল্প নেই। পুষ্টি গুণের দিক থেকেও ফলটির জুরি মেলা  দায়। তরমুজে আছে লাইকোপেন অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। এছাড়া তরমুজের প্রায় ৯২ শতাংশই পানি।    ফলে এই গরমে ডিহাইড্রেশন দূর করতে তরমুজের বিকল্প নেই। ভিটামিন এ, সি ও বি পাওয়া যায় তরমুজ থেকে। তরমুজে আরও থাকে লাইকোপেন ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

আরো পড়ুন ঃবেলের উপকারিতা ও অপকারিতা খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগণ

 তরমুজের পুষ্টিগুণ 

তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন প্রচুর । তরমুজে পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় সকলের কাছে প্রিয় ফল তরমুজ। শতকরা পড়ায় ৯২ ভাগ পানি রয়েছে । যা আমাদের দেহের পানির চাহিদা মিটিয়ে শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে। এতে ভিটামিন এ, সি, বি ও বি২ থাকায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন এখান থেকে পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালীন ফল হওয়ায় এটি শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে থাকে।

প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ

পানি ৯২ থেকে ৯৫ গ্রাম।

আঁশ ০.২ গ্রাম।

আমিষ ০.৫ গ্রাম।

চর্বি ০.২ গ্রাম।

ক্যালোরি ১৫ থেকে ১৬ মিলিগ্রাম।

ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম।

আয়রন ৭.৯ মিলিগ্রাম।

কার্বোহাইডেট ৩.৫ গ্রাম।

 খনিজ পদার্থ ০.২ গ্রাম।

ফসফরাস ১২ মিলিগ্রাম।

নিয়াসিন ০.২  মিলিগ্রাম।

এ ছাড়াও ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও ভিটামিন বি-২ রয়েছে।

আরো পড়ুন ঃ আঙ্গুরের  উপকারিতা পুষ্টিগণ ও লাল আঙ্গুরের উপকারিতা

জেনে নিন গরমের ফল তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা।

  • তরমুজে থাকা লাইকোপেন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • তরমুজে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, সেই সাথে থাকে আঁশ। তাই তরমুজ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও বাওয়েল মুভমেন্ট ঠিক রাখে।
  • তরমুজের ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম সহ বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে যা হৃদরোগ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
  • তরমুজে থাকা কোলিন নামের একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের জন্য উপকারী। মাংস পেশীর মুভমেন্ট, দেহকোষের মেমব্রেন গঠন, মস্তিষ্ক গঠন ও নার্ভের কার্যকারিতা বারাতে কোলিন বেশ সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
  • ত্বক ভালো রাখে তরমুজের মধ্যে থাকা ভিটামিন সি।
  • তরমুজে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড মাসেলের সুস্থতা বজায় রাখ।
  • তরমুজ ভিটামিন সি ও বি৬ সমৃদ্ধ এ দুটি উপাদান শরীরের  রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
  • খুব সামান্য ক্যালোরি আছে তরমুজে এক কাপ তরমুজ থেকে মাত্র ৪৬ ক্যালোরি পাওয়া যায় ফলে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন তরমুজ।
  • দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে তরমুজে থাকা ভিটামিন এ।

তরমুজের উপকারিতা সমূহ বিস্তারিত 

সকলের কাছে প্রিয় ফল তরমুজ খেতে তেমন সুস্বাদু  না হলে  এর উপকারিতা অনেক গ্রীষ্মকালে নিয়মিত তরমুজ খেলে শরীরের শক্তি বাড়ে।

শক্তি বৃদ্ধি করে 

যারা শারীরিকভাবে দুর্বল তাদের জন্য তরমুজ প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। এই ফল শারীরিক শক্তি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত তরমুজ খেলে শরীরের শক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পায়। বয়স বাড়লে শরীরের শক্তি হ্রাস পায় তাই মৌসুমে বেশি করে তরমুজ খেলে শরীরের শক্তি  বৃদ্ধি পায়।

পানি শূন্যতা দূর করে

 তরমুজে প্রচুর পরিমাণ পানি আছে । গরমের সময় যখন ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। তখন তরমুজ খেলে শরীরের পানি শূন্যতা দূর হয়। ফলে শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকে।

ত্বক সজীব রাখে 

তরমুজ  বিদ্যমান ভিটামিন সি ত্বককে সজীব রাখে। পাশাপাশি ত্বকের যেকোন সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে । লাইকোপিন সহ বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ তরমুজ খাওয়ার অভ্যাসে মুখে সহজে ভাঁজ  বা বলিরেখা  পড়ে না।

চোখ ভাল রাখতে সাহায্য করে 

তরমুজে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিনয়েড। তাই নিয়মিত তরমুজ খেলে চোখ ভালো থাকে এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্যারোটিনয়েড রাতকানা রোগ প্রতিরোধে  ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে । যারা রাতকানা রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার অভ্যেস করলে মূল্যবান চোখ দীর্ঘ দিন ভালো থাকবে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে 

তরমুজে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে।

কিডনি সুস্থ রাখে সাহায্য করে 

 তরমুজের রস কিডনির বর্জ্যমুক্ত করে। তাই কিডনিতে পাথর হলে চিকিৎসক গণ ডাবের পানির পাশাপাশি নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তা ছাড়া তরমুজে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকায় কিডনি সচল রাখতে তরমুজ ভালো ভূমিকা পালন করে।

শরীরের চর্বি কমায়

তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এমাইনো এসিড, যা শরীরের কোলেস্টেরল ও চর্বি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া তরমুজে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা শরীরে জমে থাকা কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা  করে।

ব্যথা নিরাময় ও শরীরের টিস্যু সুরক্ষা

 ব্যাথা নিরাময় ও শরীরের টিস্যু রোগ সুরক্ষায় তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, যা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত ,ব্যথা নিরাময়ে এবং ত্বক, দাঁত ও মাংস পেশির সুরক্ষায় প্রতিষেধক। ভিটামিন সি শরীরের জন্য খুব প্রয়োজন।  এই ভিটামিন মানবদেহে জমা থাকে না। তাই নিয়মিত তরমুজ খেয়ে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করা যায়।

স্নায়ু ও মাংস পেশী সুরক্ষায়

 তরমুজে আছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম। এটি প্রাকৃতিকভাবে শরীরে ইলেকট্রো পাওয়ার তৈরি করে। যা শরীরের মাংসপেশী ও স্নায়ু সুরক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

হৃদয় যন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন

 সঠিকভাবে হৃদযন্ত্রে রক্ত প্রবাহ মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরমুজ হৃদযন্ত্রে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহ করতে সহায়তা করে । ফলে হৃদযন্ত্রে ব্লক হওয়ার প্রবণতা অনেকটা  পেয়ে থাকে।

 হাড় মজবুত করতে  সাহায্য করে 

তরমুজ লাইকোপিনো নামক লাল উপাদান যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। তাই তরমুজ হাড় গঠন ও মজবুত করতে অত্যন্ত সহায়ক পালন ভূমিকা করে।

আরো পড়ুন ঃ আমের উপকারিতা, অপকারিতা ও ভিটামিন 

তরমুজের খাওয়ার অপকারিতা

যদিও তরমুজকে সাধারণত একটি স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে বিবেচনা করা হয় তবে এটির অত্যাধিক খাওয়ার সাথে যুক্ত কিছু সম্ভাব্য ঝুকি ও রয়েছে। এখানে তরমুজ খাওয়ার কিছু ক্ষতিকর প্রভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

  •  পেট খারাপঃ খুব বেশি তরমুজ খেলে ডায়রিয়া এবং গ্যাস সহ পেট খারাপ হতে পারে।
  • অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়াঃ  কিছু লোকের তরমুজ থেকে অ্যালার্জি হতে পারে এবং তারা আমবাত, ত্বকে চুলকানি এবং শ্বাস নিতে অসুবিধার মতো লক্ষণ গুলি অনুভব করতে পারে।
  • উচ্চ রক্তে শর্করাঃ অত্যাধিক তরমুজ খাওয়ার ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলি আরো খারাপ হতে পারে।
  • কিছু ঔষধের সাথে মিথস্কিয়াঃ  তরমুজ খাওয়া কিছু ওষুধের সাথে যোগাযোগ করতে পারে যেমনঃ রক্ত চাপের ঔষধ  এবং মূত্রবর্ধক।
  • ডায়েরিয়াঃ বেশি পরিমাণে তরমুজ খেলে এতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় ডায়রিয়া হতে পারে।

সামগ্রিকভাবে তরমুজ একটি স্বাস্থ্যকর খাবার যা বিভিন্ন সুবিধা দেয় তবে এগুলি খাওয়ার আগে সম্ভাব্য  ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

তরমুজের ব্রিজের উপকারিতা ও অপকারিতা 

তরমুজের বীজ পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং উন্নত হজম এবং বর্ণিত শক্তির মাত্রা সহ অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করতে পারে। তবে বেশি পরিমাণে তরমুজের বীজ খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। অনেক বেশি তরমুজের বীজ খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে।  যেমনঃ পেটের ব্যাথা এবং ডায়রিয়া।  উপরন্ত তরমুজের বীজে লেকটিন নামক একটি  যৌগ থাকে  তা উচ্চ মাত্রায় বিষাক্ত হতে পারে।

তরমুজ খেলে কি ওজন কমে

তরমুজ খাওয়া আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। কারণ এতে ক্যালোরি কম এবং পানির পরিমাণ বেশি।  উপরন্ত তরমুজের ফাইবার আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পণ্য রাখতে এবং আপনার সামগ্রিক ক্যালোরি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে বেশি পরিমাণ তরমুজ খেলে এতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকায় ওজন বাড়তে ও পারে।

তরমুজ খালি পেটে খেলে কি হয় 

খালি পেটে তরমুজ খেলে বেশ কয়েক কোটি উপকার হতে পারে।  এটি পাচনতন্ত্র পরিষ্কার করতে সহায়তা করে । এটি হজমের উন্নতি করতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি শরীরের ডিটক্সাইফাই করতে সহায়তা করে এবং চতুর্থত এটি প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে  সাহায্য করে। অবশেষে  তরমুজ খাওয়া আপনার ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে ও সহায়তা করে।

খালি পেটে তরমুজ খেলে হজমের সমস্যাও হতে পারে যেমন পেট ফাঁপা এবং ফোলা। উপরন্ত খালি পেটে তরমুজ খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপদজনক।

ধন্যবাদ***





এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url