বাংলাদেশের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর

  ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ হতে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহিত যুদ্ধের পর ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ  বিজয় লাভ  করে। তাই আমরা  ১৬ ডিসেম্বর দিবস হিসেবে পালন করে থাকি।

বিজয় দিবস 

বিজয় দিবস বাংলাদেশের বিশেষ দিন হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালন করা হয়ে থাকে। প্রতিবছর ১৬ই ডিসেম্বরে বাংলাদেশে দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ১৯৭২ সালের ২২শে জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে ছুটির ঘোষণা করা হয়। ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তান বাহিনীর প্রায় ৯১৬৩৪ জন সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এর অভ্যুদয় ঘটে।

আরো পড়ুনঃ বাবা দিবস বা পিতৃ দিবস কত তারিখ

এ উপলক্ষে প্রতি বছর বাংলাদেশে দিবসটি যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনার সাথে পালিত হয়ে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা ঘটে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ার অনুষ্ঠিত সম্মিলিত সামরিক কুচকাওয়াজে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর সদস্যরা যোগ দেন। কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন দেশটির রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী। এই কুচকাওয়াজ দেখার জন্য প্রচুর লোকজন সম্মিলিত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবন্ধনের অংশ হিসেবে ঢাকা সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলীয় নেতা কর্মী বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সহ সর্বস্তরের জনগণ  পুষ্পস্তবক অর্পণ করে থাকেন।



বাংলাদেশের স্বীকৃতিও

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ৯ মাস ব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে এবং বাংলাদেশ  নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত প্রায় সকল দেশ স্বাধীনতার মাসে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।সাল থেকে বাংলাদেশের বিজয় দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ  জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। চলচ্চিত্র, কবিতা, নিবন্ধ গণ মাধ্যমে ইত্যাদিতে বিভিন্নভাবে এই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়। এ দিন উপলক্ষে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারের বিজয় দিবসের আয়োজন করে থাকে। এছাড়া দেশের প্রতিটি উপজেলায় বিজয় দনুষ্ঠান ও মতবিনিময় সভা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। দেশের প্রধান সড়কগুলো জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। এই দিনে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়ে থাকে ।

আরো পড়ুনঃ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস (Valentines day) ১৪ই ফেব্রুয়ারি

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানি বাহিনী এই দিনে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন ঢাকার কেন্দ্রস্থলে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলের স্বাক্ষর করেন জেনারেল আমির আব্দুল মিয়াজি। তিনি যৌথ বাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক ও ডেপুটি চিপ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল করিম খন্দকার উপস্থিত ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী উপস্থিত ছিলেন না। 

আত্মসমর্পণ দলিলের ভাষ্য ছিল

পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডো বাংলাদেশ অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সহ সব আধা সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এ আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনী গুলো যে যেখানে আছে সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে।

এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে নির্দেশ না মানলে তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা না হবে। আত্মসমর্পণ এর শর্তাবলির অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোন সংশয় দেখা দিলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং  আরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।

লেফটেন্যান্ট -জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনী গুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষা ও দেওয়া হবে

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url