কোমর ব্যথায় ভুগছেন জেনে নিন মুক্তির উপায়

বর্তমানে বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষই কোমর ব্যথা নিয়ে  ভোগছেন। কোমর ব্যাথা নাই এমন মানুষ পাওয়ায় মুসকিল । কোমর ব্যাথা এমন এক ব্যথা যা সহজে মুক্তি দিতে চায় না। উঠতে ,বসতে, ঘুমাতে গেলেও জানান দেয় কোমর ব্যাথা। সারাক্ষণ বসে বসে কাজ। করা কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ। সে অফিস হোক কিংবা বাড়িতে হোক, কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করতে করতে কখন যে কোমর ব্যথা কে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন তা হয়তো আপনিও জানেন না। যাদের বয়স ৪০ তাদের মধ্যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি কোমরের ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন।


ব্যাথার সমস্যায় ভোগেন মানুষের সংখ্যা নেহত কম নয়, আমাদের ব্যাথা শরীরের বিভিন্ন অংশ দেখা দিতে  পারে। এক্ষেত্রে পিঠে ব্যাথা বা কোমরে ব্যথা হতে পারে বেশি যন্ত্রণাদায়ক। এক্ষেত্রে কোমরে ব্যথা থাকলে শরীরে দেখা দিতে পারে মারাত্মক সমস্যা। ঠিক মতো বসে থাকা যায় না। অনেকে আবার বসার পর উঠতে পারে না উঠলে  বসতে পারে না। তাই এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষদের অবশ্যই হতে হবে সতর্ক। এক্ষেত্রে এই সমস্যা থেকে মুক্তির রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে।

আরো পড়ুন ঃডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণের ঘরোয়া পাঁচ উপায় বিস্তারিত জানুন

আমাদের কোমর হোক বা শরীরের অন্য কোন কোথাও হোক এখনকার মানুষজন ব্যথা নাশক ঔষধ খেতে ভালোবাসেন। এই ধরনের ব্যথা নাশক ঔষধ সাময়িকভাবে ব্যথা কমাতে পারে। সমস্যা কিন্তু এর থেকে ব্যথার কোন সমাধান হয় না। ফলে ব্যথা নাশক ঔষধ খাওয়া বন্ধ করলেই ব্যথা বেড়ে যায়।

কোমর ব্যথার যত কারণ সমূহঃ

লাম্বার স্পনডাইলোসিস

 আমাদের কোমরে পাঁচটি হাড় আছে। কোমরের হাড়গুলো যদি বয়সের কারনে বা বংশগত কারণে ক্ষয় হয়ে যায় তখন তাকে লাম্বার স্পনডাইলোসিস বলে।

এলআইডি

কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ এলআইডি। ৩০ থেকে ৪০ বছর যাদের বয়স তাদের এই সমস্যাটি হতে পারে। মানুষের হাড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গা থাকে। এই ফাঁকা জায়গাটি পূরণ থাকে তালের শাঁসের মতো ডিস্ক বা চাকতি দিয়ে। এই চাকতি যদি কোন কারণে বের হয়ে যায় তখন স্নায়ুর উপরে চাপ পড়ে। ফলশ্রুতিতে কোমরে ব্যথা হতে পারে।

নন স্পিসিফিক বা লো  ব্যাক পেইন

এর কারণ অনেক  চিকিৎসাগুলো আবার বলে থাকেন অনির্দিষ্ট মূলত অনির্দিষ্ট কারণে হাড়, মাংস পেশি, স্নায়ু এ তিনটি উপাদানের সামঞ্জস্য নষ্ট হলে এই ব্যথা হয়। এটি তরুণ বা কম বয়সে তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।

অন্যান্য কারণ

এছাড়া বিভিন্ন কারণে কোমর ব্যাথা হতে পারে। মেরুদন্ডে টিউমার ও ইনফেকশন হলে কোমরে ব্যাথা হতে পারে। মাংস পেশি শক্ত হয়ে গেলে বা মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পড়লে কোমরে ব্যথা হতে পারে। শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণেও কোমরে ব্যথা হয়। একটানা হাঁটলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা কোলে কিছু বহন করলেও কোমরে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কোমর ব্যাথা থেকে দূরে থাকবেন কিভাবে

একই স্থানে বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না। জায়গা ছেড়ে মাঝে মাঝে উঠে পড়ুন ফোনে কথা বলার সময় হেঁটে হেঁটে কথা বলুন। নিয়মিত হাঁটবেন তাহলে দীর্ঘদিন শরীরের অবস্থা ভালো থাকবে তবে বেশি পরিমাণে  হাঁটা যাবেনা। কোমর ভাঁজ করে হালকা শরীরচর্চা ও করতে পারেন।

আরো পড়ুন ঃ ক্যালসিয়াম এর অভাব জনিত লক্ষণ

মাটিতে বসে কাজ করবেন না এবং নরম ম্যাট্রেস বা ফোমের বিছানায় কখনো শুবেন না।  টয়লেটে কমোড ব্যবহার করবেন। আর  চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাবেন না।


***কোমর বা পিঠে ব্যথার এই সমস্যার সমাধান হাতের কাছেই রয়েছে। এবার আমরা এই সমস্যার সমাধান করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় জেনে নিবো।

কোমর ব্যাথায় ঘরোয়া উপায় সমূহ

  • প্রথমে নারকেল তেলের ভিতরে দিন একটি কর্পূর ।এবার সেই মিশ্রণ কে গরম করে নিন। ফোটানো হয়ে গেলে ঠান্ডা করে নিন, ঠান্ডা হওয়ার পর কোমরে মেখে ফেললে  দ্রুত ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
  • প্রথমে পানি ফুটিয়ে নিন এবার সেই পানি সহনযোগ্য অবস্থায় এলে নীলগিরি তেল কয়েক ফোঁটা পানিতে দিন। তারপর যেখানে ব্যথা হচ্ছে সেখানে মালিশ করুন। দেখবেন সমস্যা কমে যাবে।
  • কোমরে ব্যথা কমাতে চাইলে দিনে ২ বার গরম পানিতে সেঁক দিন। আশা করছি সমস্যা  অনেক কমে যাবে।
  • সরিষার তেলের মধ্যে কিছুটা পরিমাণ রসুন মেখে নিন। এবার সামান্য গরম করুন এই মিশ্রণ টি, গরম হয়ে গেলে শরীরের ব্যথার জায়গায় মালিশ করে নিন। আশা করি সমস্যা কমে যাবে অনেকটাই।
  • গরম দুধে ঢেলে দিন কিছুটা পরিমাণ হলুদ এবং মধু। এবার সেই দুধ খান ব্যথা কমতে বাধ্য।
  • আদার চায়ে রয়েছে অনেক গুণ এবার কোমর ব্যাথা কম করতেও আদার চায়ের শরণাপন্ন হতে পারেন।
  • পান পাতায় লাগিয়ে ফেলুন ঘি, এরপর সেই পাতা গরম করে ব্যথার স্থানে লাগান আশা করছি সমস্যা কমে যাবে।

কোমরে ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা

সেঁক দিন ঃ কোমরের যে জায়গায় ব্যথা সেখানে সেঁক দিলে যন্ত্রণা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যাবে।

আদা ঃ আদতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে এই পটাশিয়ামের অভাবের ফলে নার্ভের সমস্যা দেখা দেয় প্রতিদিন নিয়ম মেনে আদা খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

হলুদ ঃ দুধের সঙ্গে নিয়ম করে হলুদ খেলে কোমরের ব্যথা অনেকটাই কমতে পারে।

মেথি বীজ ঃ গুঁড়ো দুধের সঙ্গে মেথি বীজের মিশ্রণ তৈরি করে ব্যথার জায়গায় মেসেজ করলে উপকার পাবেন।

লেবুর শরবত ঃ লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে ভিটামিন সি যন্ত্রণা উপশমের খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

অ্যালোভেরা ঃ প্রতিদিন নিয়ম করে অ্যালোভেরার শরবত খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।

ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খাদ্য ঃ প্রতিদিন নিয়ম করে দুধ,ঘি, পনির , ফল, শাকসবজি, বাদাম খেয়ে পানির ফল শাকসবজি বাদাম ইত্যাদি খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আর নিয়মিত শরীর চর্চা করতে ভুলবেন না। শরীর চর্চার উপর কোন ওষুধ নাই।

আরো পড়ুন ঃ রেডিওথেরাপি কাকে বলে - রেডিওথেরাপি কেন দেওয়া হয়

কোমর ব্যথা কমাতে ১০ মিনিটের ব্যায়ামঃ

কোমরে ব্যথা বেশির ভাগ মানুষেরই একটি জটিল সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা অসতর্কতা হাঁটা চলা বা ওঠা বসার কারনে হয়ে থাকে। সঠিকভাবে হাঁটা চলা বা ওঠা বসা করলে কোমর ব্যথা সাধারণত হয় না। কিছু ব্যায়াম কোমর ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। এমনকি ওষুধের চেয়েও ভালো ফল দেয়। খুব অল্প সময়ে সহজে করা যায় এমন কিছু ব্যায়ামের কথা জানা যাক।

 এই ব্যায়াম প্রতিদিন রাতে ও সকালে বিছানায় শুয়ে শুয়ে করতে পারেন সময় লাগবে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট।

১। সমতল হালকা নরম বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে দুই হাত শরীরের দুই পাশে রেখে দু পা সোজা করে শুতে হবে। এরপর হাঁটু ভাজ না করে এক পা উপরের দিকে  তুলুন যতদূর সম্ভব ১০ সেকেন্ড পা তুলে রাখতে হবে বা ১০ গুনা পর্যন্ত পা তুলে রাখতে পারেন। একইভাবে অপর পা উপরে তুলুন এবং একই সময় অনুযায়ী ব্যায়াম করুন।

২। এবার একই ভাবে হাঁটু ভাজ না করে এক সঙ্গে দুই পা তুলতে হবে এবং যতদূর সম্ভব ১০ সেকেন্ড পা তুলে রাখতে হবে বা ১০ গুনা পর্যন্ত পা তুলে রাখতে পারেন।

৩। এবার এক হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাঁটুকে বুকে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে এভাবে ১০ সেকেন্ড পার করতে হবে একইভাবে ওপর হাঁটু বুকে লাগাতে হবে এবং একই সময় পার করুন।

৪। এবার একসঙ্গে দুই হাঁটু ভাঁজ  করে দুহাতে জড়িয়ে বুকে লাগাতে হবে। যতদূর সম্ভব ১০ সেকেন্ড পা তুলে রাখতে হবে বা ১০ গুনা পর্যন্ত পা তুলে রাখতে পারেন।

৫। সর্বশেষ ধাপটি হল দু পা সোজা করে পায়ের পাতার দিকে টান করে ১০ সেকেন্ড রাখতে হবে। প্রতিটি ধাপ ১০ সেকেন্ড দীর্ঘায়িত হবে বা ১০ গোনা পর্যন্ত করতে হবে।

এ ধাপগুলো অনুসরণ করে দিনে দুই থেকে তিনবার সকাল ও রাতে করতে হবে যা কোমরের মাংস পেশির প্রদাহ কমায় ও শক্তিশালী করে তোলে। ফলে কোমরের ব্যথা সহজেই কমে আসে।

আশা করি উপরে উল্লেখিত উপায় সমূহ অনুসরণ করে  সমস্যার সমাধান সম্ভব। তবে এর পরেও সমস্যা থাকলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন তবেই ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url