রোজা সেহরি ইফতার তারাবির নিয়ত দোয়া ও মোনাজাত

 রমজান মাস কে বলা হয় সাইয়িদুস শহুর বা সকল মাসের সেরা মাস। এ মাসের প্রত্যেকটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। কারণ ইসলামে রোজাদারদের রয়েছে অনন্য মর্যাদা। রোজাদারের জীবনের গুনা ক্ষমা, নেক আমলের সওয়াব  বহুগুণ বৃদ্ধি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি জান্নাতে রাইয়ান নামক বিশেষ দরজায় এবং স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারের ঘোষণাসহ অসংখ্য ফজিলত রয়েছে রমজান মাসের রোজায়।


এছাড়া রমজান কে বলা হয় দোয়া কবুলের মাস। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের প্রতি দিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন। (মুসনাদে আহমদঃ ৭৪৫০; মুসনাদে বাজ্জার:  ৯৬২)।

তাই মাহে রমজানে সেহরি, ইফতার ও তারাবির সময় দোয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। রমজানের বিভিন্ন সময় নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত নিয়ে আলোচনা করা হলো।

আরো পড়ুন ঃগোসলের ফরজ ও সুন্নত কয়টি কি কি বিস্তারিত পড়ুন 

রোজার নিয়ত (সেহরির দোয়া) ঃ

ফরজ রোজা শুদ্ধ হওয়ার শর্ত হলো নিয়ত করা। আর নিয়ত শব্দের অর্থ হল মনের ইচ্ছা সংকল্প বা প্রতিজ্ঞা। এটি অন্তরে এর কাজ জিহ্বার সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোন কাজের শুরুতে মনের মধ্যে যে ইচ্ছা পোষণ করা হয় সেটাকে নিয়ত বলা হয়। তাই কেউ মুখে নিয়ত না করলেও তার রোজা আদায় হয়ে যাবে।

( আল-বাহরুর রায়েকঃ ২/৪৫২; আল- যাওহারুনতুন নআইয়্যইরআহ:১/১৭৬;রদ্দুল মাতার:৩/৩৩৯,৩৪১; ফতোয়ায়ে হইন্দইয়আ:১/১৯৫)।

বাংলাদেশের রোজার একটি আরবি নিয়ত প্রসিদ্ধ  আছে, যেটা মানুষ মুখে পড়ে থাকে দোয়াটি হলোঃ

উচ্চারণঃ নাওইতুআন  আছউমআ গাদাম মিন সাহরি রমাদানাল মোবারক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম।

 অর্থ হে আল্লাহ আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়ত) করলাম। অতএব আপনি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি  সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

ইফতারের দোয়া ঃ

ইফতারের আগের মুহূর্তটি অতি মূল্যবান। এটি দোয়া কবুলের সময় নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন 'তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে ও নির্যাতিতা ব্যক্তির দোয়া।

(ইবনে মাজাহ: ১৭৫২ )

হাদিসে বর্ণিত ইফতারের দোয়াটি হলোঃ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযকিকা ওয়া  আফতারতু। 

অর্থঃ হে আল্লাহ আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিজিকের মাধ্যমে ইফতার করছি।  

(আবু দাউদ: ২৩৫৮)

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ ঃ

  • নাকে কানে কিংবা লজ্জাস্থান দিয়ে কোন ওষুধ গ্রহণ করলে।
  • থুতুর সাথে বের হওয়া রক্ত গিলে ফেলা এবং রক্তের স্বাদ অনুভূত হলে।
  • ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে অনেক বমি করলে।
  • অজ্ঞতা বসত রোজা নষ্ট হয়েছে মনে করে পুনরায় পানাহ করলে।
  • বিড়ি সিগারেট কিংবা আগরবাতির ধোঁয়া বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে।
  • দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা বুটের দানা পরিমাণ খাদ্য গিলে ফেললে।
  • কোন কিছু মুখ থেকে বের করে পুনরায় খেয়ে ফেললে।
  • স্বপ্নদোষ ছাড়া অন্য যেকোনো উপায়ে বীর্যপাত হলে।
  • পাথর দানা ইত্যাদি অখাদ্যবস্তু গলা হয়ে পেটে চলে গেলে।
  • লজ্জা লজ্জা স্থানে পানি ভেজা বস্তু কিংবা আঙ্গুল প্রবেশ করালে।

বিঃ দ্রঃ কোন কারনে রোজা নষ্ট হয়ে গেলে রমজানের দিনের বেলায় প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে খাওয়া অনুচিত। এই সময়ে রমজানের সম্মানার্থে কোন কিছু পানাহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

তারাবিহ নামাজের নিয়তঃ

 আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোন কাজের শুরুতে মনের মধ্যে যে ইচ্ছা পোষণ করা হয় সেটাকে নিয়ত বলা হয়। তাই কেউ মুখে উচ্চারণ না করলেও নিয়ত শুদ্ধ হয়। যদি তারাবিহ নামাজের নিয়ত কেউ এভাবে করেন যে তারাবি দু রাকাত নামাজ কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য ইমামের পিছনে ইফতার দোয়া করে পড়ছি আল্লাহু আকবার তাতেও ইসলামিক কলারদের মধ্যে নিয়ত শুদ্ধ হবে। যদি তারাবি নামাজের নিয়ত কেউ এভাবে করেন যে তারাবির দুই রাকাত নামাজ কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য ( এই ইমামের পিছনে ইকতেদা করে) পড়ছি আল্লাহু আকবার- তাতেও ইসলামিক স্কলারদের মতে নিয়ত শুদ্ধ হবে।

আরো পড়ুন ঃ জানাযার নামাযের নিয়ম, নিয়ত ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

তারাবিহ নামাজ পড়ার নিয়ম ঃ

তারাবিহ নামাজ পড়ার নিয়ম হল ২ রাকাত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে আবার ২ রাকাত নামাজ পড়া। এভাবে ৪ রাকাত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নেওয়া। বিশ্রামের সময় তাজবীহ তাহলিল পড়া দোয়া ও দরুদ ঝ জিকির আজকার করা । তারপর আবার ২ রাকাত ২ রাকাত করে আলাদা নিয়তে তারাবিহ আদায় করা।

তারাবি নামাজের দোয়া ঃ

৪ রাকাত তারাবিহ নামাজ আদায় করার পর ব্যাপক প্রচলিত একটি দোয়া রয়েছে যা দেশের প্রায় মসজিদে পড়া হয়। 

উচ্চারণ ঃ সুবহানা ছিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল। ঝাবারুতি। সুবাহানাল মালিকিল হায়য়্যিল্লাজি  লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা; সুব্বুহুন কুদ্দুসন রাব্বুনা ও রাব্বুল মালায়িকাতি  ওয়ার রুহ'।

উল্লেখ্য এ দোয়ার সঙ্গে তারাবিহ নামাজ হওয়া কিংবা না হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। এমন নয় যে এই দোয়া না  জানলে তারাবিহ নামাজ শুদ্ধ হবে না । বরং যে কোন দোয়ায় পড়া যাবে তবে এ সময়টিতে সুন্নাহ সমর্থিত দোয়া গুলো পড়াই উত্তম।

তারাবিহ নামাজের মোনাজাতঃ

তারাবিহ নামাজের মোনাজাত অনেকে ৪ রাকাত  পর পর করেন আবার অনেককে পুরো নামাজ শেষ করে পড়েন। তবে নামাজ শেষ করে বিতির  নামাজ পড়ে মোনাজাত করা উত্তম। মোনাজাতের ক্ষেত্রে একটি দোয়া ব্যবহার হয়ে আসছে । এ মোনাজাতকে ও অনেকে আবশ্যক মনে করে। কেউ এমন মনে করেন যে এ দোয়া ছাড়া তারাবিহ নামাজের মোনাজাত হবে না। এটি মোটেও ঠিক নয়,  তবে এ দোয়াই মোনাজাত করলে যে গুনাহ হবে তাও ঠিক নয়।

 তারাবিহ নামাজের মোনাজাত টি হলো ঃ

উচ্চারণঃ  আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা জান্নাত  ওয়া নাউযুবিকা মিনান্নার।  ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি  ওয়ান নার।  বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু  ইয়া মুঝিরু। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

আল্লাহ হাফেজ***






এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url