শিশুদের জনপ্রিয় মজার গল্প ফুলপরী

ফুলপরী 

ছোট্ট সবুজ গাঁ। নাম তার কেওড়াফুলি। গাঁয়ের সবার বাড়িতেই নানা রঙের ফুল গাছ। মনে হয় ফুলবাগান করার শখ সবার। গায়ের পূর্ব পাশ ঘেঁষে চলে গেছে ছোট্ট একটা নদী। আঁকাবাঁকা পথ ধরে তার চলা। তারপর মিশে গেছে বড় নদীতে। টলটলে পানিতে হাঁসের সাঁতার কাটা, ফুলের উপর দিয়ে মৌমাছির গুনগুন, পাখির কুহু কুহু ডাক যেন গ্রামকে ভরে রাখে সারাক্ষণ।


নদীর পাড় ঘেঁষে এ গাঁয়ের প্রাইমারি স্কুল। অনেক পুরনো । গায়ে যেমন ফুল- পাখিদের মেলা, স্কুলেও তেমনি ফুলের মত শিশুদের মেলা। লেখা পড়ায় যেন তাদের নেশা। স্কুল ছুটির পর সবাই নদীর পারে যায়। কৃষ্ণচূড়া গাছটির তলায় গিয়ে সবাই যেন কি দেখতে চাই! তারপর ফিরে যায় যে যার বাড়ি। মনে মনে ভাবে, আরো পড়তে হবে।

তাদের কেন এই ভাবনা? সে কথাটাই আজ বলবো তোমাদের। অনেক দিন আগের ঘটনা। মিতালী ছিল এ গাঁয়ের মেয়ে । তখন গ্রামের অন্য চেহারা। হাতে গোনা গাছ। পাখির ডাকও তেমন শোনা যেত না। মিতালী স্কুলে যায়। স্যারদের কথা শুনে। মন দিয়ে পড়ে। পড়ালেখায় ভালো করতে থাকে।

আরো পড়ুনঃ শীতকালে শিশির পড়ে কেন - শিশির কোন ফুলে পড়ে

 একদিন স্কুল ছুটির পর মিতালী ঐ কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় এলো। গাছ ভরা ফুল। দূর থেকে দেখলে মনে হয়-- ফুলের পাহাড়। ভালো লাগে তার। সে চেয়ে থাকে গাছের দিকে। একদিন হঠাৎ দেখে, গাছের ডালে ফুট ফুটে ছোট্ট একটা মেয়ে।


মিতালী বলে, তুমি তো দস্যি মেয়ে । গাছের ডালে উঠে বসেছ? কোন গ্রামে বাড়ি তোমার? মেয়েটি হাসতে থাকে। ডালে বসে পা দোলাতে থাকে। তারপর বলে, আমি ফুল পরী। আমি তোমার মিতা।


মিতালী অবাক হয়ে যায়। তারপর বলে, তুমি কি সব সময় গাছে থাকো?  ফুল পরী মুচকি হাসে । বলে যে গাছে ফুল ফোটে সে গাছেই থাকি। আর সবাই আমাকে দেখতেও পায় না। যারা ভালো করে পড়ালেখা করে তারাই আমাকে দেখতে পায়। কিছু সময় গল্প করে পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে যায় ফুল পরী। মিতালী ঘরে ফিরে আসে।

পরদিন স্কুলে গিয়ে মিতালী বন্ধুদের সব কথা খুলে বলে। কিন্তু কেউ তার কথা বিশ্বাস করতে চায় না । ফলে ছুটির পর বন্ধুদের নিয়ে মিতালী যায় কৃষ্ণচূড়ার তলে।


সবাইকে হাত দিয়ে দেখায়। বন্ধুরা বলে, 'কই' মিতালী বড় বড় চোখ করে বলে, ওই যে, দক্ষিণের ডালে। ফুল পরী পা দোলায় আর মিটি মিটিয়ে হাসে। ফুল পরী কথা বলে ওঠে, যারা ভালো করে পড়ালেখা করে শুধু তারাই আমাকে দেখতে পায়।  সবাই ফুল পরীর কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। মিতালী হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।


এবার সারা গ্রামে পড়ালেখার ধুম পড়ে যায়। শুরু হয় ফুল গাছ লাগানো । ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় সবার বাড়ির আঙিনা । পড়ালেখার গুনগুন শব্দ আর ফুলের গন্ধ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় কেওড়াফুলি গ্রাম।

ধন্যবাদ***

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url