বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন ও তার প্রতিক্রিয়া
বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন ও তার প্রতিক্রিয়া বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন বঙ্গভঙ্গ রদের ফলাফল আলোচনা করতে পারবেন।
বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন
বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলায় অভূতপূর্ব জাগরণ ঘটে। লর্ড কার্জন ঢাকাকে প্রশাসনিক কেন্দ্র ঘোষণা করেন এবং স্যার ফুলারকে গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। বঙ্গভঙ্গের পরবর্তী সময়ে নতুন প্রদেশে হাইকোর্ট ভবন, আইন পরিষদ ভবন ইত্যাদি গড়ে উঠে। সঙ্গত কারণেই পূর্ব বাংলার জনসাধারণের এলিট অংশ তাদের বহু রাজনৈতিক ও সামাজিক দাবি পূরণে সক্ষম হয়। বঙ্গভঙ্গ উচ্চবিত্ত হিন্দু কায়েমী স্বার্থের মূলে আঘাত হানে। শুরু হয় তাদের পক্ষ থেকে এর চরম বিরোধিতা। ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ বঙ্গভঙ্গকে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির এক ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেন। তারা বাংলা প্রদেশের বিভক্তিকরণকে মাতৃভূমির অঙ্গছেদ বলে আখ্যায়িত করেন। এদের মধ্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন স্যার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, শ্রী অরবিন্দু ঘোষ, শ্রীবিপীন চন্দ্র পাল, দাদাভাই নওরোজী প্রমুখ। তাঁরা ব্রিটিশ সরকারের বাংলা প্রদেশের বিভক্তিকরণকে অযৌক্তিক ও অপমানকর বলে মন্তব্য করেন। শুরু হয় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে স্বদেশী পণ্য ব্যবহার এবং বিদেশি পণ্য বর্জন শুরু হয়। সমগ্র বাংলা ও বাংলার বাইরে চলতে থাকে জনসমাবেশ এবং প্রতিবাদ সভা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি অচল হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আন্দোলন সহিংসরূপ নেয়। এ সময় কংগ্রেস নেতৃবর্গও বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। যার ফলে আন্দোলন আরো তীব্র হয়। আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশ সরকার নত হতে বাধ্য হয়। অতঃপর ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর সম্রাট পঞ্চম জর্জের রাজ্যাভিষেকে দিল্লির দরবারে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করে।
আরো পড়ুন:
বঙ্গভঙ্গ রদের প্রতিক্রিয়া
বঙ্গভঙ্গ রদের প্রাক্কালে ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশ এবং পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা ইত্যাদি অচল হয়ে পড়ে। ফলে ব্রিটিশ সরকার এ আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। যদিও পূর্বে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করছিল যে, বঙ্গভঙ্গ একটি 'স্থায়ী ব্যবস্থা' এবং কোন চাপের মুখে তা রদবদল করা হবে না। বঙ্গভঙ্গ রদকে এলিট মুসলমান সম্প্রদায় এই ঘোষণার বরখেলাপ মনে করে।
বঙ্গভঙ্গ রদের ফলাফল
আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ সরকার পুনরায় বাংলা প্রদেশ গঠন করে। পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলা এর অন্তর্ভুক্ত হয়। এ দিকে আসামকে পূর্ব বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্বের ন্যায় পৃথক শাসনাধীনে নিয়ে আসা হয়। বিহার, উড়িষ্যা ও ছোট নাগপুর (যা পূর্বে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত ছিল) নিয়ে পৃথক প্রদেশ গঠিত হয়। বঙ্গভঙ্গ আনুষ্ঠানিকভাবে রদ হলেও পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার মধ্যে একটি বিভক্তি রেখা রয়ে যায়। পূর্ব বাংলার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ সচেতন হয় এবং অধিক সংগঠিত হওয়ার কথা উপলব্ধি কবে। হিন্দু ও মুসলমান সম্মিলনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ ব্রিটিশ বিরোধী তৎপরতা সঙ্কটের মধ্যে পতিত হয়।
আরো পড়ুন:
সারকথা
বঙ্গভঙ্গকে হিন্দু সম্প্রদায়সহ মুসলমানদের সচেতন অংশ মাতৃভূমির অনুচ্ছেদ হিসেবে মনে করেছিলেন। উপরন্ত বঙ্গভঙ্গ কলকাতা ভিত্তিক হিন্দু জমিদার, মহাজন, ব্যবসায়ী, উকিল, মোক্তার প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর কায়েমীস্বার্থে কুঠারাঘাত হানে। ফলে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, অরবিন্দ ঘোষ, বিপীন চন্দ্র পাল প্রমুখের নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তা স্বদেশী আন্দোলনে রূপ নেয়। স্বদেশি পণ্য ব্যবহার এবং বিদেশি পণ্য বর্জন ছিল এর মূল কথা। আন্দোলনের চাপে বেসামাল হয়ে ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর সম্রাট পঞ্চম জর্জ ও দিল্লির দরবারে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করেন। পূর্ববঙ্গের মুসলমান এলিট সম্প্রদায় এই ঘোষণাকে তাদের নিকট দেয়া ব্রিটিশ সরকারের অঙ্গিকারের বরখেলাপ বলে মনে করেন। তাদের মধ্যে ব্রিটিশদের প্রতি আস্থাহীনতা দেখা দেয়। পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলা পুনরায় একই প্রদেশে অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে বিহার ও উড়িষ্যাকে বাংলা থেকে বিযুক্ত করে পৃথক পৃথক প্রদেশ গঠন করা হয়।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url