ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির সাথে ইসলামি অর্থব্যবস্থার তুলনা
ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির সাথে ইসলামি অর্থব্যবস্থার তুলনা করতে পারবেন।
ভূমিকা
মানব সভ্যতার ইতিহাসে বহু সিসটেম বা ব্যবস্থা ও মতবাদের উত্থান-পতন ঘটেছে। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মুক্তির উদ্দেশ্যে ধারাবাহিকভাবে নৈরাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, পুঁজিবাদ, সমাজবাদ, ফ্যাসীবাদ এবং ইসলামি অর্থনৈতিক মতবাদের জন্ম হয়েছে। এগুলোর মধ্যে পুঁজিবাদ ও সমাজবাদকে আধুনিক তথা সাধারণ অর্থনৈতিক মতবাদ বলা হয়ে থাকে। এ দু'টি মতবাদই প্রান্তিক ও চরম ভাবাপন্ন এবং সর্বোপরি মানবতা বিরোধী ও নৈতিকতা বিবর্জিত। আর ইসলাম এতদুভয়ের মধ্যবর্তী একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও কালজয়ী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করেছে।
নিম্নে ইসলামি অর্থব্যবস্থার সাথে আধুনিক তথা সাধারণ অর্থনীতির তুলনামূলক আলোচনা করা হল:
১. ইসলামি অর্থব্যবস্থা সমাজে ইসলামি আদর্শে আস্থাশীল মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে আধুনিক অর্থনীতি সমাজে বসবাসকারী মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা করে।
২. ইসলামি অর্থব্যবস্থা পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত পথে' বৈধ আয়কে অনুমোদন করে। মহান আল্লাহ বলেন, "হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র তা থেকে ভোগ কর এবং কখনো শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।" "আল-কুরআন" কিন্তু আধুনিক অর্থব্যবস্থা আয়-উপার্জনের বৈধ বা অবৈধ পথ নিয়ে মাথা ঘামায় না।
৩. ইসলামি অর্থব্যবস্থা কেবলমাত্র অর্থনৈতিক উপাদান নিয়ে আলোচনা করে না। তা রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক উপাদান নিয়েও আলোচনা করে। অন্যদিকে, আধুনিক অর্থনীতি মূলত অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
৪. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় ভোক্তা কিংবা উৎপাদক সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নয়। একমাত্র মহান আল্লাহ তাআলাই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। অন্যদিকে, আধুনিক অর্থনীতিতে ভোক্তা কিংবা উৎপাদক সার্বভৌম ক্ষমতার দাবিদার।
৫ ইসলামি অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি তার সম্পত্তির চূড়ান্ত মালিক নয়। আপেক্ষিক অর্থে মালিক মাত্র। পক্ষান্তরে, আধুনিক অর্থনীতিতে ব্যক্তি তার সম্পত্তির চূড়ান্ত মালিক।
৬. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় সম্পদ সীমিত নয়। কিন্তু সম্পদকে ব্যবহার উপযোগী করার উপায় কিংবা প্রচেষ্টা সীমিত। পক্ষান্তরে আধুনিক অর্থনীতিতে সম্পদ সীমিত।
৭. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন, ভোগ কিংবা বণ্টন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন। পক্ষান্তরে আধুনিক অর্থনীতিতে উৎপাদন, ভোগ কিংবা বণ্টন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের চূড়ান্ত লক্ষ্য।
৮. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের লক্ষ্য কেবল মুনাফা অর্জন নয়। সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে গরীব ও নিঃস্বদের ভোগের নিমিত্ত একতরফা বিনিময়ের (অর্থাৎ কোন দাম না নিয়ে) জন্যও ইসলামি অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু আধুনিক অর্থনীতিতে উৎপাদনের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে মুনাফা অর্জন।
৯. বাজার অর্থনীতিতে কি কি দ্রব্য উৎপাদিত হবে তা কার্যকরী চাহিদা (effective demand) দ্বারা নির্ধারিত হয়। পক্ষান্তরে, ইসলামি অর্থনীতিতে তা কার্যকরী চাহিদা এবং গরীব ও দুঃখীর জন্য অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা (economic provisioning) বিধানের বিবেচনার দ্বারা নির্ধারিত হয়।
১০. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় পণ্য বিনিময় হচ্ছে সমন্বিত বিনিময় এবং এক তরফা হস্তান্তর (integrated exchange and one-way transfer) যা ইসলামি মূল্যবোধ, বাজার এবং বাজার বহির্ভূত উপাদান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অন্যদিকে, আধুনিক অর্থনীতিতে বিনিময় সম্পূর্ণরূপে বাজার ব্যবস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
১১. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় সমাজকল্যাণের ধারণা আধুনিক সমাজকল্যাণের ধারণা থেকে পৃথক। ইসলামি অর্থব্যবস্থা একটি লক্ষ্যের ভাল-মন্দ বিবেচনা করে এবং এটা লক্ষ্য-নিরপেক্ষ নয়। ইসলামি অর্থব্যবস্থায় সমাজ কল্যাণকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে যা আর্থিক মানদন্ড দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। ইসলাম মানবিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে ত্যাগকে উৎসাহিত করে এবং এ ত্যাগের পুরস্কার মহান আল্লাহ তাআলার কাছে রক্ষিত আছে। ত্যাগ ও কল্যাণের সুস্পষ্ট নীতিমালা কুরআন ও হাদীসে বিধৃত আছে। অন্যদিকে, আধুনিক সমাজকল্যাণের বিষয়টি ত্যাগের সাথে সম্পর্কিত নয় এবং এর মানবকল্যাণের ধারণাটিও কুরআন-হাদীস সমর্থিত ধারণা নয়।
১২. ইসলামি অর্থব্যবস্থা অনুযায়ী মানুষ একটি সামাজিক, নৈতিক এবং ধর্মীয় জীব। ইসলামি অর্থব্যবস্থায় নৈতিকতাকে প্রাধান্য দেয়। অন্যদিকে আধুনিক অর্থনীতি অনুযায়ী মানুষ শুধু একটি সামাজিক জীব। নৈতিকতার বিষয়টি এখানে উপেক্ষিত।
১৩. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় মানুষের সকল কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার নাম অভাব নয়। কুরআন-হাদীস কর্তৃক অনুমোদিত এবং মানুষের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে অভাব। অন্যদিকে, আধুনিক অর্থব্যবস্থায় যে কোন বস্তু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে অভাব।
১৪. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় অভাব অনিয়ন্ত্রিত এবং লাগামহীন নয়। আধুনিক অর্থব্যবস্থায় অভাব অনিয়ন্ত্রিত এবং অসীম।
১৫ ইসলামি অর্থব্যবস্থায় কোন অভাবটি প্রথমে পূরণ করতে হবে সেটা ইসলামি মূল্যবোধের দ্বারা প্রভাবিত। আধুনিক অর্থব্যবস্থায় কোন অভাবটিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে সে ব্যাপারে কোন ধরাবাঁধা নীতিমালা নেই।
১৬. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় অভাব পূরণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার (priority) নির্ধারণের বিষয়টি সমাজকল্যাণ সম্পর্কিত বিবেচনার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ইসলামি অর্থব্যবস্থা অনুযায়ী ঐ অভাবটিই সর্বাগ্রে পূরণ করতে হবে, যদ্বারা সর্বাধিক সমাজকল্যাণ সুনিশ্চিত হয়। কিন্তু আধুনিক অর্থব্যবস্থায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ ব্যক্তিগত খেয়াল-খুশীর ওপর নির্ভরশীল।
১৭. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় দাম বহির্ভূত বাজার ব্যবস্থা থাকতে পারে। শূন্য দাম কিংবা ঋণাত্মক দামে ক্ষেত্র বিশেষে পণ্য বিনিময় চলতে পারে। কিন্তু আধুনিক অর্থনীতিতে দাম বহির্ভুত কোন বাজার থাকতে পারে না। তাই ইসলামি অর্থনীতির বাজার আধুনিক অর্থনীতির বাজারের চেয়ে বড়।
১৮ ইসলামি অর্থব্যবস্থায় বাজার-দাম বণ্টন ধারণার (equity consideration) ওপর প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু আধুনিক অর্থব্যবস্থায় বাজার-দাম মুনাফার ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠত। ফলে ইসলামি অর্থব্যবস্থায় বাজার-দাম আধুনিক অর্থনীতির বাজার-দামের চেয়ে নিম্ন।
১৯. ইসলামি অর্থব্যবস্থা সুদবিহীন এবং সুদ জাতীয় আয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়। পক্ষান্তরে, আধুনিক অর্থনীতিতে সুদ জাতীয় আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
২০. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় ভোগের পাঁচটি নীতি রয়েছে। নীতিগুলো হচ্ছে- (১) বিচার সাম্য, (২) পরিচ্ছন্নতা, (৩) আত্মসংযম, (৪) উপকারিতা এবং (৫) নৈতিক কল্যাণ। ভোগের ক্ষেত্রে এ পাঁচটি নীতি মেনে চলতে হবে। কিন্তু আধুনিক ত আধুনিক অর্থনীতিতে ভোগের ক্ষেত্রে এরূপ ধরা-বাঁধা কোন নিয়ম নেই।
২১. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় বর্তমান ভোগ হচ্ছে প্রত্যাশিত ও কাঙ্ক্ষিত আয়ের (expected desirable income) অপেক্ষক। অন্যদিকে, আধুনিক অর্থনীতিতে বর্তমান ভোগ হচ্ছে বর্তমান আয়ের অপেক্ষক। ইসলামি অর্থনীতি গরীব ও নিঃস্ব লোকদের প্রতি উদাসীন নয়। তাদের বর্তমান ভোগ বর্তমান আয় দ্বারা মেটানো যায় না। তাদের জন্য দান, খয়রাত ও বিভিন্ন সমাজ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আয় সৃষ্টি করা হয়। এ আয় হচ্ছে গরীব ও নিঃস্ব লোকের জন্য প্রত্যাশিত ও কাঙ্ক্ষিত আয়। অনুরূপভাবে, যারা ধনী তাদের অতিরিক্ত আয়, যাকাত এবং ফিতরা প্রভৃতির মাধ্যমে বণ্টনের পর অবশিষ্ট যে আয় থাকবে, তাই হচ্ছে তাদের প্রত্যাশিত কাঙ্ক্ষিত আয়। সুতরাং ধনী ও গরীব উভয়ের ভোগও প্রত্যাশিত কাঙ্ক্ষিত আয়ের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু আধুনিক অর্থনীতিতে গরিব ও নিঃস্বদের জন্য দরদ অনুভব করার কোন অবকাশ নেই। আধুনিক অর্থনীতিতে নৈতিক বিবেচনাও অনুপস্থিত। তাই আধুনিক অর্থনীতিতে বর্তমান ভোগ কেবলমাত্র বর্তমান আয়ের ওপর নির্ভরশীল। যাদের আয় নেই, তাদের ভোগ করার কোন অধিকার নেই।
২২. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় কার্যকরী চাহিদা কার্যকরী প্রয়োজনের সাথে (effective need) সম্পৃক্ত। কার্যকরী প্রয়োজন হচ্ছে এমন কতকগুলো মৌলিক মানবিক প্রয়োজন, যেগুলো মানুষের জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যক। গরীব ও নিঃস্বদের ক্রয়ক্ষমতা নেই বলে তারা ইসলামি অর্থব্যবস্থায় কার্যকরী প্রয়োজন থেকে কোনক্রেমেই বঞ্চিত হবে না। কার্যকরী প্রয়োজন বস্তুগত ও অবস্তুগত সকল প্রয়োজনকে বুঝায়। সুতরাং ইসলামি অর্থব্যবস্থায় কার্যকরী প্রয়োজন কার্যকরী চাহিদার চেয়ে ব্যাপক। অতএব ইসলামি অর্থব্যবস্থা হচেছ- কার্যকরী প্রয়োজন-কার্যকরী চাহিদা+মৌলিক প্রয়োজন-এর সমষ্টি। কিন্তু আধুনিক অর্থব্যবস্থায় কার্যকরী চাহিদাই একমাত্র চাহিদা।
২৩. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় যোগানের ধারণাটিও একটু ভিন্ন। ইসলামি অর্থনীতিতে যারা পুঁজির অভাবে উৎপাদন করতে পারে না, তাদেরকে পুঁজির যোগান দেয়াও একটি নৈতিক দায়িত্ব মনে করা হয়। ফলশ্রুতিতে ইসলামি অর্থনীতিতে যোগান আধুনিক অর্থনীতির যোগানের চেয়ে ভিন্ন। ইসলামি অর্থব্যবস্থায় যোগান হলো সম্ভাবনাময় ক্ষমতাভিত্তিক যোগান (Potential Capacity-based supply), যা কম সুবিধাপ্রাপ্ত উৎপাদকের যোগান এবং বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত উৎপাদকের যোগানের যোগফলের সমান। বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত উৎপাদক অবকাঠামোগত অসুবিধার কারণে দক্ষন্তরে উৎপাদনে সক্ষম নয়। সুতরাং ইসলামি অর্থনীতিতে মোট যোগান আধুনিক অর্থনীতির মোট যোগানের চেয়ে বড়।
২৪ ইসলামি অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত পছন্দ হচ্ছে (individual preference) শর্তসাপেক্ষ এবং সমাজ কল্যাণ নিরপেক্ষ নয় বরং তা কুরআন-হাদীসে বর্ণিত নীতিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, শহরে যদি রাস্তায় অতিরিক্ত মোটরগাড়ীর ভিড় জমে যায়, তবে তা পথচারীদের অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে কিংবা অতিরিক্ত শিল্প-কারখানা স্থাপনের ফলে শিল্প-কারখানার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ হতে পারে। এ সকল বাহ্যিক প্রভাব কেবলমাত্র বেআইনী যে তা নয়, তা কুরআন ও সুন্নাহর নীতিমালা এবং নৈতিকতারও পরিপন্থী। কিন্তু আধুনিক অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত পছন্দে এরূপ কোন নৈতিকতাবোধ, ধর্মীয় অনুশাসন কিংবা সমজকল্যাণের বিবেচনা জড়িত নয়। ইসলামি অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত পছন্দের (individual choice or preference) ক্ষেত্রে দক্ষতার পাশাপাশি বণ্টনসাম্য (equity) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কিন্তু আধুনিক অর্থনীতিতে দক্ষতার বিবেচনাটাই মুখ্য।
২৫ ইসলামি অর্থব্যবস্থায় দ্রব্য ও সেবা কিভাবে উৎপাদিত হবে, তা উৎপাদনকারী ফার্মসমূহের মধ্যে সীমিত প্রতিযোগিতা ও সচেতন সহযোগিতার দ্বারা নির্ধারিত হয়। পক্ষান্তরে, বাজার অর্থনীতিতে তা নির্ধারিত হয় ফার্মসমূহের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার দ্বারা।
২৬. ইসলামি অর্থনীতিতে রাজস্ব ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, আয়ের সুষম বণ্টন এবং গরীব ও নিঃস্ব লোকদের মাঝে মৌলিক প্রয়োজনীয় (basic needs) দ্রব্যাদি সরবরাহ করা। ইসলামি রাজস্ব ব্যবস্থা সাধারণত এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য যাকাত, জিজিয়া, খারাজ বা ভূমিকর, ঘুমুস (khums), লুকতাহ্ রাজস্ব (lukatah revenue), সাদকাহ (sadaqah), কাফ্ফারা আদায় করে থাকে। অন্যদিকে, আধুনিক অর্থনীতিতে রাজস্ব ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে রাষ্ট্রীয় খরচ নির্বাহের জন্য অর্থসংগ্রহ করা এবং করই হচ্ছে তার মোক্ষম অস্ত্র। সমাজকল্যাণের ধারণা এরূপ অর্থনীতিতে গৌণ বা অনুপস্থিত।
সারকথা
ওপরে বর্ণিত সাধারণ তথা আধুনিক অর্থনীতির সাথে ইসলামি অর্থব্যবস্থার তুলনামূলক বিচারে দেখা যায়, ইসলামি অর্থনীতিই সর্বজন গৃহীত ও সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ এটি মহান আল্লাহ প্রদত্ত। ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা মানবজাতির অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান দিতে অক্ষম। কারণ এ উভয় ব্যবস্থা আজ মানব জাতির প্রধান ও মৌলিক সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদেরকে একমাত্র কল্যাণধর্মী, আদর্শবাদী ও উদার অর্থব্যবস্থার দিকে ধাবিত হতে হবে। আর এ ব্যবস্থার নাম হলো ইসলামি অর্থব্যবস্থা, যা মানবতার সকল অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url