হযরত ইয়াহইয়া (আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
আজ এই আর্টিকেলটিতে হযরত ইয়াহইয়া (আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী সর্ম্পকে আলোচনা করা হলো
ইয়াহইয়া (আঃ) এর পরিচিতি
হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) হযরত যাকারিয়া (আঃ) এর পুত্র ছিলেন। এব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন।
অর্থঃ হে যাকারিয়া: আমি নিঃসন্দেহে তোমাকে সুসংবাদ প্রদান করেছি এনন্তন্তনন্তননন্তন্তনননক ঔঞ পুত্রের; তার নাম ইয়াহইয়া হবে। এর পূর্বে কারো জন্য আমি এ নাম নির্দারিত করিনি। (সূরা মারইয়াম-৭)
হযরত যাকারিয়া (আ)-এর শাহাদতবরণের পর তাঁর পুত্র হযরত ইয়াহইয়া (আ) নবুয়ত লাভ করলেন। তিনি দীর্ঘকাল পর্যন্ত বনী ইস্রাঈলদের মধ্যে ধর্ম প্রচার করেছিলেন। তিনি দিবারাত্রির অধিকাংশ সময়ই মসজিদে আকসায় বসে ইবাদাত এবং বনী ইস্রাঈলদেরকে উপদেশ দান করতেন।
অর্থ: অতপর যখন যাকারিয়া হুজরার মধ্যে নামায রত ছিল। তখন ফেরেশতারা তাঁকে সম্বোধন করে বলছেন, হে যাকরিয়া। আল্লাহ পাক আপনাকে এক সন্তান ইয়াহ ইয়া এর সুসংবাদ প্রদান করবেন। আর তিনি আল্লাহ পাকের ও তাঁর বান্দাগণের দৃষ্টিত সন্মানিত এবং যাবতীয় পাপকাজ হতে পবিত্র হবেন। আর নেককারদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে। নবী হবেন। (আল-ইমরান-৩৯)
কিন্তু অল্পসংখ্যক লোকই ধর্মপথে এসেছিল। অধিকাংশ লোকই তাঁর সাথে শত্রুতা এবং বিরুদ্ধাচরণ করেছিল।
হযরত ইয়াহইয়া (আ)-এর সময় একটি ঘটনা ঘটলঃ জনৈক রমণী তার দ্বিতীয় স্বামীর সাথে তার প্রথম স্বামীর ঔরসজাত তার গর্ভের একটি কন্যাকে বিবাহ দিতে চাইল, কিন্তু হযরত ইয়াহইয়া (আ) এতে বাধা প্রদান করে বললেন যে, এ হতে পারে না, যেহেতু শরীয়তে এ সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ঘটনায় তাঁর সাথে বনী ইস্রাঈলদের মারাত্মক বিবাদ দেখা দিল।
ঐ স্ত্রীলোকটির দ্বিতীয় স্বামী বনী ইস্রাঈল বংশীয় একজন প্রভাবশালী নেতা ছিল; সুতরাং বনী ইস্রাঈলদের প্রায় সকলে তাঁর পক্ষে যোগদান করে হযরত ইয়াহইয়া (আ)-এর বিরোধিতায় অবতীর্ণ হল এবং তারা হযরত ইয়াহইয়া (আ)-এর নিষেধের প্রতি তোয়াক্কা না করে ঐ বিবাহ সম্পন্ন করল। অধিকন্তু তারা হযরত ইয়াহইয়া (আ)-কে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হল। একদিন স্ত্রীলোকটির ঐ দ্বিতীয় স্বামীর আদেশ অনুযায়ী হযরত ইয়াহইয়া (আ)-কে বেঁধে তার নিকট উপস্থিত করা হল।
আরো পড়ুন: হযরত শোয়ায়েব (আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
এমনি সময় হযরত ইয়াহইয়া (আ)-এর কাছে ফেরেশতা জিব্রাইল এসে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি আদেশ করলে আমি এ পাপীদিগের শাস্তিস্বরূপ তাদেরকেসহ সমগ্র শহরটাকে ধ্বংস করে দিতে পারি।।
হযরত ইয়াহইয়া (আ) বললেন, না এদেরকে এভাবে ধ্বংস করে দেয়া আমি কিছুতেই ভাল মনে করি না। আল্লাহ আমার অদৃষ্টে যা লিখে রেখেছেন তা নিশ্চয়ই ঘটবে। তবে এদেরকে আমি শাস্তি প্রদান করতে চাই না।
পাপীষ্ঠগণ আর দেরি করল না। তারা হযরত ইয়াহইয়া (আ)-এর মাথা দ্বিখণ্ডিত করে ফেলল।
এ ঘটনার পর ফেরেশতাগণ আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন, হে মাবুদ! তুমি তোমার শত্রুদেরকে শাস্তি প্রদান না করে তোমার পরম ভক্ত নবী নিরপরাধ হযরত ইয়াহইয়া (আ)-কে তাঁর শত্রুদের হাতে প্রাণ বিসর্জন করালে এর কারণ বুঝলাম না।
আল্লাহতায়ালা বললেন, ফেরেশতাগণ! প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী শত্রুদেরকে ধ্বংস করে বন্ধুর নিরাপত্তা রক্ষা করতে হয়। বস্তুতঃ আমার কাজটি ঐ প্রচলিত রীতির বিরোধী বলে বোধ হলেও আসলে তা নয়। আমি যখন দেখলাম যে, ধর্মবিরোধীগণ আমার নবীর সাথে মারাত্মকভাবে শত্রুতায় লিপ্ত। তারা কিছুতেই তাকে মেনে নিচ্ছে না, তখন তাদেরকে এর চরম প্রতিফল দান করার জন্য তাদের দ্বারা একটি গুরুতর অপরাধ করালাম। আর এর দ্বারা আমার নবীর উপরও কোন অবিচার করিনি। কেননা নবী-রাসূলদের কাছে দুনিয়া অপেক্ষা আমার নৈকট্যই অধিক কাম্য। এ কামনাকে দ্রুত সফল করার লক্ষ্যেই আমি নবীর শত্রুদের দ্বারা এ কাজ ঘটালাম। এর মাধ্যমে আমি আমার নবীকে পার্থিব ঝামেলা হতে নিরাপদ করলাম এবং তাঁর শত্রুদেরকে গুরুতর অপরাধের জন্য চরম শাস্তির যোগ্য করে নিলাম। তারা ইহকাল-পরকাল উভয় স্থানে এর প্রতিফল ভোগ করবে।
শুনা যায়, হযরত ইয়াহইয়া (আ) শহীদ হওয়ার পরেই উল্লিখিত স্ত্রীলোকটি ও তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত কন্যাটি ঘরের ছাদ হতে মাটিতে পতিত হয়ে প্রাণ হারাল এবং এর কিছু দিন পরে তার স্বামী সে প্রভাবশালী বনী ইস্রাঈল লোকটি তার অনুচর ও সহচরসহ চরম অপমানকর অবস্থায় প্রাণ হারাল। অবশ্য তাদের পারলৌকিক আসল শাস্তি তো তাদের জন্য রয়েই গেল!
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url