শিশু শ্রমিক নিয়োগ আইন ১৯৩৮ সম্পর্কে বিস্তারিত

 শিশু শ্রমিক নিয়োগ আইন, ১৯৩৮ 

The Employment of Children Act, 1938

(১৯৩৮ সনের ২৬ নং আইন)

(১লা ডিসেম্বর, ১৯৩৮)

কতিপয় শিল্পে শিশুদের নিয়োগ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন। যেহেতু কতিপয় শিল্পে শিশুদের নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করা সমীচীন; অতএব এতদ্বারা নিম্নোক্ত আইন প্রণীত হল:


১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও আওতা:

(১) এ আইন ১৯৩৮ সনের শিশু শ্রমিক নিয়োগ আইন নামে অভিহিত হবে।

(২) এ আইন সমগ্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য হবে।

টীকা: (১) প্রজ্ঞাপন নং ৩০১ কম, তাং ২৬শে সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ দ্বারা আইনটি ময়মনসিংহ জেলায় (আংশিক এলাকা বাদে) প্রযোজ্য করা হয়।

(২) ১৯৫৪ সনের ২ নং রেগুলেশন দ্বারা কতিপয় সংশোধনীসাপেক্ষে আইনটি পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় প্রযোজ্য করা হয়।

আরো পড়ুনঃ যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ এর ধারা সমূহ সহ বিস্তারিত 

২। সংজ্ঞা:

[(ক)***]

(ক) একটি কারখানার 'দখলকার' অর্থ সে ব্যক্তি, যার একটি কারখানার উপর

পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। (খ) 'বন্দর কর্তৃপক্ষ' অর্থ বন্দর কমিশনারবৃন্দের সংস্থা অথবা বন্দরের প্রশাসনিক

দায়িত্বে নিয়োজিত অন্য যেকোন কর্তৃপক্ষ।

(গ) 'নির্ধারিত' অর্থ এ আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত;

(ঘ) 'কারখানা' অর্থ শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন করা হয় এরূপ যেকোন স্থান ও উহার প্রাঙ্গণ; কিন্তু ১৯৬৫ সনের কারখানা আইনের ৬৬ ধারার আওতাভুক্ত কোন কারখানার প্রাঙ্গণ এর অন্তর্ভুক্ত নয়।

৩। কতিপয় পেশায় শিশু শ্রমিক নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা

(১) যেসব শিশুর বয়স পনের বছর পূর্ণ হয়নি তাদের নিম্নোক্ত যেকোন পেশায়

নিয়োগ করা যাবে না বা কাজ করতে দেয়া যাবে না।

(ক) রেলযোগে যাত্রী, মালপত্র বা ডাক পরিবহনের কাজ; অথবা

(খ) কোন বন্দরের সীমানার মধ্যে মাল উঠানো-নামানোর কাজ।

(২) যেসব শিশুর বয়স পনের বছর পূর্ণ হয়েছে কিন্তু সতের বছর পূর্ণ হয়নি তাদের যেকোন দিনের কাজের ঘণ্টা যদি এমনভাবে নির্ধারণ না করা হয় যে, একনাগাড়ে বার ঘন্টার অবসর পাবে এবং রাত ১০টা থেকে সকাল ৭ টার মধ্যে তাদের উপধারা (১)-এ বর্ণিত কাজে নিয়োগ করা যাবে না বা কাজ করতে দেয়া যাবে না।

শর্ত হচ্ছে যে, উপরোল্লিখিত এমন কোন অবস্থা ও শর্তসাপেক্ষে পূর্বোল্লিখিত নির্ধারিত পেশায় শিক্ষানবিসী বা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে কোন শিশু নিযুক্ত থাকলে বা তাকে কাজ করার অনুমতি দেয়া হলে এ উপধারার বিধান কার্যকরী হবে না:

আরও শর্ত হচ্ছে যে, জরুরী অবস্থা এবং জনস্বার্থের প্রয়োজন মনে করলে সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষণা করতে পারেন যে, নোটিশে নির্ধারিত সময়ের জন্য এ উপধারার বিধান কার্যকর হবে না:

(৩) যেসব শিশু বয়স বার বছর পূর্ণ হয়নি তাদেরকে তফসিলে উল্লিখিত ধরনের কাজ করা হয় এরূপ কোন কারখানায় নিয়োগ করা যাবে না বা কাজ করতে দেয়া যাবে। না।

শর্ত হচ্ছে যে, কোন শ্রমিক নিয়োগ না করে কেবল মালিক তার পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় কাজ চালালে অথবা সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বা সরকারি সহায়তায় বা অনুমোদনে পরিচালিত কোন বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এ উপধারার বিধান প্রযোজ্য হবে না।

৩ক। তফসিল সংশোধনের ক্ষমতা:

সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তিন মাসের নোটিশ দিয়ে তফসিলে যেকোন শ্রেণির কারখানা যোগ করতে পারেন এবং তা করলে উক্ত তফসিলটি এমনভাবে বাংলাদেশে কার্যকরী হবে যেন সেটি অনুরূপভাবেই প্রণীত হয়েছে।

৩খ। তফসিল সংশোধনের ক্ষমতা:

তফসিলে উল্লেখিত কোন প্রক্রিয়া অনুসারে কোন কারখানায় ১৯৩৯ সনের ১লা অক্টোবরের পর কাজ শুরু করার আগে মালিক পক্ষ সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিদর্শকের কাছে নিম্নোক্ত বিষয়ের উল্লেখসহ একটি লিখিত নোটিশ পাঠাবেন-

(ক) কারখানার নাম ও ঠিকানা; (খ) কারখানার প্রকৃত পরিচালকের নাম; (গ) কারখানার বিষয়ে যোগাযোগ করার ঠিকানা; এবং (ঘ) কারখানায় কাজের প্রকৃতি কেমন ধরনের হবে।

৩গ। বয়স সম্পর্কে বিরোধ:

কোন শিশুর বয়স বার বছর বা পনের বছর পূর্ণ হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে পরিদর্শক ও মালিকের মধ্যে মতান্তর দেখা দিলে এবং সংশ্লিষ্ট শিশুর বয়সের উপযুক্ত সার্টিফিকেট না থাকলে বিষয়টি নির্ধারণের জন্য পরিদর্শক সেটি নির্ধারিত মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের কাছে সিদ্ধান্তের জন্য পেশ করবেন।

৩ঘ। রেজিস্টার সংরক্ষণ:

ধারার (২) উপধারা (১)-এ উল্লেখিত ধরনের কাজে নিয়োগকৃত বা নিয়োগের অনুমতি রয়েছে এমন শিশুদের সম্পর্কে কারখানার মালিক নিম্নোক্ত ধরনের রেজিস্টার সংরক্ষণ করবেন। কাজ চলাকালে পরিদর্শক যেকোন সময় পরিদর্শন করতে পারবেন। উক্ত রেজিস্টারে নিম্নোক্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

(ক) সতের বছর পূর্ণ হয়নি এমন যেসব শিশুকে কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে তাদের নাম ও জন্ম তারিখ:

(খ) অনুরূপ শিশুর কাজের মেয়াদ ও বিরতির সময়;

(গ) অনুরূপ শিশুর কাজের প্রকৃতি; এবং

(খ) নির্ধারিত হতে পারে এমন অন্যান্য তথ্য।

৩ঙ। ধারা ৩ এবং ৪-এর সংক্ষিপ্ত বিবরণসহ নোটিশ প্রদর্শন:

রেলওয়ে প্রশাসন এবং প্রত্যেক বন্দর কর্তৃপক্ষ যথাক্রমে রেলস্টেশন বা বন্দরের সীমানার মধ্যে সহজে দেখা যায় এবং সুগমস্থানে এ আইনের ৩ ধারায় উপধারা (১) এবং (২) এবং ৪ ধারার সংক্ষিপ্ত বিবরণ বাংলায় এবং নির্ধারিত অন্য কোন ভাষায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবেন।

ব্যাখ্যা: এ ধারায় 'রেলওয়ে প্রশাসন' বলতে ১৮৯০ সনের রেলওয়ে আইনে উল্লেখিত অর্থ বুঝাবে।

আরো পড়ুনঃ পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩

৪। দণ্ডসমূহ:

কোন ব্যক্তি-

(ক) ৩ ধারা লঙ্ঘন করে কোন শিশুকে নিয়োগ করলে অথবা কাজ করার অনুমতি দিলে; অথবা

(খ) ৩-ব এবং ৩-৩ ধারা অনুযায়ী নোটিশ দিতে ব্যর্থ হলে; অথবা (গ) ৩ঘ এবং ৩-৪ ধারা অনুযায়ী রেজিস্টার সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে অথবা এ ধরনের রেজিস্টারে কোন মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশিত করলে, তিনি পাঁচ শ' টাকা পর্যন্ত জরিমানায় দণ্ডনীয় হবেন।

৫। অপরাধ সম্পর্কিত কার্যপদ্ধতি:

(১) ৬ নং ধারা অনুযায়ী নিযুক্ত পরিদর্শক কর্তৃক বা তার পূর্ব অনুমতি ছাড়া এ আইনের অধীনে মামলা দায়ের করা যাবে না।

(২) নির্ধারিত মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত কোন শিশুর বয়স সম্পর্কিত সনদপত্র এ আইনের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট শিশুর বয়সেব চূড়ান্ত সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

(৩) এই আইন অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের অধস্তন কোন আদালত কোন অপরাধের বিচার করতে পারবেন না।

৬। পরিদর্শকগণের নিয়োগ:

এ আইনের বিধানসমূহ পালন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সরকার পরিদর্শক নিয়োগ করতে পারেন এবং এভাবে নিযুক্ত যেকোন পরিদর্শক দণ্ডবিধির (১৮৬০ সনের ৪৫ নং আইন) আওতায় সরকারি কর্মচারী বলে বিবেচিত হবেন।

৭। বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা:

(১) আইনের ধারাসমূহ কার্যকর করার জন্য সরকার পূর্বাহ্নে প্রকাশের কর্তসাপেক্ষে এবং সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে বিধিমালা প্রণয়ন করতে পারেন।

(১) বিশেষভাবে এবং পূর্ব বর্ণিত ক্ষমতাসমূহ সাধারণ ক্ষুন্ন না করে এসব বিধি-- 

(ক) ৬ ধারা অনুযায়ী নিযুক্ত পরিদর্শকদের কার্যপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা;

(খ) নিযুক্ত অথবা নিযুক্ত প্রার্থী শিশুর বয়সের প্রত্যয়নপত্র প্রদানের ব্যবস্থা করে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের প্রত্যয়নপত্র দেবেন, প্রত্যয়ন পত্রের প্রকৃতি এবং যে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং পদ্ধতিতে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করা হবে তা নির্ধারণ করবেন।

শর্ত হচ্ছে যে, যদি কর্তৃপক্ষের সন্তুষ্টি অনুযায়ী আবেদনপত্রের সঙ্গে বয়সের সাক্ষ্য-প্রমাণ সংযুক্ত থাকে, তবে এ ধরনের প্রত্যয়নপত্র দেয়ার জন্য কোন অভিযোগ উত্থাপন করা যাবে না।

(গ) ৩ ধারার ২ উপ-ধারা অনুযায়ী রাত ১০টা থেকে সকাল একটানা ৭ ঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে পারবে;খঝোঔ

(ঘ) ৩ ধারার উপধারা (১)-এ উল্লিখিত কোন পেশায় শিক্ষানবিস হিসেবে অথবা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে কোন শিশুকে নিয়োগ করা হলে অথবা কাজ করার অনুমতি দেয়া হলে কোন পরিস্থিতিতে এবং কোন শর্তে করা হয়েছে তা উল্লেখ করতে পারবে;

(ঙ) ৩য় ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত রেজিস্টারে সন্নিবেশিত করা হয়েছে এমন যেকোন বিষয় উল্লেখ করতে পারবে;

(চ) ৩-খ এবং ৩-৫ ধারা অনুযায়ী নোটিশ কোন ভাষায় প্রকাশ করতে হবে তা উল্লেখ করতে পারবে; এবং

(ছ) নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয় বলে বিবেচিত হলে বা পূর্বে ধারণা করা সম্ভব ছিল না এবং মাঝে মাঝে ঘটতে পারে এমন নয় এবং ৩ নং ধারার উপধারা (১)- এ উল্লিখিত পেশার স্বাভাবিক কাজ-কর্ম ব্যাহত করতে পারে এমন কোন জরুরী অবস্থায় ৩ নং ধারার উপধারা (২)-এ উল্লিখিত বিধানাবলির আওতা হতে অব্যাহতি নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।

৮।[***]

তফসিল

(৩, ৩-ক ও ৩-খ ধারা দেখুন)

প্রক্রিয়াসমূহের তালিকা

 ১। বিড়ি তৈরি; ২। কার্পেট বুনন; ৩। ব্যাগে সিমেন্ট ভর্তিকরণসহ সিমেন্ট উৎপাদন; ৪। কাপড় ছাপ, রং করা ও বুনন; ৫। দিয়াশলাই; বিস্ফোরক দ্রব্য ও আতশবাজী উৎপাদন; ৬। অভ্র কাটা ও ভাঙা; ৭। গালা প্রস্তুকরণ; ৮। সাবান প্রস্তুতকরণ; ৯। চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ; ১০। পশম পরিচ্ছন্নকরণ।

*আমরা সবাই বাংলাদেশর আইনের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান করব এবং যথাযথ ভাবে দেশের সকল আইন মেনে চলব* ধন্যবাদ **

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url