নীলগিরি পাহাড় বান্দরবান জেলা

 নীলগিরি পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায় অবস্থিত একটি পাহাড় ও পর্যটন কেন্দ্র। নীলগিরিকে বলা হয় বাংলাদেশের দার্জিলিং। পাহাড়টি বান্দরবান জেলা সদর থেকে পোড়ায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পাহাড়টি ২২০০ ফুট উঁচু। নীলগিরি পাহাড় চূড়াতেই রয়েছে সেনাবাহিনীর পরিচালিত বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র গুলির একটি নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র।


পোস্ট সূচিপত্রঃ

যাতায়াত পথ ও রাস্তা ঃ

নীলগিরি যাওয়ার জন্য প্রথমে বান্দরবান জেলায় আসতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে এস আলম, সৌদিয়া,সেন্টমার্টিন পরিবহন, ইউনিক, হানিফ শ্যামলী, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দরবানের  উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসব বাসের ভাড়া জনপ্রতি নন এসি ৮০০ টাকা ও এসি ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান যেতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা সুবর্ণ এক্সপ্রেস তূর্ণা, নিশিতা, মহানগর গোধূলি এসব ট্রেনে করে চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। শ্রেণীভেদে ভাড়া ৩৫০ থেকে ১২০০ টাকা এছাড়া ঢাকা থেকে আকাশপথে সরাসরি চট্টগ্রাম যাওয়া যায়।

চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে পূবালী ও পূর্বানী নামের দুটি বাস বান্দরবানের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করে। এ দুটি বাসে জনপ্রতি ২৫০ টাকা ভাড়া লাগে। চট্টগ্রামের  দামপারা বাস স্ট্যান্ড থেকে ৩০০ টাকা ভাড়ায় বাসে করে বান্দরবান যাওয়া যায়।

আরো পড়ুন ঃ রিছাং ঝর্ণা খাগড়াছড়ি জেলা 

বান্দরবান থেকে নীলগিরি ঃ

বান্দরবান থেকে নীলগিরি যাওয়া যাবে জীপ/চান্দের গাড়ি/মহেন্দ্র/সিএনজি অথবা লোকাল বাস দিয়ে। সবচেয়ে ভালো হয় রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে গেলে। এতে করে আশপাশের আরো কিছু জায়গায় ঘুরে দেখা যাবে। যদি দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে হয় তাহলে বান্দরবান জীপ স্টেশন থেকে বিভিন্ন গাড়ি অনুযায়ী ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া আসা সহ গাড়ি ঠিক করে নিতে পারবেন। চান্দের গাড়িগুলোতে ১২ থেকে ১৪ জন যাওয়া যাবে। ল্যান্ডক্রুজার টাইপ জীপ গুলোতে ৭ জন যাওয়া যাবে, ছোট জীপ আছে সেগুলোতে ৪ থেকে ৫ জন।  আর সিএনজিতে ৩ থেকে ৪ বসা যায়। রাস্তায় কোন সমস্যা না থাকলে যেতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মতো। নীলগিরিতে যদি মেঘ দেখতে হলে খুব ভরে রওনা দিতে হবে যাতে সকাল ৭টা থেকে ৮টার ভিতরে নীলগিরি থাকা যায়।

**সদস্য সংখ্যা কম হলে কিংবা কম খরচে যেতে চাইলে লোকাল বাসে যাওয়া যায়, তবে এতে সময় লাগবে বেশি থানচি বাস স্ট্যান্ড থেকে এক ঘন্টা পর থানচির উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায় ভাড়া ১৫০ টাকা। নীলগিরি যাওয়ার পথে নিরাপত্তা জনিত কারণে সেনা চেকপোষ্টে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হয়। সাধারণত বিকেল পাঁচটার পর থেকে নীলগিরির উদ্দেশ্যে আর কোন গাড়িকে যেতে দেওয়া হয় না। তাই ভ্রমণের পূর্বে সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য পর্যটকদের কাছ থেকে টিকেট বাবদ জনপ্রতি ৫০ টাকা এবং গাড়ি পার্কিং  এর জন্য আলাদা ৩০০ নেওয়া হয়।

ভ্রমণ পরিকল্পনা ঃ

নীলগিরি যাওয়ার পথেই মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট, শৈল প্রপাত ঝর্ণা, শাইরু হিল রিসোর্ট ও চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্র পার হয়ে যেতে হবে। রিজার্ভ গাড়ি নিলে এই স্পর্টগুলোতে নেমে কিছু সময় অতিবাহিত করা যাবে। গাড়ি ঠিক করার সময় আগে থেকে বলে রাখতে হবে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় সকালে সরাসরি নীলগিরি চলে গেলে তাহলে মেঘের দেখা মিলবে। ফিরে আসার সময় চুম্বুক পাহাড়রে কিছু সময় তারপর শৈল প্রপাত ঝর্ণাতে কিছু সময় কাটানো যাবে। আর যাওয়ার পথে মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্টে চেকপোষ্টে নামতে হবে তখন সেখানে থেকে চার পাশের সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবেন। এসব ব্যক্তি পছন্দ বা আপনার উপর নির্ভর করবে কোনটি আগে দেখবেন।

আরো পড়ুন ঃ রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি পতিসর নওগাঁ

রাত্রি যাপন ঃ

নীলগিরিতে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত কোর্টেজে থাকার ব্যবস্থা আছে। ছয়টি কটেজে থাকার জন্য রুম প্রতি ভাড়া পরবে ৪০০০/= টাকা থেকে ১০,০০০/= টাকা তবে নীলগিরি রিসোর্টে থাকতে চাইলে আগে থেকে বুকিং দিতে হবে এবং বুকিং দিতে সেনাবাহিনীর অফিসার পর্যায়ে পরিচিত কর্মকর্তার রেফারেন্স লাগবে। এই রিসোর্ট সবার কাছেই অফ আকর্ষণীয় হওয়ায় সাধারণত ১ মাস আগে বুকিং না দিলে রুম পাওয়া যায় না  বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে।

***এছাড়া বেশিরভাগ পর্যটক বান্দরবান থেকে নীলগিরি দিনে গিয়ে দিনে বান্দরবান ফিরে আসে। বান্দরবানে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। বান্দরবান শহর ও তার আশেপাশে হোটেল ও রিসোর্ট গুলোর অবস্থান। বান্দরবান থাকার জন্য যে সকল হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে তার মধ্যে।

**হোটেল হিল ভিউ ঃ বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই ভাড়া ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

**হোটেল হিলটন ঃ বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর কাছেই ভাড়া ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা।

**হোটেল প্লাজা ঃ বাস স্ট্যান্ড থেকে পাঁচ মিনিট হাটা দূরত্ব। ভাড়া ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকা।

**হোটেল রিভারভিউ ঃ শহরের সাঙ্গু নদীর তীরে ঘেঁসে হোটেল এর অবস্থান। ভাড়া ৬০০ থেকে ২০০০ টাকা।

**পর্যটন মোটেল ঃ পাহাড় ও লেকের পাশে অবস্থিত। শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে মেঘালয় অবস্থিত। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

খাবার ব্যবস্থাঃ

নীলগিরিতে একটি রেস্তরা আছে। তবে সেখানে খেতে হলে আগে থেকে অর্ডার করে রাখতে হবে। অথবা ফিরে এসে বান্দরবান শহরে খেতে পারবেন। যাবার সময় কিছু শুকনো খাবার সাথে নিয়ে গেলে ভালো হয়। বান্দরবান শহরের খাওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কিছু রেস্তোরা। তার মধ্যে তাজিংডং ক্যাফে, মেঘদুত ক্যাফে, ফুড প্লেস রেস্তোরাঁ, রূপসী বাংলা রেস্তোরাঁ আর ও অনেক রেস্তোরাঁয় খাবারের জন্য ব্যবস্থা আছে।

ধন্যবাদ***


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url