উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে অতিমাত্রায় কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, সুস্থ থাকার অন্যতম উপায়

 হৃদপিণ্ড মানবদেহে রক্ত সঞ্চালন করে এবং দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন ও পুষ্টি বহন করে। যখন হৃদপিন্ডের কার্যপ্রণালীতে ব্যাঘাত ঘটে অথবা যথাযথ কাজ সম্পাদন করতে পারে না তখনই মারাত্মক অসুস্থতা এমনকি মৃত্যু হতে পারে। সাধারণত যাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি তাদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের ঝুঁকিও অনেক বেশি।


উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন)

উচ্চ রক্তচাপ হাইপারটেনশন কি?

স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় (১৪০/ ৯০ মিলিমিটার অফ মার্কারি সব সময় বেশি থাকে তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে।

কেন হয়

অতিরিক্ত শারীরিক ওজন মেদবহুল শরীর হওয়া পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম বংশগত মাত্রা অতিরিক্ত সোডিয়াম বা লবণ জাতীয় খাবার খাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের পাদুর্ভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়।

স্বাভাবিক মাত্রা কত

একজন সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা ১০০ থেকে ১২০/ ৬০ থেকে ৮০ মিলিমিটার অফ মার্কারি তবে যদি কোন ব্যক্তি রক্তচাপ সব সময় ১৪০/৯০ মিলিমিটার অফ মার্কারি এর বেশি থাকে তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে।

উপসর্গ সমূহ কি কি

উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) হলো উপসর্গ বিহীন রোগ। "নীরব ঘাতক" নামে পরিচিত এই রোগ নীরবে শারীরিক ক্ষতি করে বা হঠাৎ করে শারীরিক জটিলতা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে।

জটিলতাগুলো কি কি

স্ট্রোক,  হার্ট এ্যাটাক, হার্ট ফেইলর, প্যারালাইসিস, হৃৎপিণ্ড বড় হয়ে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত এবং আরো নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

কতদিন চিকিৎসা নিতে হয় 

সাধারণতঃ সারা জীবন চিকিৎসা নিতে হয়।

নিয়ন্ত্রণের উপায় বা কৌশল সমূহ

একজন ব্যক্তি বিভিন্ন উপায় মেনে চলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। ঔষুধের পাশাপাশি সুসুম খাদ্যবাস ও শারীরিক ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মেডিকেল বা ঔষুধ সেবন

  • ডাক্তারের পরামর্শ মত নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। নিয়মিত ঔষুধ সেবন না করলে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায় না।
  • প্রতিটি ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে সুতরাং কোন ঔষুধ খেয়ে কোন রুপ সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে আপনার ডাক্তারকে অবহিত করুন।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তচাপ মাপুন।

খাদ্যাভাস পরিবর্তন

  • প্রচুর পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। অধিকাংশ আঁশযুক্ত খাদ্য সামগ্রী সেবন, যেমন: খাদ্য শস্য, বীজ, ফল, রুটি , বাদাম, জব, ভুট্টা ও গম ইত্যাদি খেতে হবে।
  • চর্বি বিহীন মাংস, চামড়া ছাড়া মুরগির মাংস খেতে হবে।
  • মটর, সীম, মসুরের ডাল ও অন্যান্য ডাল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
  • সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, তিল গাছের তেল, বাদাম এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ছোট মাছ আহার করুন।

খাদ্যাভাস পরিবর্তন

কম লবণ= সুস্বাস্থ্য । রান্নাতে অল্প লবণ ব্যবহার করুন। টেবিলে লবণদানি রাখবেন না প্রক্রিয়াজাত খাবার, পনির ও মাখন পরিহার করুন। খাদ্যকে সুস্বাদু করার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্য যেমন:  কেচাপ, সরিষার তেল, সয়াসচ , সালাদ বানানোর উপকরণ ইত্যাদি কম ব্যবহার করুন। বাইরের ও রেস্তোরাঁর খাবার খাবেন না। সিগারেট এবং মদ্যপান পরিহার করুন।

অভ্যাস করুন

দৈনিক ৩০ থেকে ৬০ মিনিট হাঁটুন অথবা সাইকেল চালান অথবা সাঁতার কার্টুন স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপনে অভ্যস্ত হোন । রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এরূপ জীবন ধারা ঔষুধের পাশাপাশি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

কোলেস্টেরল

কোলেস্টেরল কি

কোলেস্টেরল হলো প্রাকৃতিক চর্বি যা দেহে বিদ্যমান। দেহের প্রতিটি কোষে কোলেস্টেরলের প্রয়োজন রয়েছে। কোলেস্টেরল  আমাদের স্নায়ুর উদ্দীপনা বহন করতে সাহায্য করে, ভিটামিন -ডি তৈরি করে এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন উৎপন্ন করে। কোলেস্টেরল আমাদের রক্তে লাইপোপ্রোটিন নামে বাহিত হয়।

রক্তের কোলেস্টেরল কিভাবে বাড়ে

সাধারণত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন: চর্বিযুক্ত মাংস, মাখন, পনির, চামড়া যুক্ত মুরগির মাংস, কোল্ড ড্রিংকস, বার্গার ইত্যাদি জাতীয় খাবার রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়।

আরো পড়ুনঃ নবজাতকের বমি হলে করণীয় - বার বার বমি হলে করণীয়

কোলেস্টেরল যখন একটি সমস্যা

যখন রক্তের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে তখনই এটি সমস্যার সৃষ্টি করে। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে তা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর বা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদয় রোগের ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব।

রক্তে কোলেস্টেরল পরিমাণ কমানোর উপায় সমূহ

ওজন হ্রাস করাঃ উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন বজায় রাখুন নিন্মোক্ত উপায়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন 
  • কম চর্বিযুক্ত খাবার খান 
  • বেশি বেশি ফলমূল শাকসবজি খান
খাদ্যাভাস পরিবর্তন

চর্বি জাতীয় খাদ্যঃ চর্বি যুক্ত খাদ্য পরিহার করুন, চর্বি বিহীন মাংস, টাটকা শাক-সবজি ফল-মূল খান ।প্রক্রিয়াজাত খাবার খাবেন না। বাইরের ও রেস্তোরাঁর খাবার অধিক পরিমাণ তেল থাকায় তা গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

আঁশযুক্ত খাবারঃ বেশি বেশি আঁশযুক্ত খাবার খান এই জাতীয় খাবার রক্তে কোলেস্টেরল কমায় এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে।

মাছঃ বেশি পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ খান যেমনঃ টুনা মাছ, সেলমন মাছের তেল ইত্যাদি রক্তে  ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবারঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আমাদের দেহকে হৃদরোগ হতে রক্ষা করে, তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় এন্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাদ্য যোগ করুন।

যেমন: 

ভিটামিন- এ, গাজর, কুমড়া, আম, আলু, জাম ও লাউ।

ভিটামিন-সি, কমলা, আঙ্গুর, বাঁধাকপি, ফুলকপি ও আলু।

ভিটামিন- ই, তেল, বীজ, বাদাম ও গম।

মেডিকেল বা ঔষুধ সেবন

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করুন, নিয়মিত ওষুধ সেবন না করলে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায় না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url