মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা ১৯৬১

মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা ১৯৬১

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের (১৯৬১ সালের ৮ অধ্যাদেশ) ১১ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিম্নবর্ণিত বিধিমালা প্রণীত।

১। প্রারম্ভিক:

এই বিধিমালা মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা, ১৯৬১ নামে অভিহিত হইবে।

২। সংজ্ঞা:

এই বিধিমালার বিষয়ে অথবা প্রসঙ্গে বিপরীতে কোন কিছু বর্তমান না থাকিলে-

(ক) চেয়ারম্যান বলিতে অধ্যাদেশে যেইরূপ সংজ্ঞায়িত করা হইয়াছে, সেই একই অর্থ বহন করে;

(খ) ফরম বলিতে এই বিধিমালার সহিত সন্নিবেশিত ফরমকে বুঝায়;

(গ) স্থানীয় এলাকা বলিতে কোন মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের এখতিয়ারাধীন এলাকাকে বুঝায়;

(ঘ) মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন বলিতে অধ্যাদেশে যেইরূপ সংজ্ঞায়িত করা হইয়াছে সেই একই অর্থ বহন করে।

(ঙ) অধ্যাদেশ বলিতে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ (১৯৬১ সালের ৮নং অধ্যাদেশ)-কে বুঝায়;

(চ) পৌরসভা বলিতে অধ্যাদেশে যেইরূপ সংজ্ঞার্থ করা হইয়াছে সেই একই অর্থ বহন করে;

(ছ) ধারা বলিতে অধ্যাদেশের কোন ধারাকে বুঝায়; এবং

(জ) ইউনিয়ন পরিষদ বলিতে অধ্যাদেশে যেইরূপ সংজ্ঞার্থ করা হইয়াছে সেই একই অর্থ বহন করে।

৩। এখতিয়ার:

(২) ধারার (গ), (ঘ) বা (চ) দফার উদ্দেশ্যে যে মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের এখতিয়ার থাকিবে, তাহা নিম্নরূপ হইবে:

(ক) ৬ ধারার উপধারা (২)-এর অধীনে কোন দরখাস্তের ক্ষেত্রে বিদ্যমান স্ত্রী অথবা যেইক্ষেত্রে একাধিক স্ত্রী রহিয়াছে, সেইক্ষেত্রে আবেদনকারী সর্বশেষে যে স্ত্রীকে বিবাহ করিয়াছে, এই দরখাস্ত দাখিলের সময় সেই স্ত্রী যে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা পৌর করপোরেশনের অধীনে বসবাস করিতেছে;

(খ) ৭ ধারার (১) উপধারার অধীনে তালাকের নোটিশের ক্ষেত্রে, উহা সেই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ হইবে, যেখানে যে স্ত্রী সম্পর্কে তালাক উচ্চারণ করা হইয়াছে সেই স্ত্রী তালাক উচ্চারণকালে বসবাস করিতেছিল; এবং

(গ) ৯ ধারার অধীন আবেদনপত্রের ক্ষেত্রে উহা সেই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ হইবে যেখানে স্ত্রী তাহার আবেদনকালে বসবাস করিতেছেন এবং যেইক্ষেত্রে একাধিক স্ত্রী ঐ ধারার অধীনে আবেদন করেন সেইক্ষেত্রে উহা সেই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ হইবে যেখানে যে স্ত্রী সর্বপ্রথম আবেদন করেন সেই স্ত্রী তাহার আবেদনকালে বসবাস করিতেছেন।

৪। অমুসলিম ও স্বার্থান্বিত চেয়ারম্যান:

(১) যেক্ষেত্রে মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে কোন অ-মুসলিম নির্বাচিত হইয়াছেন, সেইক্ষেত্রে উক্ত করপোরেশন, পৌরসভা বা পরিষদ যত তাড়াতাড়ি সম্ভবপর হইতে পারে তত তাড়াতাড়ি অধ্যাদেশের উদ্দেশ্যার্থে উহার কোন মুসলিম সদস্যকে চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত করিবেন।

(২) সালিশী পরিষদে আনীত কার্যব্যবস্থার কোন পক্ষ চেয়ারম্যানকে অন্য পক্ষের অনুকূলে স্বার্থান্বিত বলিয়া মনে করিলে অন্য চেয়ারম্যান নিযুক্তির জন্য লিখিতভাবে রেকর্ডকৃত কারণাদিসহ যেইরূপ নির্ধারিত হইতে পারে সেইরূপ ব্যক্তির নিকট আবেদন করিতে পারেন যিনি উপযুক্ত মনে করিলে ঐ করপোরেশন, পৌরসভা বা পরিষদের অন্য কোন সদস্যকে অধ্যাদেশের উদ্দেশ্যার্থে চেয়ারম্যান হিসাবে নিযুক্ত করিতে পারেন। ঐরূপে নির্ধারিত ব্যক্তি উক্তরূপ আবেদনপত্র নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত সালিশী পরিষদে আনীত কার্যব্যবস্থা স্থগিত রাখিবেন।

৫। সালিশী পরিষদ:

(১) চেয়ারম্যান সালিশী পরিষদে আনীত কার্যব্যবস্থা যতশীঘ্র সম্ভব পরিচালনা করিবেন।

(২) ঐরূপ কার্যব্যবস্থা কোন ব্যক্তির প্রতিনিধি মনোনয়নের ব্যর্থতার কারণে বা অন্যভাবে সালিশী পরিষদে কোন পদ শূন্য হওয়ার দরুন ত্রুটিযুক্ত হইবে না।

(৩) যেইক্ষেত্রে পদ শূন্য হওয়া মনোনয়নদানে ব্যর্থতার দরুন ব্যতীত অন্যভাবে উদ্ভব হয় সেইক্ষেত্রে চেয়ারম্যান নূতন মনোনয়ন দাবি করিবেন।

(৪) সালিশী পরিষদে আনীত কার্যব্যবস্থার কোন পক্ষই সালিশী পরিষদের সদস্য হইবেন।

(৫) সালিশী পরিষদের সকল সিদ্ধান্তই সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বারা গৃহীত হইবে, এবং যেইক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্তই ঐরূপভাবে গৃহীত হইতে পারে না, সেইক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই সালিশী পরিষদের সিদ্ধান্ত হইবে।

৬। কার্যক্রম:

১০ (১) ৬ ধারার (২) উপধারার অধীন বা ৯ ধারার (১) উপধারার অধীন কোন আবেদনপত্র গ্রহণের সাত দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান লিখিত আদেশক্রমে পক্ষগণের প্রত্যেককে তাহার প্রতিনিধি মনোনয়ন করিতে বলিবেন এবং ঐরূপ প্রত্যেক পক্ষ আদেশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে লিখিতভাবে প্রতিনিধি মনোনয়ন করিবেন এবং চেয়ারম্যানের নিকট মনোনয়ন পেশ করিবেন অথবা রেজিস্ট্রিকৃত ডাকে তাহাকে উহা প্রেরণ করিবেন। 

 (২) যেইক্ষেত্রে কোন পক্ষ কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধি মারা যান, অথবা অসুস্থতা বা অন্য কারণে সালিশী পরিষদের সভায় যোগদান করিতে অসমর্থ হন, অথবা ঐরূপ সভায় ইচ্ছাকৃতভাবে স্বয়ং অনুপস্থিত থাকেন অথবা উক্ত পক্ষের আস্থা হারাইয়া ফেলেন, সেই ক্ষেত্রে উক্ত পক্ষ চেয়ারম্যানের লিখিত পূর্বানুমতিক্রমে উক্ত মনোনয়ন সংগ্রহ করিতে পারেন এবং চেয়ারম্যান যেইরূপ অনুমোদন করিতে পারেন সেইরূপ সময়ের মধ্যে নূতন মনোনয়ন প্রদান করিবেন।

(৩) যেইক্ষেত্রে (২) উপধারা মোতাবেক নূতন মনোনয়ন প্রদত্ত হয়, সেইক্ষেত্রে সালিশী পরিষদে আনীত কার্যব্যবস্থা নতুন করিয়া আরম্ভ করিবার প্রয়োজন হইবে না যদি না চেয়ারম্যান লিখিতভাবে রেকর্ডকৃত কারণে অন্যরূপ নির্দেশ দেন।

বিবাহ রেজিস্ট্রিকরণ:

বিঃদ্রঃ ৭ হইতে ১৩ বিধিসমূহ ১৯৭৫ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রিকরণ) বিধিমালা দ্বারা বাতিল করা হইয়াছে।

১৪। প্রস্তাবিত বিবাহ:

কোন বর্তমান বিবাহ চলিতে থাকা অবস্থায় আরেকটি প্রস্তাবিত বিবাহ ন্যায়সঙ্গত ও প্রয়োজনীয় কিনা উহা বিবেচনায় সালিশী পরিষদ ইহার সাধারণ ক্ষমতার ক্ষতি না করিয়া অন্যান্যের সহিত নিম্নলিখিত পরিস্থিতিগুলির দিকে নজর রাখিবেন-

কোন বর্তমান স্ত্রীর বেলায় বন্ধ্যাত্ব, দৈহিক দৌর্বল্য, দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে দৈহিক অনুপযুক্ততা, দাম্পত্য জীবন পুনরুদ্ধারের নিমিত্ত একটি ডিক্রি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়াইয়া চলা অথবা বর্তমান স্ত্রীর অপ্রকৃতিস্থতা।

১৫। বহুবিবাহ:

কোন বর্তমান বিবাহ বিদ্যমান থাকাকালে আরেকটি বিবাহের চুক্তি করিবার অনুমতির জন্য ৬ ধারার (১) উপধারার অধীনে কোন আবেদন লিখিতভাবে হইতে হইবে, উহাতে বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণের সম্মতি লাভ করা হইয়াছে কিনা তাহা বর্ণনা করিতে হইবে, যেই হেতুগুলির ভিত্তিতে নূতন বিবাহ ন্যায়সঙ্গত ও প্রয়োজনীয় বলিয়া কথিত হইয়াছে, সেইগুলির একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি অন্তর্ভুক্ত থাকিতে হইবে, আবেদনকারীর স্বাক্ষর থাকিতে হইবে এবং উহাতে পঁচিশ টাকার ফি যুক্ত হইবে।

১৬। রিভিশন:

(১) ৬ ধারার (৪) উপধারার অধীন সালিশী পরিষদের কোন সিদ্ধান্তের অথবা ৯ ধারার (২) উপধারার অধীন কোন প্রত্যয়নপত্রের রিভিশনের জন্য কোন আবেদনপত্র, ক্ষেত্রমত, উক্ত সিদ্ধান্তের বা প্রত্যয়নপত্র জারির ত্রিশ দিনের মধ্যে দাখিল করিতে হইবে এবং দুই টাকার ফি যুক্ত হইবে।

(২) উক্ত আবেদন লিখিত হইবে, যেই হেতুগুলির ভিত্তিতে আবেদনকারী উক্ত সিদ্ধান্ত বা প্রত্যয়নপত্র রিভিশন করাইতে চাহেন সেইগুলি বর্ণনা করিবে এবং আবেদনকারীর স্বাক্ষর বহন করিবে।

১৭। রুদ্ধদ্বার কক্ষে কার্যব্যবস্থা:

সালিশী পরিষদে আনীত সকল কার্যব্যবস্থা গোপনে অনুষ্ঠিত হইবে যদি না চেয়ারম্যান অন্যরূপ নির্দেশ দেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url