ডেঙ্গু জ্বরের কারণ লক্ষণ প্রতিকার এবং প্রতিরোধ


এই বর্ষায় বৃষ্টির সাথে খিচুড়ি তো উপভোগ করবেি তবে আপনারা যাতে সুস্থতার সাথে তা করতে পারেন তাই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আজ আপনাদের মনে করিয়ে দিতে এলাম। পত্রিকা খুললেই দেখছি চারিদিকে বেড়েছে ডিম্বুর প্রকোপ। আরেকটু অবহেলা অথবা শুধুমাত্র অদক্ষতা কারণে ডেঙ্গু জ্বর মৃত্যুর খবরও মনটা খারাপ করে দিচ্ছে। তাই খুব অল্প কথায় চলুন জেনে নেওয়া যাক ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে।



কি ও কেন হয় : ডেঙ্গু হলো প্রধানত এডিস  নামক মশা এক মারাত্মক ভাইরাস জনিত রোগ। প্রধানত বলছি এই কারণে যে আরো কিছু অপ্রধান মশার প্রজাতী ও ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ায় তবে তা খুবই কম। তো এই ভাইরাস ছড়ায় কিভাবে। এই ভাইরাস বাড়িতে মশা যখন একজন সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তখন সে ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং এই ব্যক্তি ভাইরাসের একজন বাহক হয়ে যায়। এখন যদি ভাইরাস বিহীন সাধারণ কোনো মশা ওই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ায় তাহলে সে মশাটি আক্রান্ত হয়ে ভাইরাস দ্বারা এবং এরপর এ মশা যতজনকে কামড় দেয় প্রত্যেকে আক্রান্ত হবে ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা এবং প্রত্যেকেই কাজ করবে একেক জন বাহক হিসেবে। কি ভয়ানক ব্যাপার ঠিক বলছি না।


পোস্ট সূচিপত্র:

 এডিস মশার জন্ম ও বিস্তার কিভাবে প্রতিরোধ করবেন এখন তাহলে জেনে নিন

আপনার চারপাশে একটু তাকান:

  • আপনার রান্নাঘরে পাতিল বা কলসিতে কিংবা গোসলখানায় বালতিতে ৪-৫ দিন যাবৎ পানি জমিয়ে রাখছেন কিনা।
  • বারান্দায় টবে পানি জমে আছে কিনা।
  • বৃষ্টিতে বাড়ির চারপাশে কোন ভাঙ্গা পাত্র বা পরিত্যক্ত ড্রাম বা গাড়ির টায়ারে পানি জমে আছে কি না।
  • ফ্রিজে কিংবা এসির জমে থাকা পানি দীর্ঘদিন পরিস্কার করেননি।

এগুলোর কোনটি যদি হয়ে থাকে তাহলে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ও ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধিতে  আপনারও অবদান আছে। কারন আপনার ঘর ও ঘরের আশেপাশে জমে থাকা এই আপাদ দৃষ্টিতে দেখতে পরিষ্কার পানিতে জন্মে ও বংশবিস্তার করে এ মশা। আর তাই প্রথমে আপনার চারপাশ পরিস্কার করে আগে ডেঙ্গু কে প্রতিরোধ করুন। মশার আবাসস্থল চল নষ্ট করার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় গুরুত্ব দেওয়া উচিত

যেমন:

  • দিনের বেলায় ও যেহেতু এ মশা কামড়ায় তাই লম্বা হাতার জামা কাপড় পড়তে হবে। এছাড়াও আজকাল পার্মেথিন জাতীয় রেফেলেন্ট পাওয়া যায় যা তোকে লোশনের নাই ব্যবহার করলে মশা কামড়াবে না। তবে দু মাসের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে কোন রেফেলেন্ট ব্যবহার করা যাবে না এবং এর বেশি বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার দের পূর্বে অবশ্যই ব্যবহার বিধি জেনে নিয়ে নিন ভালো হবে। তবে যতটা সম্ভব দেহ সম্পর্কে ঢাকা থাকে এমন পোশাক খাতব্যবহার করাই উত্তম।
  • এ সময় অবশ্যই দিনের বেলা ঘুমানোর সময় ও মশারি ব্যবহার করবেন যাতে বাহক মশা আপনাকে কোন ভাবে কামড়াতে না পারে। কেননা মাত্র একটি মশার কেবল একটি কামড় এই যথেষ্ট আপনাকে আক্রান্ত করাতে।
  • আপনারা যারা প্রায় ভ্রমণ করে থাকেন তাদেরকে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে উচ্চ মণ্ডলীয় অঞ্চলে ভ্রমণের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যেখানে ডেঙ্গু জ্বর বেশি দেখা যায় সেসব এলাকায় ভ্রমণের পূর্বে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও আপনি যদি এ ধরনের কোন জায়গায় ভ্রমণ করে আসেন তাহলে আপনার দেহে ডেঙ্গুর ভাইরাস আছে কিনা পরীক্ষা করিয়ে নিন।

আরো পড়ুন: চোখ ফুলে যায় কেন -চোখের উপরে পাতা ফুলে যাওয়ার কারণ

কিভাবে বুঝবেন আপনি আক্রান্ত কিনা:

সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণের ৪-৬ দিন পর দেখা যায় এবং ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এতে হঠাৎ করেই উচ্চ তাপমাত্রার তীব্র জ্বর মাথাব্যথা চোখের পিছনে ব্যথা বমি ভাব কিংবা প্রচন্ড বমি, শরীরের মাংস পেশী এবং গিটে ব্যথা এবং ত্বকে ফুসকুরি থাকতে পারে। এই লক্ষণ গুলির যে কোনোটি বা কয়েকটি সাধারণত দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সাত দিন পর বেশিরভাগ মানুষেরই জ্বর ভালো হয়ে যায়। অন্যদিকে যদি আপনি আগেও ডেঙ্গু দ্বারা সংক্রমিত হন তবে আপনার হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেশি। এই ডেঙ্গু আরো জটিল এবং রোগীর দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত জ্বর নেমে যাওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই লক্ষণ গুলো দেখা যায়।


হেমোরিজিক ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলি হল:

  • সাংঘাতিক পেটে ব্যথা
  • স্থায়ী ভূমি
  • মাড়ি থেকে রক্তপাত
  • রক্ত ভূমি
  • দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস
  • ক্লান্তি ও অস্থিরতা

যখন হেমোরেজিক ডেঙ্গু সন্দেহ করা হয় তখন জরুরী নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা প্রধান কারীর কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত এবং রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

আরো পড়ুন: তৈলাক্ত ত্বক ও ব্রণ দূর করার উপায় জানতে ক্লিক করুন

প্রতিকার করবেন কিভাবে:

প্রর্যাপ্ত সতর্কতা  থাকা সত্বেও যদি আক্রান্ত হয়ে যান ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা তাহলে কি করবেন?

যদি ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা যায় তাহলে অবশ্যই প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। ডেঙ্গু যেহেতু একটি ভাইরাস জনিত রোগ তাই এর জন্য কোন নির্দিষ্ট ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক নেই। তাই ডেঙ্গুর উপসর্গ গুলোর চিকিৎসা করুন এবং আপনার ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন।

 এছাড়াও

১. পুরোপুরি সেরে না ওটা পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকুন।

২. প্রচুর তরল খাবার গ্রহণ করুন।

৩ . শরীর বার বার ঠান্ডা পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে মুছে নিন।

৪. প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন জ্বর কমানোর জন্য।

৫. আপনার জ্বর নেমে যাওয়ার পর প্রথম ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি আপনি আবারও খারাপ বোধ করতে শুরু করেন। তবে জটিলতার আশঙ্কা রয়েছে এবং পরীক্ষা করার জন্য আপনাকে অবিলম্বে হাসপাতালে যেতে হবে।

কি করবেন না:

১ আপনি যদি ডেঙ্গু জ্বর এবং শরীরের ব্যথা অনুভব করেন তবে নিজে নিজে কোন ওষুধ ব্যবহার করবেন না।

২ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়ন ছাড়া প্যারাসিটামল এবং অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া এড়িয়ে চলুন।

৩ ডেঙ্গু রোগীদের স্টেরয়েড বা অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হতে বিরত থাকুন

৪ প্লাটিলেটের সংখ্যা দশ হাজারের কম না হলে অথবা রক্তপাত অব্যাহত না থাকলে রোগীকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

*ধন্যবাদ*


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url